যুদ্ধাপরাধ: হোসাইন ও মোসলেমের বিচার শুরু

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জের দুইজনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2016, 07:29 AM
Updated : 9 May 2016, 02:33 PM

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দ মো. হোসাইন (৫৪) ও কিশোরগঞ্জের মো. মোসলেম প্রধানের (৬৮) বিরুদ্ধে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সোমবার দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য শুরুর নির্দেশ দেন।

প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য শোনার জন্য ট্রাইব্যুনাল ৫ জুন দিন রেখেছে বলে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

দুই আসামির মধ্যে কারাবন্দি মোসলেমকে এদিন অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আদালতে হাজির করা হয়। অন্য আসামি সৈয়দ হোসাইন পলাতক। তিনি যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হাসান আলীর ছোট ভাই।

অভিযোগ গঠনের শুনানিতে অভিযোগ পড়ে শুনিয়ে বিচারক মোসলেমের কাছে জানতে চান তিনি দোষী না নির্দোষ। এ সময় মোসলেম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সুবিচার চান।

শুনানি শেষে আদালত দুই আসামিকে অভিযুক্ত করে বিচার শুরুর সিদ্ধান্ত দেন। মোসলেম ও হোসাইনের (রাষ্ট্রনিযুক্ত) পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান।

২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ দুই আসামির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত করেন প্রসিকিউশনের তদন্ত কর্মকর্তা হরি দেবনাথ।

পরে তিনি ট্রাইব্যুনালে যে অভিযোগপত্র দেন, তাতে দুই আসামির বিরুদ্ধে ছয় ঘটনায় ৬২ জনকে হত্যা, ১১ জনকে অপহরণ ও আটকে রাখা, ২৫০টি বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে মোট ৪৭ জনকে। 

ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে গতবছর ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার কামারহাটি গ্রাম থেকে মোসলেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ছয় অভিযোগ

প্রথম. নিকলীর দামপাড়া গ্রাম ও নিকলী থানা ভবন, সদরের মহাশশ্মান এলাকায় একাত্তর সালের অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হোসাইনের বিরুদ্ধে ছয় নারীকে ধর্ষণ, সুধীর সুত্রধরসহ ৩৫ জনকে হত্যা ও বাদল বর্মনসহ চারজনকে নির্যাতন।

দ্বিতীয়. নিকলী বাজার ও থানা কম্পাউন্ড এলকায় হোসাইন ও মোসলেমের নেতৃত্বে একাত্তরের ২ সেপ্টম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত কাশেম আলীসহ চারজনকে আটক ও নির্যাতন।

তৃতীয়. নিকলীর গুরুই গ্রামের পূর্বপাড়ায় ১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফুল মিয়াসহ ২৬ জনকে হত্যা এবং ২৫০টি বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ।

চতুর্থ. নিকলীর নানশ্রী গ্রামে একাত্তর সালের ২১ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তোফাজ্জল খান জিতুসহ সাতজনকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ হোসাইনের বিরুদ্ধে।

পঞ্চম. একাত্তর সালের ১০ অক্টোবর নিকলী সদরের পূর্বগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল মালেককে তার নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগ হোসাইন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে।

ষষ্ঠ. ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান ও মো. সেলিমকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ রাজাকার হোসাইন কিশোরগঞ্জ পৌরসদর, প্যারাভাঙা ও শোলাকিয়ায় রিকশা দিয়ে ঘুরিয়েছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহানের মাকে তার ছেলের রক্ত দেখিয়ে বিভৎসতা প্রর্দশন করেছিলেন।