গুলশানে ৬ বন্দুকধারী নিহত, ধরা পড়েছে একজন: প্রধানমন্ত্রী

গুলশানের ক্যাফেতে কমান্ডো অভিযানে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছয় হামলাকারী মারা পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2016, 05:54 AM
Updated : 2 July 2016, 12:19 PM

এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছেন বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি।

রাজধানীর কূটনীতিকপাড়ায় সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে আসেন সরকার প্রধান।

ঘটনাটিকে জঙ্গি হামলা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা সন্ত্রাসী তাদের ছয়জনই অন দি স্পট মৃত্যুবরণ করে। তাদের হত্যা করা হয়। ওখানেই মারা যায়। একজন ধরা পড়েছে।”

শুক্রবার রাতে হলি আর্টিজেন বেকারিতে একদল যুবক অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে একদল যুবক ঢুকে বিদেশিসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে। সকালে কমান্ডো অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী।   

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা জিম্মি ছিল, আমরা ১৩ জনকে বাঁচাতে পেরেছি। বাকি কয়েকজনকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। কয়েকজন আহত অবস্থায় সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন আছে।”

এই ‘সফল’ অভিযানের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের এবং যারা সাহায্য করেছে, তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। 

শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বিদেশিদের কাছে জনপ্রিয় ওই ক্যাফেতে হামলার পরপরই পুলিশ সেখানে যায়। তখন বন্দুকধারীদের গুলি ও বোমায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন।

এরপর রাতে র‌্যাব অভিযানে যায়। সকালে সামরিক বাহিনীর কমান্ডো দল অভিযানে যোগ দেয়। 

বাংলাদেশের প্রথম প্যারা কমান্ড ব্যাটেলিয়নকে অভিনন্দন জানিয়ে সরকার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা বলেন, “একটা সফল অভিযান করার জন্য আমি আমাদের প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়নকে অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে অভিনন্দন জানাই আমাদের সেনাবাহিনী, নেভি, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আমাদের বিমান বাহিনী ..সকলকেই।

“সারা রাত কাজ করে এই অল্প সময়ের মধ্যে অপারেশন চালানোর ফলেই আমরা সন্ত্রাসীদের খতম করতে সক্ষম হয়েছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “এই অপারেশনের মাধ্যমে .. এটাই সুখের কথা আমাদের ১০ ঘণ্টাও লাগে নাই। তার আগেই আমরা এই জঙ্গিদের উপর, সন্ত্রাসীদের উপর আক্রমণ চালাতে সক্ষম হই।

“কাজেই সন্ত্রাসী যারা ছিল, তার সবগুলোই ওখানে মারা যায়।”

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার পর গুলশানে বিদেশিদের লক্ষ্য করে এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থানের কথা ফের তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

“বাংলাদেশের সব সময় একটা সিদ্ধান্ত রয়েছে, আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস চাই না। এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম। এরআগে, তারা টুকটাক একটা/দুটো মানুষ হত্যা করে যাচ্ছিল।”

‘ঘৃন্য’ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা এভাবে জঙ্গি হয়ে ঢুকল, সন্ত্রাসী হয়ে ঢুকল, মানুষকে হত্যা করল; তারা নিজেরাও বাঁচতে পারলো না।”

জঙ্গিদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে সংশয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি জানি না, রমজান মাসে একজন মুসলমান যখন নামাজ পড়বে, এশার আজান দিচ্ছে। সে যাবে নামাজ পড়তে। আজান উপেক্ষা করে এরা গেল মানুষ খুন করতে। তাহলে, কেমন মুসলমান তারা?

“কেমন মুসলমান তারা? কেমন ধর্ম তারা রক্ষা করলে? তারা নামাজ না পড়ে মানুষ খুন করতে চলে গেল! আর, সেখানে তারা নিজেরাও বাঁচতে পারল না।তাদেরকে মরতে হল। তাদের পরিবার, তারাই বা কি করল?”

সন্ত্রাসীদের কোনো ‘ধর্ম নেই’ মন্তব্য করে তাদের প্রতিরোধে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সরকার প্রধান।  

“এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যারাই জড়িত থাকবে, এখানে জনগণকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুললেই কিন্তু এটা থামবে।”

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতেই এই ধরনের হামলা হচ্ছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।  

“আমরা উন্নয়নের দিকে যখন এগিয়ে যাচ্ছি, উন্নয়ন করে যাচ্ছি, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের একটা সুনাম, মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে, ঠিক সেইসময় এসমস্ত ঘটনা প্রত্যেকটা কাজে তো একটা হোঁচট খেয়ে যায়।”