হতদরিদ্ররা যেন চিকিৎসাবঞ্চিত না হয়: প্রধানমন্ত্রী

হতদরিদ্র নাগরিকদের সেবা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2015, 11:12 AM
Updated : 13 Nov 2015, 11:40 AM

স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি বলেছেন, “হতদরিদ্র মানুষ যেন সেবা ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয়।”

চিকিৎসাকে একটি ‘মহৎ পেশা’ অভিহিত করে সারা দেশ থেকে আসা চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “কি পেলাম, আর কি পেলাম না- তা চিন্তা না করে, দেশের মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম, সেটাই বড় ব্যাপার।”

রোগীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “ওষুধের থেকে চিকিৎসকের একটু ভালো ব্যবহার রোগীর মনে বিশ্বাস আনতে পারে।”

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন স্বাচিপের এই জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আপনারা নিজেদের নেতৃত্ব নিজেরাই নির্বাচিত করবেন।”

চিকিৎসা সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টার কথা জানিয়ে এক্ষেত্রে গবেষণার অপ্রতুলতাতে একটি ‘অভাবের জায়গা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন সরকারপ্রধান।

এ ‘অভাব’ কাটিয়ে উঠতে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আরও দু’টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আর যে দু’টো বিশ্ববিদ্যালয় হবে, সেখানে কিন্তু গবেষণাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সেখানে মূলকাজ হবে, শুধু গবেষণা করা।”

সেইসঙ্গে দেশে রোগ প্রতিরোধক ওষুধ তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশের এই আবহাওয়ায়, এই জলবায়ুতে কী ধরনের রোগ আমাদের হয়, তার চিকিৎসা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

নতুন নতুন ওষুধ তৈরি করার মতো ‘মেধাবী লোক’ বাংলাদেশের আছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন এবং তৃণমূলের জনগণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।

এর আগে বিএনপি সরকারের সময়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা বন্ধ করে দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ভবিষ্যতে কেউ যেন এগুলো বন্ধ করতে না পারে, সেজন্য আইন করে স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান করে দেব।” 

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

চলতি বছরের শুরুতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ ও হরতালের মধ্যে পেট্রোল বোমা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দগ্ধদের ‘সীমাবদ্ধতার পরও যথাযথ’ চিকিৎসা দেওয়ায় চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথাও তিনি অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “সাতটি বিভাগে অটিস্টিক শিশুদের স্ক্রিনিংয়ের জন্য বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।”

প্রতিবন্ধীদের অবহেলা না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগে শিশু অটিস্টিক হলে মা’কে কথা শুনতে হতো। এখন সে অবস্থা আর নেই।

উপস্থিত চিকিৎসকদের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি আরেকটি দুর্যোগ আছে। মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ। আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করা।”

বছরের শুরুতে বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধের সময়ে ‘হত্যা ও অগ্নিসংযোগের’ পর এখন ‘গুপ্ত হত্যা’ শুরু হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

“দেশি মানুষ খুন করে সরকার উৎখাত করা যায় নাই। এখন শুরু হয়েছে বিদেশি মানুষ হত্যা।”

যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ‘বিশ্বাস করে না’, তারই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০০৬ সাল ও পরবর্তী দুই বছর সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে চিকিৎসকদের কর্মকাণ্ডের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যখন কারাগারে, তখন আমাদের সাহায্য করতে সবচেয়ে প্রথম এগিয়ে আসেন ডাক্তাররা।” 

সে সময় রাজনীতির ওপর বিধিনিষেধের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “প্রকাশ্যে কোনো বৈঠকের সুযোগ ছিল না। তখন এগিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিক্ষকরা। আমরা শিক্ষকদের ঘরে, এমনকি ওয়ার্ডেও সভা করেছি।”

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আ ফ ম রুহুল হকের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূইয়া বক্তব্য দেন।

উদ্বোধনী অধিবেশনে সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বার্ষিক প্রতিবেদন পড়ে শোনান।

এছাড়া সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির কো-চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া, সদস্য সচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী, কো-চেয়ারম্যান অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক চিত্ত রঞ্জন দাস শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এবং সম্মেলন প্রস্তুতি অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে পৌঁছালে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় এবং জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা তোলা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।