বাড়ছে বৃষ্টিহীন বৈশাখী দিন

বৈশাখের বৃষ্টিহীন আবহাওয়া প্রলম্বিত হলেও তাকে স্বাভাবিকই বলছেন আবহাওয়াবিদরা, তবে খরার শঙ্কা করছেন না তারা।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2016, 06:42 PM
Updated : 20 April 2016, 07:21 PM

পুবালি ও পশ্চিমা লঘুচাপের সংমিশ্রণের বিলম্বের কারণে এবার দেরিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে; যদিও এর মধ্যে সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হয়েছে।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ (৩৬-৪০ ডিগ্রি সিলসিয়াস তাপমাত্রা) বয়ে যাচ্ছে।

এর মধ্যে ১০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

বুধবার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় ঢাকায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

এ বছর ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৬০ সালের পর যা ছিল রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

টানা গরমের দুর্ভোগ আরও কয়েকদিন থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৪ সালেও মার্চ-এপ্রিলের এমন সময়ে ১৫-২০ দিন বৃষ্টি না হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। বৃষ্টিহীন থাকলে তাপমাত্রা বাড়ায় আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত গরম থাকে।

তীব্র গরমের মধ্যে পানিতে নেমে স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা ঢাকা চিড়িয়াখানার এই বাঘের

“গত বছরের চেয়ে গরম একটু বেশি। আগামী দু’তিন দিনও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না আমরা। পুবালি ও পশ্চিমা লঘুচাপের সংমিশ্রণ না থাকায় বৃষ্টি নেই সবখানে। তবে সিলেটের দিকে বৃষ্টি হয়েছে কয়েকদিন।”

বিলুপ্ত সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের (এসএমআরসি) সাবেক পরিচালক সুজিত কুমার দেবশর্মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুবালি লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পূর্ব উপকূল হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত থাকতে হয়; পশ্চিমা লঘুচাপ পাকিস্তান-উত্তর ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসবে-তবেই বৃষ্টি হবে।এবার তার অনুপস্থিতি রয়েছে।

শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা দেখা দিয়েছে। ৩৩ কোটি মানুষ পানির সঙ্কটে রয়েছে বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে।

 মার্চ-এপ্রিলের এমন গরম আবহাওয়া অস্বাভাবিক নয় উল্লেখ করে সুজিত দেবশর্মা বলেন, “খরা হওয়ার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে নেই। বঙ্গোপসাগর ও এরাবিয়ান সাগরে একটা অবস্ট্রাকশন থাকার কারণে বৃষ্টিহীন রয়েছে বাংলাদেশ দীর্ঘসময়। চার-পাঁচ সপ্তাহও বৃষ্টিহীন থাকার নজির রয়েছে।”

গত শতকের ৬০ এর দশকে, ১৯৮৫-৮৬ সালেও এই ধরনের আবহাওয়া দেখা গিয়েছিল বলে জানান তিনি।

এল নিনোর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না বলেই মনে করেন আবহাওয়াবিদ সুজিত দেবশর্মা।

“বৈশ্বিক উষ্ণতায় এখানে খরা হবে না। কয়েক বছর পরপর এমন গরম আবহাওয়া হয়। এটাও দীর্ঘ হবে না। মে-জুন মাসের পরিস্থিতি এমন হবে না আশা করি।”

খরায় পানি সঙ্কটে ভারতের ৩৩ কোটি মানুষ

আবহাওয়া বিজ্ঞানে ‘এল নিনো’ এমন একটি অবস্থা নির্দেশ করে, যখন প্রাকৃতিকভাবে আবহাওয়া অস্বাভাবিক উষ্ণতার দিকে যায় এবং বিশ্ব দুর্যোগপূর্ণ হয়ে উঠে।

বছরের শুরুতে শক্তিশালী এল নিনোর কারণে ২০১৬ সালটিতে ক্ষুধা ও রোগবালাইতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়বে বলে জানিয়েছে ত্রাণ সংস্থাগুলো। এর কারণে বিশ্বের কোনো এলাকায় প্রচণ্ড খরার সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে অন্যান্য এলাকা প্রবল বন্যার কবলে পড়তে পারে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০৪ ও ২০১০ সালে এমন গরম আবহাওয়া পেয়েছি আমরা। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়ছে কি না, তা বলার সময় এখনও আসেনি।”

এজন্য অনেক বছরের আবহাওয়ার পরিবর্তনগুলো পর্যালোচনা করতে হবে, বলেন তিনি।

তবে সাম্প্রতিক শিলাবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, বৃষ্টিহীন সময় দীর্ঘায়িত হওয়া, খরার প্রবণতা, লবণাক্ততার প্রবণতাকে বিবেচনায় নিয়ে এ সংক্রান্ত প্রাক প্রস্তুতি-কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উপর জোর দেন তিনি।

চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, এপ্রিল মাসে সিলেটে ১৩-১৬ দিন এবং বাকি ছয় বিভাগে ৫-১০ দিন বৃষ্টি হতে পারে।

২০ এপ্রিল পার হলেও সিলেট ছাড়া কোথাও বৃষ্টি নেই বললে চলে। টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছিল একদিন।

অধ্যাপক সাইফুল বলেন, “এখনও ১০ দিন বাকি রয়েছে। বৃষ্টি এপ্রিলের শেষ দিকে হতে পারে অন্যান্য এলাকায়।”