হত্যার বিরুদ্ধে অসহযোগে নামতে হবে: অজয় রায়

লেখক-প্রকাশক হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত সব রাজনৈতিক শক্তিকে একযোগে রাজপথে নেমে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2015, 05:49 PM
Updated : 6 Nov 2015, 07:18 PM

শুক্রবার শাহবাগে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের ঘাতক ও আরেক প্রকাশকসহ তিনজনের উপর হামকালীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের সংহতি সমাবেশে এ আহ্বান জানান তিনি।

“শুধু সভা-সমাবেশ করে দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও অসহযোগ আন্দোলনের মতো সব রাজনৈতিক শক্তিকে একযোগে মাঠে নামতে হবে। আসুন, আমরা রাজপথে নেমে আসি।”

৩১ অক্টোবর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে নিজ কার্যায়লে জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এবং লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে হামলাকারীরা।

এর আট মাস আগেই একুশে বই মেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎ রায়কে; হামলায় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও আহত হন।

অভিজিতের বাবা বলেন, “যতদিন না অভিজিৎ ও দীপন হত্যার নায়কদের বিচারের কাঠগড়ায় না দাঁড় করাতে পারছি, ততদিন পর্যন্ত আমার সংগ্রাম চলবেই, চলবেই, চলবেই।”

শুধু লেখক-ব্লগার-প্রকাশক হত্যা নয় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে রাষ্ট্রের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

সমাবেশের সভাপতি অজয় রায় বলেন, “আমরা একটি সেক্যুলার ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই। সেক্যুলার বাংলাদেশ মানে আমরা সব ধর্মের সব আচারের মানুষ একত্রে বসবাস করবো। আমাদের বাংলাদেশ হবে সমঅধিকারের, সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ।

“আমরা যুদ্ধাপরাধীমুক্ত ও নব্য রাজাকারমুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশ চাই। কিন্তু এর জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হবে- এটা ভুললে চলবে না।”

সমাবেশে বেসরকারি সংস্থা নিজেরা করি’র নির্বাহী পরিচালক খুশী কবির সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা কি এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা- তা জানতে ব্যর্থ, নাকি তাদের জানতে চাচ্ছেন না?

“যদি বলেন, ব্যর্থ, তাহলে আমরা সহযোগিতা করবো। আর যদি বলেন আপনারা জানতে চাচ্ছেন না, তাহলে আমরাও জানিয়ে দেব, আমরা আমাদের সরকারের কাছে কী চাই এবং সেটা কীভাবে আদায় করে নেব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, যারা মুক্তচিন্তার লেখক-প্রকাশকদের হত্যা করছে তারা এদেশে কোনো ধরনের আধুনিক চিন্তার বিকাশ ঘটতে দিতে চায় না। এরা একের পর এক মুক্তমনাকে হত্যা করছে।”

পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “তাহলে এদের ধরতে অ্যান্টি-টেরোরিস্ট ফোর্স কেন গঠন করা হচ্ছে না?”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সভাপতি আয়শা খানম বলেন, “যে সরকারে ষাট-সত্তর দশকে তীব্র গণ-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা আছেন, সেই সরকারের আমলে এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমরা লজ্জিত, দুঃখিত ও মর্মাহত।

“একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আমি লজ্জিত, আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য কেমন নিরাপদ পরিবেশ রেখে যাচ্ছি।”

বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে, কিন্তু ভাব-চিন্তায় মধ্যযুগের দিকে যাচ্ছে।

“মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে কোনো লাভ নেই। যারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে এবং চেতনা থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়, তাদের রুখে দিতে হবে।”

শ্রাবণ প্রকাশনীর মালিক রবীন আহসান বলেন, “বিএনপি আমলে জঙ্গিদের উত্থানের পর আমরা তাদেরকে ‘জঙ্গিবন্ধু’ আখ্যায়িত করেছিলাম। এখন জঙ্গিদের প্রতিরোধ করতে না পারলে বর্তমান সরকারও জনগণকে সঙ্গে পাবে না।”

সংহতি সমাবেশে অন্যদের মধ্যে শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু, নাট্যাভিনেতা আজাদ আবুল কালাম, মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, উদীচীর সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মারুফ রসূল ও জীবনানন্দ জয়ন্ত, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু, ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক জিলানী শুভ বক্তব্য রাখেন।