কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভেতর ‘ধর্ষণ’ ও হত্যা করা হলেও এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
Published : 25 Mar 2016, 08:14 PM
শুক্রবার বিকালে রাজধানীতে এক গণসমাবেশে সেনাবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “সারা বিশ্বে আমাদের সেনাবাহিনী একটা পেশাদার বাহিনী হিসেবে গৌরব অর্জন করেছে, সারা বিশ্বে আপনারা সুনাম অর্জন করছেন।
“সেখানে সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে ধর্ষণের মতো ঘটনায় প্রশ্ন উঠে থাকে। যদি আপনাদের (সেনাসদস্যদের) কেউ জড়িত না থাকে তাহলে আপনারা কেন এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলেছেন না- এটি আমার প্রশ্ন।”
ইমরান বলেন, “সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টিত ক্যান্টনমেন্টে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছে; বীভৎস ও নিমর্মভাবে সেটি জনগণের সামনে প্রকাশ পেয়েছে। সেটি কি বাংলাদেশে ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনা?
“দেশের এক একটি ঘটনা ঘটছে আরেকটি ধামাচাপা দেওয়া জন্য। আমাদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, কোন অসাধারণ ব্যক্তি এই ঘটনা ঘটিয়েছে, এটা বের করতে হবে।”
জনগণ চাইলে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই তনু হত্যাকাণ্ডের বিচার পাওয়া সম্ভব মন্তব্য করেন গণজাগরণের এই মুখপাত্র।
২০ মার্চ রাতে সেনানিবাসের ভেতরেই বাসা থেকে ২০০ গজ দূরে টিউশন শেষে ফেরার পথে নিখোঁজ হন তনু। রাতেই অলিপুরের একটি ঝোঁপের মধ্যে তনুর লাশ পাওয়া যায়; পাশেই ছিল তার জুতা, ছেঁড়া চুল, ছেঁড়া ওড়না।
শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে সামনে তনু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারে দাবিতে ওই সমাবেশের আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ।
সমাবেশে তনু হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে মঞ্চ। মিছিল শাহবাগ হয়ে আজিজ সুপার মাকেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘরে আবার শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।
তনু এই ‘ধর্ষণ’ ও হত্যাকাণ্ডে দায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এড়াতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন ইমরান এইচ সরকার।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তাহলে আপনি আজকে কেন রাস্তায় নেই? আজকে কেন আপনি রাস্তায় নামছেন না? আপনাদের তো আজকে কথা বলতে দেখছি না। তনুর জন্য কেন আপনি কথা বলছেন না?”
প্রধানমন্ত্রীর ‘নীরবতা’ তনুর ধর্ষক ও হত্যাকারীদের রক্ষা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ইমরান বলেন, “আপনার নীরবতা যদি এই ধর্ষকদেরকে রক্ষা করে দেয়- তাহলে এই হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের দায় আপনিও এড়াতে পারবেন না। আপনাকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।”
“তাই আপনার কাছে, সরকারের কাছে আবেদন থাকবে- ধর্ষককে তার পরিচয়, প্রভাব প্রতিপত্তি বা সে কোন বাহিনীর, কোন রাজনীতিক দলের সদস্য সেই হিসেবে দেখবেন না, ধর্ষককে ধর্ষক হিসেবে দেখবেন। সে মন্ত্রী হোক, সেনাবাহিনী হোক- যাই হোক না কেন। তার বিচার হতে হবে, সেটাই বাংলাদেশের জনগণের দাবি।”
স্বাধীনতা দিবসে গত কয়েক বছরের মতো এবারও শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে কনর্সাটের আয়োজন করা হলেও তনুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এবারের স্বাধীনতা কনর্সাট বাতিল করে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান।
তিনি বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধে মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেখানের মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতা থাকবে, বাক স্বাধীনতা থাকবে, নারীদের স্বাধীনতা থাকবে- কিন্তু কোনো স্বাধীনতা বাংলাদেশের মানুষের নেই।
“এই স্বাধীনতার মাসে তনুকে ধর্ষণের মধ্য দিয়ে হত্যা দিয়ে করা হয়েছে। তাই আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে তনু হত্যার দাবিতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।”
কুমিল্লায় তনু হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনকারীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে আগামী ২৭ মার্চ সকাল ৮টায় শাহবাগ থেকে তনু হত্যার বিচারের দাবিতে কুল্লিমা অভিমুখে মঞ্চের নেতাকর্মীরা রোড মার্চ করবে বলে ঘোষণা দেন ইমরান।
তনু হত্যার বিচার দাবিতে এদিন বিকাল ৪টায় শাহবাগে জাদুঘরে সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা, ডিইউ প্রেস এবং ওপেন মাইন্ডেড ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজনও মানবন্ধন করে।