বিচারপতি সিনহার পদে ফেরা হচ্ছে না, ইঙ্গিত অ্যাটর্নি জেনারেলের

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সহকর্মীরা বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে কাজ করতে না চাওয়ায় তার প্রধান বিচারপতির পদে ফেরার সম্ভাবনা দেখছেন না অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2017, 01:02 PM
Updated : 14 Oct 2017, 02:22 PM

বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তি রয়েছে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

বিচারপতি সিনহা শুক্রবার বিদেশ যাওয়ার সময় যেসব কথা বলেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের বিরল এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বিচারপতির সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, অর্থ পাচার ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সহকর্মীরা এর ব্যাখ্যা চাইলে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।

অ্যাটর্নি জেনারেল শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারপতিরা যদি উনি ফেরার পর না বসতে চান তাহলে উনার পক্ষে একা বসা সম্ভব হবে না।

“বাস্তব অবস্থা হল, পাঁচজন বিচারপতি যদি এক সাথে বসতে না চান তাহলে বিচার বিভাগীয় অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। সুতরাং বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করলে (তার) ফিরে এসে ওই চেয়ারে বসা সুদূরপরাহত।”

আওয়ামী লীগ আমলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি সিনহা অবসর নেওয়ার তিন মাস আগে জটিলতার পড়লেন।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর থেকে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে থাকা প্রধান বিচারপতির ৩৯ দিনের ছুটিতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটি নিয়েছেন বলে আইনমন্ত্রী জানালেও বিচারপতি সিনহা শুক্রবার বিদেশ যাওয়ার আগে বলে গেছেন, তিনি অসুস্থ নন, বরং সরকারের আচরণে বিব্রত হয়ে ছুটি নিয়েছেন।

বিএনপি বলে আসছে, প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটি দিয়ে বিদেশ যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “তাকে সরানোর বা বেঞ্চে না বসার ব্যাপারে সরকারের কোনো ‍ভূমিকাই নেই।

“বরঞ্চ প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে যেসমস্ত অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে শুনেছেন, মাননীয় অন্যান্য বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সাথে বসতে অনীহা প্রকাশ করেছেন, অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়েছে উনি ছুটি নিতে।”

সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না পেয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিচারকাজ পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তার সহকর্মী বিচারকরা।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “যে সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছে, যদি কোনো রকম সত্য না হত, দেশের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এসমস্ত কথা বলা কি সম্ভব হত?”

১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অভিযোগগুলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ আছে। অভিযোগগুলো সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি ভাল জানেন।”

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (ফাইল ছবি)

গত জুলাই মাসে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেওয়ার পর সংসদে তা নিয়ে আলোচনার সময় প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন মন্ত্রীসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিচারপতি সিনহার ভাইয়ের নামে রাজউকের প্লট নেওয়ায় অনিয়মের কথা সংসদে বলেছিলেন। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথাও বলেছিলেন তিনি।

সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মালিকানাধীন ব্যাংকে বেনামে বিচারপতি সিনহার অর্থ জমা রাখার কথা বলেছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করা হবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল মতিন খসরু।

সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “গতকাল প্রধান বিচারপতি বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে যে নাটকীয়তার সৃষ্টি করে গেছেন এবং লিখিত একটি বিবৃতি তিনি সাংবাদিকদের হাতে দিয়ে গেছেন, তার প্রেক্ষিতে দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি।

“প্রধান বিচারপতি যে বিবৃতি দিয়ে গেছেন, এর প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট যদি বসে থাকত, তাহলে দেশবাসী একটি বিভ্রান্তিতে পড়ে যেত। দেশবাসীর কাছে এ সমস্ত ঘটনার স্পষ্ট করার প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি।”

বিচারপতি সিনহা যাওয়ার আগে বক্তব্যে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞার কার্যপরিধি নিয়ে যে কথা বলেছেন, তা নিয়ে ভিন্নমত জানান মাহবুবে আলম।

“প্রধান বিচারপতি যাওয়ার সময় বলে গেছেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শুধু রুটিন মাফিক কাজ করবেন, এটা ঠিক না। যদি কেউ ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি হন, সেটিও সাংবিধানিক পদ। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। বিচারালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত বিচারিক কাজ, বেঞ্চ গঠনসহ যাবতীয় কাজ তিনি করবেন। সব দায়-দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।”

“এটা কোনো যৌক্তিক কথা হল না যে, একজন প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরে থাকবেন তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না, এটা ঠিক না।”

অসুস্থতার কথা অস্বীকারের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আগের চিঠিতে অসুস্থ বলেছিলেন, গতকাল সুস্থ থাকার কথা বলেছেন। এটা তো গতকালের কথা।

“উনি নিজে বলে গেছেন, উনি স্বেচ্ছায় গেছেন। এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক থাকা উচিৎ বলে আমি মনে করি না। ছুটির বিষয়টি নিয়ে যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন তাদের আর কথা বলা উচিৎ না।”