৩০ টাকার নোটারি স্ট্যাম্পে যখন দেহ দানের দলিল তৈরি করেন সন্জীদা খাতুন, তখন তার বয়স ছিল প্রায় ৬৫ বছর।
Published : 28 Mar 2025, 09:53 AM
একটি হলুদ খাম, তাতে লেখা- ‘সন্জীদা খাতুনের লাশ, বারডেমে হাসপাতালে দেবার প্রয়োজনীয় দলিল’।
খামের ভেতরে এফিডেভিট করা ৩০ টাকা মূল্যের নোটারি স্ট্যাম্প। এতে সন্জীদা খাতুন নিজেই লিখে গেছেন, তার মরদেহ দানের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা।
সন্জীদা খাতুন যে কতটা গোছানো মানুষ ছিলেন, এ যেন তারই বৈশিষ্ট্য। এই ঘটনা যেন মনে করিয়ে দেয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কথাটি- ‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান’।
আজীবন রবীন্দ্রসাধনায় মগ্ন থাকা সন্জীদা খাতুন তার মৃত্যুহীন প্রাণ পুরোটাই বিলিয়ে দিয়েছেন মানুষের কল্যাণে। আর মরণেও তিনি সেই প্রাণ দিয়ে গেলেন মানুষেরই সেবায়।
দেহ দান বিষয়ে সন্জীদা খাতুন বলেছেন, “আমার বিশ্বাস যে মৃত্যুর পরেও কেউ তার মৃতদেহ এবং বিভিন্ন অঙ্গ জীবিত মানবদেহে প্রতিস্থাপন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং শিক্ষার জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে মানবতার সেবা করতে পারে।”
সন্জীদা খাতুনের সেই নির্দেশনা মেনে তার পরিবারের সদস্যরা বৃহস্পতিবার ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি) দেহ দান করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।
হলুদ খামে সন্জীদা খাতুন বারডেম হাসপাতালে দেহ দানের কথা লিখলেও পরিবারের সদস্যরা কেন পিজি হাসপাতালে দেহ দান করেছেন
এর কারণ ব্যাখ্যায় সন্জীদা খাতুনের ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি খামে বারডেম লিখলেও পরে তিনি বিএসএমএমইউর (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল) পক্ষে ঝুঁকে পড়েছিলেন।”
বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে কিংবদন্তিতুল্য, গবেষকের চোখে বিস্ময় জাগানিয়া ব্যক্তিত্ব ছিলেন সন্জীদা খাতুন, যার জীবন কেটেছে বাঙালির আত্ম পরিচয়ের সুলুক সন্ধানে। আজন্ম ছিলেন নিবিষ্ট রবীন্দ্র গবেষনায়। বাঙালি সংস্কৃতি আর রবীন্দ্রচর্চাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্ববব্যাপি।
৩০ টাকার নোটারি স্ট্যাম্পে যখন দেহ দানের দলিল তৈরি করেন সন্জীদা খাতুন, তখন তার বয়স ছিল প্রায় ৬৫ বছর।
দলিলে তিনি লিখেছেন, গবেষণা, শিক্ষা এবং জীবিত মানবদেহে বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য মৃতদেহ দান করেছেন।
সন্জীদা খাতুন লেখেন, “আমি, সন্জীদা খাতুন, কাজী মোতাহার হোসেন এবং সাজেদা খাতুনের কন্যা, বয়স প্রায় ৬৫ বছর, জন্মসূত্রে বাংলাদেশী নাগরিক, এতদ্বারা আন্তরিকভাবে নিম্নলিখিত কথাগুলি ঘোষণা করছি, স্বীকার করছি, এবং নিশ্চিত করছি।”
পার্থ তানভীর নভেদ বলেন, “আজীবনই তিনি খুব গোছানো মানুষ ছিলেন। এই দলিল তিনি নিজের হাতে লিখে গুছিয়ে রেখে গেছেন তিনি যে কতটা গোছানো মানুষ- এটা তার একটা বৈশিষ্ট্য। আমরা দেখেও অতটা গোছানো স্বভাবের হয়ে উঠতে পারিনি।”