বাংলাদেশে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক ও তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
Published : 26 Aug 2015, 11:09 AM
বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সারাদেশে ৭৭টি কেন্দ্রে এই ভোট চলে। এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪৩ হাজার ৩০২ জন।
৬১ জন প্রার্থীর মধ্যে ভোটে নির্বাচিত ১৪ জন আগামী তিন বছর কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
বার কাউন্সিলের সচিব আ ক ম জহুরুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিয়ম মাফিক ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শন্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। কোথাও কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।”
সব কেন্দ্রের ফলাফল কাউন্সিলে পৌঁছানোর পর এর চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম একটি সময় নির্ধারণ করে ফল ঘোষণা করবেন বলে জানান কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) নাজমুল আহসান।
বরাবরের মতো এবারও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের দুটি প্যানেলের মধ্যে এ নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। বিএনপি সমর্থকদের লক্ষ্য কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার।
আইনজীবী সমিতিগুলোতে গত কয়েক দিন ধরে দুই পক্ষকেই গণসংযোগে সক্রিয় দেখা যায়।
বার কাউন্সিলের নির্বাচন হয় তিন বছর পরপর। সারাদেশের আইনজীবীরা মোট ১৪ জনকে ভোটের মাধ্যমে এর সদস্য নির্বাচিত করেন। এর মধ্যে সাধারণ আসনে সাতজন এবং সাতটি অঞ্চলভিত্তিক আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে আরও সাতজন নির্বাচিত হন।
সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ১৪ জন পরে নিজেদের মধ্যে ভোটাভুটি করে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। আর অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
এবারের নির্বাচনের ৬১ জন প্রার্থীর মধ্যে সাধারণ পদে ৩২ জন এবং গ্রুপ পদে ২৯ জন লড়ছেন।
কর্তৃত্ব ধরে রাখার লড়াইয়ে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলে সাধারণ পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, বর্তমান নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এ জে মোহাম্মদ আলী, এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ মিয়া, বদরুদ্দোজা বাদল, মো. বোরহান উদ্দিন ও মহসিন মিয়া।
এই প্যানেলে স্থানীয় বার ক্যাটাগরিতে এ-গ্রুপ থেকে গোলাম মোস্তফা খান, বি-গ্রুপ থেকে মোহাম্মদ আবদুল বাকি মিয়া, সি-গ্রুপ থেকে কবির চৌধুরী, ডি-গ্রুপ থেকে কাইমুল হক, ই-গ্রুপ থেকে আবদুল মালেক, এফ-গ্রুপ থেকে মো. ইসহাক ও জি-গ্রুপ থেকে এ কে এম হাফিজুর রহমান প্রার্থী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে সাধারণ পদের প্রার্থীরা হলেন এম আমীর-উল ইসলাম, আবদুল বাসেত মজুমদার, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আবদুল মতিন খসরু, পরিমল চন্দ্র গুহ, জেড আই খান পান্না ও শ ম রেজাউল করিম।
এই প্যানেলে স্থানীয় বার ক্যাটাগরিতে এ-গ্রুপ থেকে কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, বি-গ্রুপ থেকে এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, সি-গ্রুপ থেকে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী, ডি-গ্রুপ থেকে সরোয়ার আহম্মেদ চৌধুরী আবদাল, ই-গ্রুপ থেকে পারভেজ আলম খান, এফ-গ্রুপ থেকে মো. ইয়াহিয়া ও জি-গ্রুপ থেকে মো. রেজাউল করিম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এর বাইরে আইনজীবী ঐক্য ফ্রন্ট ও আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নামে আরও দুটি প্যানেল এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
ঐক্য ফ্রন্টের প্যানেলে সাধারণ আসনে প্রার্থী হয়েছেন সুব্রত চৌধুরী, শাহ মো. খসরুজ্জামান, এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, সরওয়ার-ই-দীন, মো. হেলাল উদ্দিন, আবদুল মোমেন চৌধুরী ও মো. শামছুল হক।
ঐক্য পরিষদ মনোনীত প্যানেলে সাধারণ পদে প্রার্থী হয়েছেন মো. মাহবুব আলী ভূইয়া, মো. ইউনুস আলী আকন্দ, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. আবুল হোসেন, মো. দেলোয়ার হোসেন মল্লিক, মো. শওকত হায়াত ও সুলতান এ সবুর চৌধুরী।
গত ২০ মে এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।২৫ মার্চ তফসিল ঘোষণার পর ৯ এপ্রিল ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হলে ভোটার সংখ্যা দেখানো হয় ৪৮ হাজার ৪৬৫ জন।
ওই ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠার পর ১২ মে এক তলবি সভায় নির্বাচন সাত দিন পিছিয়ে ২৭ মে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নিয়ন্ত্রিত বর্তমান কাউন্সিল।
এর মধ্যে একটি রিট আবেদনে ২১ মে হাই কোর্ট নির্বাচনের উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেয়। তাতে স্থগিতাদেশ চেয়ে বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন নিয়ে যায়।
শুনানি নিয়ে ২৮ মে আপিল বিভাগ নির্বাচনের জন্য ১৩ অগাস্ট দিন ঠিক করে দিয়ে তার এক মাস আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে প্রকাশ করতে আদেশ দেয়।
আদেশে বলা হয়, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে (অ্যাটর্নি জেনারেল) আহ্বায়ক ও কাউন্সিলের সচিবকে ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে তা প্রকাশ করতে হবে। আর ভোট হবে ১৩ অগাস্ট।
এর ধারাবাহিকতায় ভোটার তালিকা প্রস্তুতের জন্য আবেদনকারীপক্ষের সময় বাড়ানোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জুলাই আপিল বিভাগ নির্বাচনের জন্য ২৬ অগাস্ট নতুন দিন ঠিক করে দেয়।
পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং কোনো আপত্তি উঠলে তা মীমাংসার জন্য ৩ অগাস্ট দিন ঠিক করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
৩০ জুলাই প্রকাশিত সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়, যাতে ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৩০২ জন।