“মন মানসিকতা পরিবর্তন করে আধুনিক প্রযুক্তিটাও রপ্ত করতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে আমার এগিয়ে যাব,” বলেন তিনি।
Published : 01 Feb 2024, 06:22 PM
শুধু কাগজের বই প্রকাশ না করে ডিজিটাল মাধ্যমেও বই প্রকাশ করার জন্য প্রকাশকদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “ডিজিটাল প্রকাশক হলে এটা শুধু দেশে নয় বিদেশও পৌঁছাতে পারব। মন মানসিকতা পরিবর্তন করে আধুনিক প্রযুক্তিটাও রপ্ত করতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে আমার এগিয়ে যাব।”
বৃহস্পতিবার বিকেল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধানের এই বার্তা আসে।
প্রতিবছর প্রকাশকরা যেমন বইমেলার দিকে চেয়ে থাকেন, তেমনি পাঠকদেরও আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে একুশের মাসব্যাপী বইমেলা। আর মেলাকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন বই প্রকাশের হিড়িক পড়ে।
গতবারের মত এবারও মেলার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।
বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিকাল ৩টার দিকে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে উদ্বেধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পরিচালনায় পরিবেশন করা হয় অমর একুশের গান। এ অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অতীতের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিরাপত্তার বেড়াজালে তার বই মেলায় আসার আনন্দটাই হারিয়ে গেছে।
“প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আসা, এতে কোনো মজা নেই। কারণ স্বাধীনতায় তো নাই। ডানে তাকাব নিরাপত্তা, বাঁয়ে তাকাব নিরাপত্তা, পিছনে গেলে নিরাপত্তা, সামনে নিরাপত্তা, এই নিরাপত্তার বেড়াজালে স্বাধীনতাটাই হারিয়ে গেছে।”
বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে এলে মনে পড়ে স্কুল জীবনের কথা, ছোটবেলার কথা। এই প্রাঙ্গণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, এখন সে স্বাধীনতাটা নাই। জানি না কবে আবার স্বাধীনতা পাব।“
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই যে বদলেছে, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন আমাদের যুগ হয়ে গেছে বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগ। বই প্রকাশ অবশ্যই থাকবে, এটা যাবে না। কারণ, হাতে নিয়ে বই পড়ার মধ্যে আলাদা একটা আনন্দ আছে। তবে আজকালকার যুগের ছেলেমেয়েরা ট্যাবে করে বই পড়ে।আবার ল্যাপটপে পড়ে।”
ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “প্রকাশকদের অনুরোধ করে বলব, শুধু কাগজের প্রকাশ করলে হবে না, ডিজিটালের প্রকাশক হতে হবে।”
অনুবাদ সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “এক সময় দাবি উঠেছিল অনুবাদ করা যাবে না। কিন্তু আমি অনুবাদের পক্ষে। অনুবাদ যদি না হয় পৃথিবীর এত ভাষা আমরা কোথায় থেকে জানব। একটা দেশকে, তার সংস্কৃতিকে জানতে হলে আমরা তার ভাষার মধ্য দিয়ে জানতে হবে। আমাদের বাংলা ভাষা যত বেশি অনুবাদ হবে পৃথিবীর অন্যরাও তত বেশি জানতে পারবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতার পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ স্বাধীনতার পর যখন জাতিসংঘ আমাদের স্বীকৃতি দিল, ৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেখানে ভাষণ দিতে যান, তিনি কিন্তু বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন। বাংলা ভাষায় ভাষণ অর্থাৎ বাংলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
“আমি আমার বাবার পথ অনুসরণ করে এই পর্যন্ত যতবার ভাষণ দিয়েছি, আমি কিন্তু প্রতিবার বাংলায় ভাষণ দিই।”
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন, সে কথাও শেখ হাসিনা বলেন।
তিনি বলেন, “রক্তের অক্ষরে আমরা যে ভাষার অধিকার আদায় করেছি, সেটা এখন সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি যখন আমরা পেলাম, তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই, এখানে একটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলব। আমরা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। আমার সঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান ছিলেন। কাজ শুরু করি, ২০০১ এর ক্ষমতা আসতে পারিনি, তখন খালেদা জিয়া সেই কাজটি বন্ধ করে দিয়ে ছিল।
“আমি ধন্যবাদ জানাই তাকে, বন্ধ করে দিয়েছিলেন ভালো হয়েছিল। কারণ, দ্বিতীয়বার যখন আমি সরকারে আসি সেটা প্রতিষ্ঠা করে, উদ্বোধন করে, এখন সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। সেটা যাতে আরো সমৃদ্ধ করতে পারে সেটা আমি চাই।
১৯৫২ সালে এই ফেব্রুয়ারি মাসেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির সত্তা জাগ্রত হয়েছিল, সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই পথ বেয়েই আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। আমরা বাঙালি বাংলা ভাষায় কথা বলি, মায়ের ভাষায় কথা বলি, এই অধিকারটা আমরা পেয়েছিলাম। সেটাও আমাদের রক্ত দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে। বাংলা একাডেমি আমাদের অনেক আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার। বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা।”
বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। এছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
উদ্বোধন শেষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ভাষা শহীদ ও বঙ্গবন্ধুর স্মরণে বিভিন্ন ফটো গ্যালারী ও ডিজিটাল আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে ফিতা কেটে বইমেলার উদ্বেধন করে বাংলা একাডেমি প্যাভিলিয়নে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ পুলিশের স্টল এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্টল মাতৃভূমিতেও যান।
এবারের বইমেলা হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।