বিএনপির অপপ্রচারের কারণেই এই পদক্ষেপ, বললেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
Published : 13 Dec 2022, 09:33 PM
বিদেশি দূতাবাসগুলোতে গিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির ‘অপপ্রচারের’ কারণে কূটনীতিকদের ‘দ্বিধাদ্বন্দ্ব’ দূর করতে ঢাকার মিশনগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা যেটা করেছি গতকালকে, আমাদের দেশের যত রাষ্ট্রদূত বা হাই কমিশনার বিদেশে কর্মরত আছেন, তাদেরকে আমরা ব্রিফ নোট পাঠিয়েছি এবং সেটারই কপি আমরা এখানেও দিয়েছি যে, তারা জানলেন।
“কারণ, আমরা ১০ তারিখের পর থেকে সকাল-বিকাল, সন্ধ্যা-দুপুর, আমাদের কাছে তথ্য আছে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা একেক দূতাবাসে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ধাপের কূটনীতিক বা কর্মকর্তাদের সাথে তারা দেন-দরবার করছেন। আমরা কোনো ব্রিফিং বা অন্য কিছু অ্যারেঞ্জ করতে চাইনি, সেজন্য আমরা আমাদের যে ইনফরমেশন শিট সেটা দিয়েছি।”
৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সংঘাত, গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশ এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার বিষয়ক তথ্যগুলো ওই চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
এক প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, “ঢাকা শহরে বা বাংলাদেশে একটা রাজনৈতিক, নির্বাচনের আগে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যদি কোনো কনফিউশন থাকে, মিসইনফরমেশন থাকে, আমরা শঙ্কা করছি যে বিএনপি যে পরিমাণ বৈঠক তাদের সাথে করেছেন, আমাদের উচিৎ যে আমাদের তথ্যটা জানিয়ে দেওয়া কেউ জিজ্ঞেস করার আগেই। আমরা শুধু ফর ইউর ইনফরমেশন এভাবে পাঠিয়েছি।”
মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিও দূতাবাসগুলোকে জানানোর কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “গ্রেপ্তারের যে বিষয়টি তাদেরকে জানিয়েছি, সেটা হলো তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, এটার প্রাথমিক তদন্তের জন্য তাদেরকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদে।
“এবং জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে যে পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তারা জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন, বিজ্ঞ আদালত জামিনযোগ্য মনে করেননি, তাদেরকে জামিন দেননি, এই প্লেইন অ্যান্ড সিম্পল তথ্যগুলো আমরা বাংলাদেশে কার্যরত কূটনীতিকদেরকে দিয়েছি।”
সরকার উৎখাত করতে বিএনপি বিদেশি মুরুব্বিদের চিঠি লিখে: আইনমন্ত্রী
এ ধরনের চিঠি পাঠানোকে ‘স্বাভাবিক’ হিসাবে বর্ণনা করে শাহরিয়ার বলেন, “এটা নতুন নয়। বাংলাদেশে বা ক্যাপিটালে মেজর কিছু ঘটলে আমরা সবাইকে জানিয়ে রাখি। এটা একেবারে স্বাভাবিক কূটনৈতিক চর্চার মধ্যে পড়ে। এবং এটা অতীতেও হয়েছে।”
যে পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপি ১০ ডিসেম্বর তারিখে সভা আয়োজন করেছিল, তা ভেস্তে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “১০ ডিসেম্বর তারিখটা তারা বেছে নিয়েছিল কারণ ৯ তারিখ কিছু বড় দেশ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় বা তালিকাটা প্রকাশ করে।
“এবং যেসব লবিস্টদের পেছনে তারা লাখ লাখ ডলার ও পাউন্ডে খরচ করেন, তারা নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আসবে। সেটাকে মিলিয়ে তারা ১০ তারিখের একটা উদযাপনের আবহে বিশাল একটা জনসভা করবে, বাঙালি মনে করবে যে সরকারের সাথে কোনো বন্ধু নেই, এই পুরো পরিকল্পনাটা তাদের ভেস্তে গেছে।”
১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য দূতাবাস তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাচলে সতর্ক করেছিল।
ব্রিটিশদের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে চলাচলে সতর্ক থাকার পরামর্শ
সহিংসতায় উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের, ঢাকায় নাগরিকদের জন্য সতর্কতা
ঢাকায় শঙ্কার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই, এমন নিশ্চয়তা কূটনীতিকদের দেওয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে শাহরিয়ার বলেন, “অবশ্যই। বস্তুত, আপনারা জানেন যে দুয়েকটি রাষ্ট্র যে ট্রাভেল অ্যালার্ট দিয়েছে এবং ঢাকা শহরে কিছুই ঘটেনি সে রকম।
“এবং আমরা অ্যাশিউর করেছি এবং আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনো মূল্যে মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য এবং সকলের নিরাপত্তার জন্য।”
জাতীয় প্রেসক্লাবে উইমেন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (ডব্লিউজেএনবি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার।