অর্থ নয়, শীতের কাপড় আর ওষুধ দিন: তুরস্ক

প্রত্যাশিত সহায়তা সামগ্রীর তালিকা ফেইসবুক পাতায় দিয়েছে ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2023, 07:06 PM
Updated : 9 Feb 2023, 07:06 PM

ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্কের পাশে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান। 

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অনেক বাংলাদেশি জনগণ তাদের ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে আসছেন। এই ধরনের সহমর্মিতায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন তিনি। 

“আমরা নগদ সহায়তা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আমরা সবাইকে সহায়তা সামগ্রী দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।” 

টার্কিশ কো-অর্ডিনেশন অ্যান্ড কোঅপারেশন এজেন্সির (টিকা) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওষুধের পাশাপাশি শীতের মধ্যে মানুষের জন্য এখন গরম কাপড় এবং খাদ্য সহায়তা খুবই প্রয়োজন। 

এই সহায়তা সামগ্রীর মধ্যে কী থাকতে পারে, তার একটি তালিকাও ফেইসবুক পাতায় দিয়েছে ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাস। 

এই তালিকায় ব্যবহার্য জিনিসের মধ্যে কোট-ওভারকোট, রেইনকোট, বুট, জাম্মার, পাজামা-প্যান্টস, হাত মোজা, স্কার্ফ, টুপি, অন্তর্বাস প্রভৃতি রয়েছে। 

তাঁবু, বেড, ম্যাট্রেস, কম্বল, স্লিপিং ব্যাগ, হিটার, টর্চলাইট, পাওয়ার ব্যাংক, জেনারেটর প্রভৃতিও সহায়তা হিসাবে নেওয়ার কথা জানিয়েছে দূতাবাস। 

খাদ্যসামগ্রী হিসাবে বাক্সভর্তি খাবার, শিশুদের খাবারের পাশাপাশি ডায়াপার, স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপকরণও দেওয়া যাবে সহায়তা হিসাবে। 

স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্কের দক্ষিণ ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে নিহতের সংখ্যা বৃহস্পতিবার ১৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

বিবিসি জানিয়েছে, দুর্গতরা আশ্রয়, পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎবিহীন থাকায় অনেক জীবিতও প্রাণ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দ্বিতীয় আরেকটি বিপর্যয়ের বিপদ ঘনিয়ে আসছে জানিয়ে তাতে প্রথম ভূমিকম্পের চেয়েও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা। 

সোমবার ভোররাতের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা পার হয়ে গেছে, যাকে প্রাণ বাঁচানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে বিবেচনা করেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। 

দুর্গতদের জন্য সহায়তার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকা টিকা জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তা তুরস্কে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে টার্কিশ এয়ারলাইন্স। আর এই মানবিক সহায়তার কাস্টমস ছাড়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সহায়তা দেবে। 

ভূমিকম্পের ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে রাষ্ট্রদূত তুরান বলেন, প্রচণ্ড রকম এই দুর্যোগে তুরস্কের ১০টি প্রদেশের লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

“বুধবার সকাল পর্যন্ত আমরা ১২ হাজার ৩৯১ জনকে তুর্কি নাগরিককে হারিয়েছি এবং আরও ৬২ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়েছেন। ৬ হাজার ৪৪০টি ভবন ধসে পড়েছে। উদ্ধার অভিযান চলছে দিনরাত। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।” 

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “অনেক লোক এখনো ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকে আছে। তাদের সংখ্যার নির্দিষ্ট হিসাব এখনো নেই।”

তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে ভূমিকম্পে হতাহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার শোক দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ। 

ইতোমধ্যে উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য ৬১টি সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গেছে তুরস্কে। আরেকটি উদ্ধারকারী দল সিরিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনাও করছে সরকার। 

পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমার দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে, এমন দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে আছে বাংলাদেশ।” 

বাংলাদেশে তুরস্কের সাবেক রাষ্ট্রদূতও নিখোঁজ 

বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসাবে তার পূর্বসুরি দেবরিম ওজতুর্ক ভূমিকম্পের পর থেকে এখনও নিখোঁজ আছেন বলে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত তুরান। 

তার উদ্ধারের জন্য দোয়া চেয়ে তুরান বলেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশের একটি আনতাকিয়াতে ছিলেন ওজতুর্ক। ভূমিকম্পের পর থেকে এখনও তিনি নিখোঁজ। 

“দুঃখজনক হলো, তার কোনো তথ্য এখন আমাদের কাছে নাই।” 

২০১৫ সালের অগাস্ট থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত ঢাকা মিশনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব সামলেছেন ওজতুর্ক।