পাশাপাশি সংবিধান বাতিল করা; বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন করা এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছ ছাত্র-জনতা।
Published : 22 Oct 2024, 06:18 PM
বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি থেকে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি সংগঠন।
ওই সময়ের মধ্যে মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতির পদ না ছাড়লে ‘দুর্বার আন্দোলন’ গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
'রক্তিম জুলাই ২৪', ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি’, ‘বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা’ ‘ইনকিলাব মঞ্চ’সহ বিভিন্ন ব্যানারে মঙ্গলবার দুপুর থেকে শিক্ষার্থী ও জনতা খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে রাজউকের সামনের মোড়ে অবস্থান নেয়।
পরে বিকাল সাড়ে ৪টায় বঙ্গভবনের সামনের থেকে ছাত্র জনতার পক্ষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেন এমদাদ বাবু।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দোসর’ আখ্যায়িত করে এমদাদ বাবু বলেন, "আমরা পরীক্ষিত সৈনিক, সম্মুখ যোদ্ধা। আমরা সংগ্রাম করতে গিয়ে হাত-পা-চোখ হারিয়েছি। যদি আরেকটা হাত পা চোখ দিতে হয় আমরা তাও দিতে প্রস্তুত আছি।"
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের পাশাপাশি সংবিধান বাতিল, বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করারও দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
এদিকে এ কর্মসূচির কারণে বঙ্গভবন এলাকা জুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা যায় সেখানে।
বঙ্গভবনের সামনে যাওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি (স্বারক)। সেখানে তারা রাষ্ট্রপতির অপসারণসহ ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘ফ্যাসিবাদের দোসর অবৈধ’ রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা; সংবিধান বাতিল করা; বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন করা এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করা।
স্বারক এর নাগরিক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রফিক খান বলেন, “আমরা দীর্ঘ একটি সময় রক্তক্ষরণের মাধ্যমে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি; এই স্বাধীনতা রক্ষা করতে আমরা এখনও রাজপথে আছি। স্বৈরাচার আমাদের এই স্বাধীনতাকে বিভিন্নভাবে কলুষিত করার জন্য পাঁয়তারা করে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করছে।
“তারা একের পর এক অযৌক্তিক দাবি তুলে আমাদের এই রক্তে কেনা স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করছে। এসবের মূল ইন্ধনদাতা খুনি হাসিনার অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত বর্তমান রাষ্ট্রপতি; যে কি না আমাদের রক্তের উপর বসে এখনো হোলি খেলছে। আমরা এটা আর হতে দিতে পারি না।"
আইন উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আসিফ নজরুল স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যারা একাধিক হত্যা মামলার আসামি- তারা কী করে বুক ফুলিয়ে বাইরে চলাফেরা করছে; তারা এখনো চাঁদাবাজি করছে।
“আর এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো উপদেষ্টার উপর যদি স্বৈরাচার ভর করে; তাহলে সেটি হবে চরম থেকে চরম ভুল। ছাত্র-জনতা তাকেও ছেড়ে দেবে না। "
স্বারক সদস্য মনিরুজ্জামান বলেন, “জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার রক্ত এখনও শুকায় নাই। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খুনি হাসিনার অবৈধ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এখনো বাহাল তবিয়তে আছেন। তাকে পদত্যাগ করতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে।
“যেহেতু ১৯৭২ সালের লেখা সংবিধানকে দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার স্বৈরাচারিতা দেখিয়েছে, সেই সংবিধানকে পরিবর্তন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “যেহেতু একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ সরকার গঠন করা হয়েছে- এটি একটি বিপ্লবী সরকার, এটি কোনোভাবেই সাংবিধানিক সরকার নয়।
“বিপ্লবী সরকার হলে বিগত সবকিছুরই পরিবর্তন হবে। গত তিনটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা হলে তখন রাষ্ট্রপতিকেও পদত্যাগ করে বিচারের আওতায় আনা যাবে।"
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি মানজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ।
রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্যের পর তার অপসারণ বা পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রপতি ‘মিথ্যা বলে শপথ ভঙ্গ’ করেছেন মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, তাকে এখনও রাষ্ট্রপতি পদে রাখা যায় কি না, উপদেষ্টা পরিষদ তা ভেবে দেখতে পারে।
রাষ্ট্রপতির কাছে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক কোন প্রমাণ নেই এক সাক্ষাৎকারে বলার পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তা মিথ্যাচার বলে বিবৃতি দেন।
পরে বঙ্গভবন থেকে এক বিবৃতিতে বিষয়টি মিমাংসিত বলে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য জনগনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।