সঠিক শিক্ষা কি হচ্ছে- প্রশ্ন অধ্যক্ষদেরই

শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব যাদের, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় তরুণ-যুবকদের জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নিজেরা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারছেন কি না, সেই প্রশ্ন ঘুরছে বাংলাদেশের কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের মনে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2016, 02:33 PM
Updated : 21 July 2016, 03:29 PM

জঙ্গি কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে পড়ার নতুন নতুন তথ্য আসার মধ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকায় ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তির’ সমাবেশে কয়েকজন অধ্যক্ষ এই প্রশ্ন তোলেন।

খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অধিভুক্ত সরকারি-বেসরকারি কলেজের ১ হাজার ২০০ অধ্যক্ষদের নিয়ে এই সমাবেশ করে।

সভার শুরুতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদভাবে পাঠাদান করতে চাই।

“বিদেশিদের কী অপরাধ? এরা তো বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছিলেন,” গুলশান হামলায় নিহতদের বিষয়ে বলেন তিনি। 

যারা বিপথগামী হয়েছে তাদের শান্তি ও মানবতার পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে অধ্যক্ষদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, “প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব নিয়ে ভিজিলেন্স টিম গঠন করবেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সবাইকে এর দায়িত্ব নিতে হবে।

“শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও হোস্টেলে নিয়মিত হাজিরা নিতে হবে, অনুপস্থিত থাকলে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারও সন্তান নিখোঁজ হওয়ার পরেও ওই পরিবারের সদস্যরা যদি সে বিষয়ে কাউকে কিছু না জানান তার দায় তাদেরকেও নিতে হবে।”

গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েক তরুণের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পেলে উদ্বেগ থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করে স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারপরই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই উদ্যোগ নিল। 

সরকারি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের পক্ষে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তির’ সমাবেশে বক্তব্য দেন ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক গায়েত্রী চ্যাটার্জী ।

তিনি বলেন, “আমরা ব্যথিত। তরুণ সমাজকে আমরা সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারছি কি না- সেই প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিপথগামী হচ্ছে, শিক্ষক হিসেবে আমরা চিন্তিত।

“মনে হচ্ছে, সঠিক শিক্ষায় শিক্ষা দিতে পারছি না। নৈতিক ও মানবিক শিক্ষায় যদি শিক্ষা দিতে না পারি, তারা যে পথে যাচ্ছে তা আরও বিস্তৃত হবে।”

বেসরকারি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের পক্ষে ঢাকা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু সাঈদ বলেন, “পরিবারের পরেই শিশুরা শিক্ষকদের কথা মানে। তাই যার যার জায়গা থেকে তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।”

‘আমরা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি’ মন্তব্য করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর হারিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে তাদের পরিবার থেকেও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না- সেই খোঁজ রাখতে শিক্ষকদের পরামর্শ দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা।

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে কী করছে তা লক্ষ্য করুন, তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাব।”

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, “রাজনীতবিদদের ঐক্যের জন্য আমরা অপেক্ষা করব না। মানুষে-মানুষে ঐক্য তৈরি করে এটা মোকাবেলা করব। ঐক্যটা যতটা রাজনৈতিক তার থেকে বেশি সাংস্কৃতিক।”

মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়া পাচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি স্কুল-কলেজে সাংস্কৃতিক সপ্তাহ আয়োজনের পরামর্শ দেন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, জঙ্গি হামলার সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই। মানুষ হত্যা মহাপাপ, এর কোনো ক্ষমা নেই।

গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া শিক্ষা পরিবারের সদস্যদের জন্য উদ্বেগের কারণ উল্লেখ করে এসব কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সবাইকে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের স্বাগত বক্তব্যের পর মঞ্চেবসা ১৩ জন আমন্ত্রিত অতিথির মধ্য থেকে পাঁচ জনকে চার মিনিট করে বক্তব্য দেওয়া সুযোগ দেন আয়োজকরা। সভায় অংশ নেওয়া অন্য অধ্যক্ষরা কথা বলার সুযোগ পাননি।

সোয়া এক ঘণ্টার বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বর্তমান সরকারের সময় শিক্ষার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনামল, রাজকারদের মন্ত্রী বানানো,  খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মো. আলাউদ্দিন এই সমাবেশ বক্তব্য দেন।

এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আসলাম ভূইয়া ও অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নোমান উর রশীদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবার রহমান, নায়েমের মহাপরিচালক অধ্যাপক হামিদুল হক প্রমুখ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।