ছুটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফায়দা লোটার চেষ্টা: অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রধান বিচারপতির ছুটি নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে একটি দল ‘ফায়দা লোটার চেষ্টা’ করছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2017, 01:03 PM
Updated : 3 Oct 2017, 01:03 PM

‘চাপ প্রয়োগ করে’ প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার তিনি এ কথা বলেন।

মাহবুবে আলম বলেন, “উনি কী কারণ দেখিয়ে ছুটিতে গেছেন তা মাননীয় আইনমন্ত্রী বলেছেন। আমরা জানি, উনি ক্যান্সারের পেশেন্ট। আগেও উনার ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট হয়েছে। কাজেই এটা সম্পূর্ণ উনার ব্যক্তিগত ব্যপার।”

তারপরও ‘একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল” এ নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে ‘ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এগুলোর কোনো সারবত্তা নেই, কোনো রকম বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এগুলো গোচরে আনারই প্রয়োজন পড়ে না।”

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ  রায় প্রকাশের পর থেকেই ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। এর মধ্যে তিনি মঙ্গলবার থেকে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা অভিযোগ তুলেছে- চাপ দিয়ে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে প্রধান বিচারপতিকে।

আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে মঙ্গলবার আদালত খুললে প্রধান বিচারপতির অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু তার আগেই সোমবার বিচারপতি সিনহার ছুটিতে যাওয়ার খবর আসে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপণে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি অসুস্থতার কথা জানিয়ে ৩ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটি চাওয়ায় রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেছেন। আর এই সময়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে  প্রধান বিচারপতির কার্যভার দেওয়া হয়েছে।

সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। অন্যদিকে বিএনপিপন্থিদের নেতৃত্বে থাকা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ‘জরুরি সভা’ করে সরকারের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ আনে।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আইনজীবী সমিতি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কুক্ষিগত হয়ে পড়ায় এ ধরনের কথা বলে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। একজন বা দুজন বিচারপতির জন্য এদেশের বিচার বিভাগের কাজ কোনোদিনই বন্ধ থাকেনি।”

আইনজীবী সমিতিকে ‘একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কাজে’ ব্যবহার করা হচ্ছে মন্তব্য করে মাহবুবে আলম বলেন, “আগে কাদের মোল্লার পরিবারকে নিয়ে বার অ্যাসোসিয়েশনে মিটিং করেছে। অনেকগুলো যুদ্ধাপরাধের মামলার ব্যপারে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে। এই সমস্ত প্রচেষ্টা হীন প্রচেষ্টা।”

আইনজীবী সমিতির ব্রিফিংয়ে সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, অবকাশ শেষে সুপ্রিম কোর্টের রীতি অনুযায়ী আইনজীবীরা যেন ‘গেট টুগেদারে’ আসেন, সে বিষয়ে আগেই চিঠি দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। কিন্তু তিনি নিজেই ছুটিতে গেছেন বলা হচ্ছে।

“ইতিহাস বলে, কখনও কোনো প্রধান বিচারপতি দাওয়াত করে এভাবে ছুটি নিয়ে চলে যান নাই। আমাদের সেটা জানার দরকার আছে।”

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “উনি থাকবেন কেন? উনিতো গতকালই ছুটিতে চলে গেছেন। ছুটিতে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল রাতে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাকে। এক অনুষ্ঠানে কি দুইজন প্রধান বিচারপতি থাকতে পারেন?”

বিচারপতি সিনহার সঙ্গে গত চার-পাঁচ দিন ধরে ‘কোনো যোগাযোগ নেই’ বলেও এক প্রশ্নের জবাবে বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

তিনি জানান, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের ছুটির পরে আইনজীবীদের সঙ্গে, বিশেষ করে অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার এসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে বিচারপতিদের মিলিত হওয়ার এই রীতি ভারতীয় উপমহাদেশে হাই কোর্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই চলে আসছে।

এই ‘গেট টুগেদারের’ জন্য আগে থেকেই নোটিস দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে বিচারপতিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এই মিলন মেলা চলে।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে সকাল ১০টা পর্যন্ত বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের কর্যক্রম চলে। ওই সময়ে প্রায় ২০টির মত মামলার নিষ্পত্তি করা হয় বলে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান।

তিনি বলেন, দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের বিচারকদের নিয়ে ফুল কোর্ট সভা থাকায় হাই কোর্টে এদিন কোনো মামলার শুনানি হয়নি। আদালতের কার্যক্রম, অদালতের কার্যতালিকা প্রণয়ন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে ওই সভায় আলোচনা হয়। বুধবার থেকে নতুন কার্যতালিকা অনুযায়ী আদালত বসবে।