ছাত্রীকে যৌন হয়রানির মামলায় গ্রেপ্তার ঢাকার আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহফুজুর রশিদ ফেরদৌসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
Published : 04 May 2016, 03:58 PM
কলাবাগান থানার এসআই শামীম আহাম্মেদ বুধবার এই শিক্ষককে মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
অন্যদিকে ফেরদৌসের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী মোহাম্মদ সেলিম।
শুনানি শেষে মহানগর হাকিম দেলওয়ার হোসাইন জামিন নাকচ করে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে আদালত পুলিশের প্রসিকিউশন কর্মকর্তা পার্থ চট্টপাধ্যায় জানান।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সহায়তায় মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে ছিলেন আইনজীবী ফাহামিদা আকতার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন ছাত্রীর প্রতিনিধিত্ব করেন।
তড়িৎ কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রশিদ ফেরদৌস আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা একটি মামলায় বুধবার ভোরে রমনা এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত শনিবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এসআই শামীম জানান, আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুল্লাহ আল সায়েম মঙ্গলবার রাতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন। ফেরদৌসকে রমনা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও কলাবাগান থানাধীন পান্থপথ এলাকায় তার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
ফেরদৌসের শাস্তির দাবিতে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তেজগাঁও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে তড়িৎ কৌশল বিভাগের ছাত্র মোহাইমিনুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “উনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ডিপার্টমেন্টের ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও কয়েকবার তিনি একই কাজ করেছেন।
“সর্বশেষ এ সংক্রান্ত একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করেছিলাম। এরপর তিনি ওই ছাত্রীকে চাপ দিয়ে মিথ্যা বিবৃতি লিখিয়ে নেন। আমাদের দাবি, অবিলম্বে এই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করতে হবে এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”
পরে বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করে উপাচার্য অধ্যাপক এ এম এম শফিক উল্লাহ শিক্ষক ফেরদৌসকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্তের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা শান্ত হন।
উপাচার্য সেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির দুটি ‘বেনামী অভিযোগ’ পাওয়া গেছে। তাছাড়া একজন ছাত্রীর কাছ থেকে নির্দোষিতার পক্ষে জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টার একটি ভিডিও কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে।
“তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার পেছনে আর কেউ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিক্ষক ফেরদৌসকে চাকরিচ্যুত করার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
শুক্রবার মানববন্ধনের কর্মসূচি রয়েছে জানিয়ে তড়িৎ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ আমীর বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
এই দাবির বিষয়ে উপাচার্য শফিক উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে। তাকে (ফেরদৌস) আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও হাতে পেতে হবে।
“আইনের মধ্যে থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”