এজন্য কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে চার সদস্যের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হচ্ছে বলে কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, অটোমেটিক ফিঙ্গার আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেমের (এএফআইএস) মাধ্যমে নাগরিকদের তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের আঙুলের ছাপ ‘ম্যাচিং’ করা গেলে সহজেই জালিয়াতদের ধরা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে আমরা চিঠি দিয়েছি। আশা করি, শিগগির কক্সবাজারে যাবে ইসির বিশেষজ্ঞ দল। সেখানে কী সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে বা আমাদের কোনো সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে কি না সব কিছুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।”
২৭ সেপ্টেম্বর বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় ইসি সচিবালয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক ও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের প্রক্রিয়াটি ইসি সচিবালয়ের এনআইডির কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা অথবা গৃহীত বায়োমেট্রিক ভবিষ্যতে কাজে লাগানোর ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই ও সহযোগিতার জন্যে একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়েছে।
“অনুপ্রবেশকারী কেউ ভোটার হয়ে থাকলে তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে বায়োমেট্রিক যাচাই করা সম্ভব হবে। এতে জালিয়াতি খুব সহজেই ধরা পড়বে।”
জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে নাগরিকদের তথ্যের পাশাপাশি ছবি, দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে হয়। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনে নেওয়া হচ্ছে কয়েকটি তথ্য, ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ।
এএফআইএস (অটোমেটিক ফিঙ্গার আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম) সাপোর্ট সার্ভিসের মাধ্যমে দ্বৈত ভোটার শনাক্ত করা হয়। রোহিঙ্গাদের আঙ্গুলের ছাপ একই পদ্ধতিতে তথ্যভাণ্ডারে ম্যাচিং করে দেখলে জালিয়াতদের ধরা যাবে।
ইসি সচিব বলেন, এজন্য ইসির সফটওয়্যার ও কক্সবাজারে চলমান নিবন্ধন কাজের সফটওয়্যারের মিল থাকতে হবে। কারিগরি টিম তা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করলে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে।
রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া পরিদর্শনে এনআইডি উইংয়ের সিস্টেম এনালিস্ট, একজন সহকারী পরিচালক ও দুজন টেকনিক্যাল এক্সপার্টকে বিশেষজ্ঞ কারিগরি টিমে রাখা হয়েছে বলে কমিশনের এনআইডি উইংয়ের সহকারী পরিচালক রুহুল মল্লিক জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর ২৫ অগাস্ট থেকে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এবং ত্রাণ ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কাজ চলছে; ইতোমধ্যে ৬১ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধনও কার্ড পেয়েছেন।
উখিয়া ও কুতুপালংয়ের দুটি কেন্দ্রে গত ১১ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিবন্ধন শুরু হয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে তাদের নিবন্ধন শেষ হবে বলে আশা করছেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজোয়ান।
মিয়ানমারের সাম্প্রতিক অভিযানের আগেই কক্সবাজারে ৩০ হাজারের মতো নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে। গেল বছর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে একটি অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের শুমারি হয়। তাতে ছবিসহ ৪৬টি তথ্য নিয়ে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত কয়েক লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের ‘ডেটাবেইজ’ করা হয়। তবে তাদের কোনো বায়োমেট্রিক নিবন্ধন হয়নি।
সব মিলিয়ে নতুন ও পুরনো অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি রোধে ইসির নানামুখী পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে।