কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। এ কমিশনের আগে আরও দশজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব পালন করে গেছেন, যাদের নেতৃত্বে স্বাধীনতার পর চার দশকে নির্বাচনী গণতন্ত্রের পথে নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে এসেছে বাংলাদেশ।
নির্বাচন কমিশনের সেবা ও হিসাব শাখার তথ্য অনুযায়ী, বিগত নির্বাচন কমিশনগুলোর অন্তত ১২ জন সদস্য এখনও বেঁচে আছেন, যাদের মধ্যে চারজন ছিলেন সিইসি, বাকিরা কমিশনার ছিলেন।
ঢাকায় ইসি সচিবালয়ে এক নাগাড়ে ৩০ বছরের বেশি সময় কাজ করে অবসরে গেছেন- এমন অন্তত চারজন কর্মকর্তা এখনও জীবিত।
সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের চেষ্টায় বিগত দিনের অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতির সীমাবদ্ধতা এবং পরবর্তী কমিশন গঠন নিয়ে তিন সাবেক সিইসিহ কয়েকজন সাবেক কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তার ভাবনা জানার চেষ্টা করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা বিচারপতি আব্দুর রউফ, সাবেক আমলা মোহাম্মদ আবু হেনা ও এটিএম শামসুল হুদা বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দক্ষ নির্বাচন কমিশন যেমন দরকার, তেমনি রাজনৈতিক দল ও সরকারের সহযোগিতা এবং প্রার্থী ও ভোটারদের সহিষ্ণুতা জরুরি।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন করে প্রশংসিত হলেও দলীয় সরকারের সময়ে বিভিন্ন নির্বাচন করতে চাপে পড়তে হওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
সাবেক এই তিন সিইসির মধ্যে একজন বলেছেন, কারা ইসিতে নিয়োগ পেল, তার চেয়েও বড় বিষয় হল নির্বাচন প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ করা।
নিরপেক্ষতার তত্ত্ব তালাশ
এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনের অবসানের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে পঞ্চম সংসদ নির্বাচন হয়েছিল বিচারপতি আব্দুর রউফের কমিশনের আয়োজনে।
সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার ওই নির্বাচন করে বিচারপতি রউফ প্রশংসা পেয়েছিলেন, কিন্তু বিএনপি সরকারের সময়ে ১৯৯৪ সালে মাগুরা-২ উপ নির্বাচনের কারণে তাকে হতে হয়েছিল সমালোচিত।
সাবেক এই সিইসি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনে কে এল তাতে কিছু আসবে যাবে না যদি ভোটাররা তার অধিকার প্রয়োগ করতে না পারে।”
কেউ যদি ইসিকে হাতের মুঠোয় রাখতে চায় বা ভোটের মালিকানা ভোটারের হাতে রাখতে না চায়, তাহলে কমিশন দিয়ে কিছুই হবে না বলে তার বিশ্বাস।
বিচারপতি রউফ বলেন, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররাও নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন; সে অধিকার তাদের আছে। সুতরাং কেবল নিরপেক্ষ ইসি খোঁজার চেষ্টায় তেমন কোনো লাভ আসবে না।
“নির্বাচন কমিশনে এ বি সি ডি যেই থাকুক, ব্যক্তি হিসেবে তিনি কতটা নিরপেক্ষ তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নির্বাচনী প্রক্রিয়াটা কতটা নিরপেক্ষ করা গেছে। ভোটের প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ হলে ভোটাররা সুফল পাবে।”
বিচারপতি রউফের কমিশন নির্বাচনী বিধি-বিধানের সংস্কারের পাশাপাশি ভোটার হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তির নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর চেষ্টা করেছিলেন। ভোট কক্ষ বাড়িয়ে সময় কমিয়ে আনার পরীক্ষামূলক কাজও সে সময় হয়েছিল।
নিজের সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা কমিশনের দরকার। সেই সঙ্গে সরকারের প্রশাসন যন্ত্রের সহায়তাও থাকতে হবে। তা না হলে ভোট প্রক্রিয়া আরও খারাপ হবে।
মেয়াদ শেষ করার আগেই বিদায় নেওয়ার এই সিইসি বলেন, “আমি তো ইসি থেকে বেতন নিইনি। আমার বিষয়টা অন্য রকম ছিল। পরে আমি আবার আদালতে ফিরে যাই স্বেচ্ছায়।”
বর্তমানে শারীরিকভাবে ভালো আছেন বলেন জানালেন বিচারপতি রউফ। ৮২ বছর বয়সেও নানা ধরনের সামাজিক সংগঠনের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন তিনি।
প্রথম আমলা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের প্রধান হওয়া মোহাম্মদ আবু হেনাও সুস্থ আছেন। বর্তমানে তার বয়স ৮০ বছর। তবে এখন আর নির্বাচন কমিশন নিয়ে খুব বেশি কথা বলার আগ্রহ হয় না বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন।
১৯৯৬ সালে আবু হেনাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেন দেশের প্রথম সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মো. হাবিবুর রহমান।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট আয়োজনের তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি সংবিধানে যুক্ত হওয়ার পর আবু হেনার কমিশন সপ্তম সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে।
সেই নির্বাচনের জন্য প্রশংসিত আবু হেনা সিইসির দায়িত্বে ছিলেন প্রায় চার বছর। তাকেও দলীয় সরকারের সময়ে ১৯৯৯ সালের টাঙ্গাইল উপ নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল।
সাবেক এই সিইসি সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ইসি গঠন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে, যোগ্যদের নিয়ে কমিশন গঠন হলে তারা দায়িত্বটি সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন। যোগ্যদের খুঁজে বের করতে সার্চ কমিটির বিকল্প নেই।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইসির দক্ষতার পাশাপাশি প্রার্থী, ভোটার, সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
বিচারপতি রউফ ও আবু হেনা দুজনেই বলেছেন, ভালো নির্বাচন হলেও পরাজিত পক্ষ কারচুপিসহ নানা অভিযোগ করে- এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতিরই অংশ হয়ে উঠেছে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে শেষ বিচারে তা আর বিতর্কিত করা যায় না।
সর্বশেষ ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের জায়গায় দায়িত্বে ছিল দুই বছর। সেনা শাসনে না হলেও দেশ তখন চলেছে কার্যত সেনা নিয়ন্ত্রণে। ওই সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পান সাবেক আমলা এটিএম শামসুল হুদা। তার কমিশনই নবম সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে।
সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ইসি গঠনে আইন করার যে দাবি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে থেকে এসেছে, তাকে ‘একধাপ অগ্রগতি’ বলে মনে করেন সাবেক এ সিইসি। তার সময়ে ওই আইনের একটি খসড়া সরকারের কাছে পাঠানো হলেও পরে আর তা সাড়া পায়নি।
শামসুল হুদা বলেন, “ইসি পুনর্গঠনে রাজনৈতিক মতৈক্য জরুরি। নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশনের একার বিষয় নয়। যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগের জন্য সবার মতামত নেওয়ার প্রক্রিয়া যত বেশি স্পষ্ট হবে ততই ভালো। এখন অনেকে আইন প্রণয়নের কথা বলছে, এটা একধাপ অগ্রগতি। তা হওয়ার পর এ নিয়ে কথা বলা যাবে।”
সাবেক এ আমলার মতে, ইসির হাতে এখন যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। যোগ্য ও নিরপেক্ষ লোক নিয়োগ পেলে এই ক্ষমতা কাঠামোতেই নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।
বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কারণেই অকার্যকর হয়েছে মন্তব্য করে ৭৪ বছর বয়সী শামসুল হুদা সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, “যে পার্টি ক্ষমতায় এসেছে, সেটা সামরিক সরকারই হোক, আর গণতান্ত্রিক সরকার হোক, বিজয়ীরা সব নিয়ে যায়।”
জীবিত সাবেক সিইসিদের মধ্যে বিচারপতি এম এ আজিজের বয়স এখন ৭৮ বছর। ২০০৭ সালে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের পর থেকে গণমাধ্যমের সামনে আসেননি। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সময়ে সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আজিজ তার ২০ মাসের মেয়াদে কোনো জাতীয় নির্বাচন করে যেতে পারেননি।
‘দুঃখজনক সংস্কৃতি’
শামসুল হুদার কমিশনের সদস্য এম সাখাওয়াত হোসেন তার ‘নির্বাচন কমিশনে পাঁচ বছর’ বইয়ে নিজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আগের কমিশনগুলোর কাজ নিয়েও মতামত তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন,
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত সিইসির মধ্যে দুজনের বিষয় না উল্লেখ করলেই নয়। বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ আপিল বিভাগের বিচারপতি থাকা অবস্থাতেই ১৯৯০ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন সাহেবের তত্ত্বাধায়ক সরকারের সময়কালে সিইসি নিয়োজিত হন।
চার বছর পার করে ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ মাগুরা-২ মহাবিতর্কিত নির্বাচনের পর বিতর্কিত হতে থাকলে ১৯৯৫ সালের মার্চে সিইসি পদ ছেড়ে আপিল বিভাগে ফিরে যান।
তার পদায়ন নিয়েও মামলা হয়েছিল। কারণ বিচারপতি থাকা অবস্থায় তিনি আরেকটি সাংবিধানিক পদে পদায়িত হয়েছিলেন। তার পদাঙ্কে বিচারপতি এমএ আজিজও সিইসি হয়েছিলেন। দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।
বিচারপতি আজিজের নিয়োগ উচ্চ আদালত আইন বহির্ভূত বলে রায় দিলেও রউফ সাহেবের বিরুদ্ধে মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই স্বপদে ফিরে গিয়েছিলেন।
বিচারপতি রউফের পরে বিচারপতি একেএম সাদেক ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের বিএনপির একতরফা নির্বাচন করে টিকতেই পারলেন না। তার কর্মকান্ডও ইসিকে বিতর্কিত করেছিল।
ইসির ইতিহাসে প্রথম সাবেক আমলা হিসাবে প্রথম সিইসি হলেন আবু হেনা। চার বছরের মাথায় স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও পদত্যাগের পেছনে ক্ষোভ ছিল তা খতিয়ে দেখলেই প্রতীয়মান হয়।
আরেক প্রাক্তন আমলা এমএ সাঈদ পূর্ণ মেয়াদ পার করলেও সরকারের সঙ্গে তেমন সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন না। ইউপি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে চেয়ে সরকারের সম্মতি পাননি তিনি। বিএনপি সরকার সেনা মোতায়েন করতে দেয়নি।
সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইসি নিয়োগ দেন। তবে সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া আর কোনো নিয়োগ দিতে পারে না। এ কারণে ইসি যত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেগুলো প্রধানমন্ত্রী অথবা ক্ষেত্রমতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পরামর্শেই রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন।
সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধি না থাকায় ইসি নিয়োগে সব সময়ই, বিশেষ করে ২০০১ এর পরে বিতর্ক ও রাজনৈতিক মতবিরোধের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত।
তার ভাষায়, বর্তমান ইসি ‘দায়সারা গোছের’ একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে এসেছে। কিন্তু বিএনপি এই ইসিকে ‘মানতে না চাওয়ার’ যে অবস্থান বজায় রেখে এসেছে, তা ‘বড় দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য তার।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা নিজের বইয়ে তিনি লিখেছেন-
আমরা প্রায়শই ভারতীয় ইসির শক্ত অবস্থানের উদাহরণ দিই। যা হৃদয়ঙ্গম করি না তা হল ভারতের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ওই সংস্কৃতিতে অবিশ্বাসের মনোবৃত্তি নেই বললেই চলে…
ভারতে ইসি নিয়োগ পদ্ধতি বাংলাদেশের বর্তমান ধারাতেই হয়ে থাকে; সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশেই রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন...
১৯৫০ সালে একজন কমিশনার নিয়ে গঠিত ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের গঠন ও নিয়োগ নিয়ে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা বা দলগুলো কখনই বিরোধিতা করেনি।… সর্বশেষ ২০০৯ সালে ভরাডুবির পরেও বিজেপি তাদের পরাজয়ের জন্য কমিশনকে দায়ী করেনি। এখানেই বিস্তর তফাৎ বাংলাদেশ ও ভারতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির।
যেমন দেখেছেন সেই কর্মকর্তারা
স ম জাকারিয়া চাকরি শুরু করেছিলেন পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে যোগ দিয়ে ২০০২ সালের এপ্রিলে তিনি ইসি সচিব পর্যন্ত হয়েছিলেন।
বিচারপতি এমএ আজিজের কমিশনের সময়ে ২০০৬ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সচিবের দায়িত্ব পালন শেষে ১৬ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনারও হয়েছিলেন তিনি। ওই কমিশনের সবার মতো ৩১ জানুয়ারি ২০০৭ সালে তাকেও পদত্যাগ করতে হয়।
৩৭ বছরের বেশি সময় নির্বাচন কমিশনে থেকে নয়জন সিইসির সঙ্গে কাজ করে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে ‘অভিজ্ঞ’ হিসেবে পরিচিতি পেলেও ‘বিতর্কিত’ হয়ে বিদায়ের পর মুখ খুলছেন না স ম জাকারিয়া।
যোগাযোগ করলে কুশল বিনিময় করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি মোটামুটি ভালো আছি। কিন্তু ইসি নিয়ে আমি কোনো কথা বলব না।”
প্রায় ৩২ বছর কাটিয়ে সম্প্রতি ইসি সচিবালয় থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে গেছেন অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া।
এর মধ্যে জকরিয়া আলোচিত এমএ আজিজ কমিশনের সময় ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরে প্রায় ১০ বছর ওএসডি থাকতে হয় তাকে।
আর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সিইসি বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলামের সময়ে ১৯৮৪-৮৫ সালে নিয়োগ পাওয়া জেসমিন টুলীর একাদশ সিইসির সঙ্গেও কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে টুলী বলেন, “সবগুলো কমিশনই নানাভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এর বেশি কিছু বলা সমীচীন হবে না।”
এটিএম শামসুল হুদার কমিশনে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে প্রশংসিত হয়েছিলেন জেসমিন টুলী।
তার সমসাময়িক মো. জকরিয়া বিচারপতি নুরুল ইসলামের কমিশন থেকে নবম সিইসি বিচারপতি এমএ আজিজের কমিশন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বলেন, “প্রায় প্রতিটি কমিশনকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে, পাশাপাশি অনেকেই ইসিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এনেছেন। কমিশনের উদ্যোগের পাশাপাশি সব মিলিয়ে সবার আস্থা অর্জন, রাজনৈতিক দল ও সরকারের সহায়তা থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।”
এ কর্মকর্তা বলেন, দ্বিতীয় সংসদ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত নানা রাজনৈতিক উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে গেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী আইনের সংস্কার ও নানা ধরনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের শুরু হয় মূলত পঞ্চম সংসদ নির্বাচন থেকে।
“তখন কোনো দল ক্ষমতায় নেই, প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ভাবছে ভোটে তারাই জিতবে। ওই সময় একটা ভালো নির্বাচন হয়েছে সবার সহযোগিতায়,” স্মরণ করেন সাবেক এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ভোটার তালিকা প্রণয়নে গুণগত মান বজায়ের কাজটি শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। সপ্তম ও অষ্টম সিইসির সময়ে তা আরও বিস্তৃতি পায়।
তবে নবম সিইসি এমএ আজিজের কমিশনকে ‘কোনোভাবে’ মূল্যায়ন করতে চান না জকরিয়া।
২৯ বছর কমিশনে দায়িত্ব পালন করে উপ সচিব পদ থেকে অবসরে যাওয়া মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, “প্রত্যেক কমিশনের অবদানের কারণেই আজ বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছে ইসি। দক্ষ কমিশনের পাশাপাশি নেতৃত্ব হতে হবে দৃঢ়। যাতে কোনো ধরনের পিছুটান না থাকে।”
নির্বাচন পরিচালনা ও সবার সহযোগিতা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাজের তদারকি পদ্ধতি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।
১৯৮৭ সালে নিয়োগ পাওয়া মিহির সারওয়ার মোর্শেদ পুরনো কমিশনগুলোর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, “অনেক কমিশন পেয়েছি, যারা নির্বাচনী বিষয়ে শুনানি করে অন দ্য স্পট রায় দিতেন। স্বল্প সময় থাকা একটি ইসি ঋণ খেলাপিদের অযোগ্য করার বিধান ও আচরণবিধি প্রণয়ন করে যায়।
“পরিবারভিত্তিক ভোটার করা বাদ দিয়ে ব্যক্তি হিসেবে ভোটার করার উদ্যোগ নিয়েছিল একটি কমিশন। পরের কমিশনগুলো কারচুপি ঠেকাতে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম নেয়, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের চেষ্টা করে। তবে ফল আসতে শুরু করে আরও পরে।”
আবার দুয়েকজন সিইসি ব্যক্তিগতভাবে ‘ভালো’ হলেও সময় তাদের পক্ষে ছিল না বলে মনে করেন সাবেক এই উপ সচিব।
ভারতের মতো বাংলাদেশেও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ‘ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা’ দেওয়ার একটা পথ খোঁজার পরামর্শ দেন মিহির। তিনি মনে করেন, ইসির নানা সংস্কারের ফলে একীভূত সফলতা নবম সংসদ নির্বাচনে দৃশ্যমান হলেও দশম সংসদ নির্বাচনে তা ‘ম্রিয়মাণ’ হয়েছে।