নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে হটলাইনের পাশাপাশি ‘শর্টকোড’ পরিষেবা চালু হচ্ছে, বলেন তিনি।
Published : 12 Mar 2025, 12:47 AM
তথ্য পাচার রোধে পুলিশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য ‘পুশ টু টক’ অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, এই অ্যাপ্লিকেশনে কয়েকটি স্তর থাকবে। সে অনুযায়ী পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে পারবেন।
পুলিশের ডিজিটাইজেশনে অন্তর্বর্তী সরকারের চার উদ্যোগের মধ্যে এটি অন্যতম বলে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে হটলাইনের পাশাপাশি ‘শর্টকোড’ পরিষেবা চালু হচ্ছে বলেও তুলে ধরা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ বলেন, “বর্তমানে পুলিশ সদস্যরা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। তাছাড়া তথ্য পাচারের ঝুঁকিও খুব বেশি; যে কোনো সদস্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে সমস্ত আলোচনা কপি করে নিয়ে যেতে পারেন।”
এ কারণে পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে ‘পুশ টু টক’ অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে তথ্য পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা থাকবে, বলেন তিনি।
ফয়েজ আহমদ বলেন, পুলিশের কমান্ড অ্যাপের প্রোটোটাইপ তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে অ্যাপ্লিকেশনটি আরও উন্নয়নের কাজ চলমান আছে।
তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পুলিশ কমান্ড অ্যাপে কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি স্তরে থাকবে। প্রথম স্তরে থাকবেন পুলিশের আইজিসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। পরের স্তরে থাকবেন পুলিশ সদর দপ্তর ও রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ জেলা পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। সবশেষে থাকবেন দেশের সকল থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এখনই কমান্ড অ্যাপে সংযুক্ত করা হবে না।
“বর্তমানে যে কোনো অভিযোগ তদন্ত বা কোনো ঘটনা ঘটলে সকল ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ ও প্রচলিত অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পুলিশ কমান্ড সেন্টারের দায়িত্বে থাকা সদস্যরা সারাদিন এসব কাজেই ব্যস্ত থাকেন।
“এ ধরনের যোগাযোগের পুরো বিষয়টিকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আদলে একটি ইন্সিডেন্টস ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
এই ট্র্যাকিং সিস্টেমে সব ধরনের বার্তা আদান-প্রদান ও যোগাযোগ সংরক্ষণ করা হবে তুলে ধরে বিশেষ সহকারী বলেন, এ সুবিধার ফলে যে কোনো অপরাধের ঘটনায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেটি একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমেই জানা যাবে। সেবা দেওয়া সহজ ও সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের কাজের চাপও কমবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে শর্টকোড পরিষেবাও আসছে
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পুলিশের হটলাইন সেবার পাশাপাশি শর্টকোড পরিষেবা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ রয়েছে তার সাথে আরেকটি ৩ যোগ করে ৩৩৩৩ ডায়াল করে নারী নির্যাতন বিষয়ক যে কোনো অভিযোগ করা যাবে। অথবা ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সেবা অপশনে গিয়ে ৩ চাপলেও পুলিশের কল সেন্টারে ফরোয়ার্ড হয়ে যাবে।
নারীরা যাতে নিঃসংকোচে অভিযোগ জানাতে পারেন সে লক্ষ্যে কল সেন্টারে শতভাগ নারী সদস্য রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, “যেহেতু ৯৯৯ জীবন রক্ষাকারী এসওএস সেবা এবং এর কল সেন্টার ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ, তাই আপাতত এই ৩৩৩৩ সেবাকে ৯৯৯ এ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না।
“পাশাপাশি সরকার ৩৩৩৩ এর কল সেন্টারের রিসিভার হিসেবে শতভাগ নারী কর্মী রাখার চিন্তা ও বিবেচনায় রয়েছে।”
এছাড়া অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি করার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনলাইন এফআইআর পদ্ধতি যুক্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে কল সেন্টারে প্রোফাইল ডাউনলোড হওয়ার পর কলটি সরাসরি সংশ্লিষ্ট থানায় চলে যাবে।
বর্তমানে থানায় দায়িত্বরতদের ফোন নম্বরের ডেটাবেজ নিয়ে কাজ চলছে বলেও তুলে ধরেন তিনি।
পুলিশ বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব পদক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরে ফয়েজ আহমদ বলেন, উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা আইসিটি বিভাগ থেকে করা হবে।