আকাশ ছেয়ে এল বর্ষা

এল পহেলা আষাঢ়; বর্ষা ঋতুর প্রথম দিন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2016, 11:46 AM
Updated : 15 June 2016, 12:22 PM

যদিও সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টির ‘মধুর বিড়ম্বনার’ মাঝে আগেই উপকূলে হাজির হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা)।

বুধবার দেশের পূর্বাঞ্চলেও সক্রিয় এই মৌসুমি বায়ু, যা শনিবারের মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

কৃষিনির্ভর বাংলায় ছয় ঋতুর মধ্যে বর্ষা সবসময়ই ছিল সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। এসময় গাছে গাছে ফোটে কদম, বকুল, হাসনা হেনাসহ হরেক ফুল। টলমল জলের বুকে নক্ষত্রের মতো ফোটে শাপলা, শালুক আর পদ্ম।

বর্ষার দুই মাস-আষাঢ়-শ্রাবণের বন্দনা বারবারই ঘুরে ফিরে এসেছে বাঙালি সাহিত্যিকদের লেখায়।

এবার বর্ষাকে স্বাগত জানিয়ে সকালে বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠান করেছে উদীচী।

বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা সহকারী আবহাওয়াবিদ নিঝুম রোকেয়া রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রকৃতিতে এখন যেন একটানা রিমঝিম বৃষ্টি দিনের প্রস্তুতি। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলেও বর্ষা মোটামুটি সক্রিয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে।

তিনি বলেন, “বর্ষার স্বাভাবিক আগমনে দেশের অনেক এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। ভ্যাপসা গরমও রয়েছে কোথাও কোথাও। দেশজুড়ে মৌসুমি বায়ুর বিস্তার ঘটবে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। এসময় কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি বর্ষণ হতে পারে।”

এ পূর্বাভাস কর্মকর্তা জানান, সমুদ্রবন্দরে এখন কোনো সতর্কতা সংকেত নেই। তবে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমি ধসের শঙ্কায় আছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার আষাঢ়ের শুরু থেকেই বেশ আটঘাট বেঁধে আকাশে ভাসবে ঘন কালো মেঘ। সূর্যকে ‘হটিয়ে’ যখন-তখন বারিরাজ অঝর ধারায় শুষে নিতে পারে প্রকৃতির উত্তাপ। তবে ভ্যাপসা গরমের ছাঁট আরও বেশ কিছুদিন ক্লান্ত করতে পারে জনজীবন। এ দুর্ভোগ কাটবে আরও কিছুদিন পর ঝমঝম বৃষ্টির স্পর্শে।

বর্ষায় আনন্দের উল্টোপিঠে কিছু ‘প্রাণহানির বেদনাও’ হয় সঙ্গী। বর্ষার নিজেরও রয়েছে রুদ্র রূপ।

গত বছরের ২৬-২৭ জুন কক্সবাজারে টানা ভারি বর্ষণ, ধস আর পাহাড়ি ঢলে ১৯ জনের প্রাণহানি হয়। এসময় জেলার টেকনাফ, রামু, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় সাতজন মারা যান।

২০১২ সালে ২৬-২৭ জুনে  টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল, ধস ও বজ্রপাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেটে ৯৪ জনের প্রাণহানি হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ২২ জন, কক্সবাজারে ৩৭ জন, বান্দরবানে ৩৩ জন এবং সিলেটে দুজনের মৃত্যু হয়।

২০০৭ সালের ১১ জুন বর্ষণ আর পাহাড় ধসে বিপর্যয়ের নগরীতে পরিণত হয় চট্টগ্রাম। পাহাড়ি ধস আর কাদা মাটির নিচে পড়ে নগরীর কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, সেনানিবাসের লেডিস ক্লাব সংলগ্ন লেবুবাগান, বায়েজিদ বোস্তামী, মতিঝর্ণা পাড়সহ সাতটি স্থানে প্রাণ যায় ১২৭ জনের।

জুন মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এবার বর্ষার শুরুতে সারা দেশে স্বভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি উত্তর, মধ্য এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে।

অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, জুনের দ্বিতীয়ার্ধে সারা দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) বিস্তার লাভ করতে পারে। এ সময় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতই হতে পারে।