সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণ: বেজমেন্টে নামার উপায় খুঁজছেন উদ্ধারকর্মীরা

“জাতীয় কমিটি মতামত দেওয়ার পরই উদ্ধার কার্যক্রমের প্রক্রিয়া শুরু হবে; এখন কোনো ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে কাজ চালানো হচ্ছে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2023, 07:46 AM
Updated : 8 March 2023, 07:46 AM

পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারের ক্যাফে কুইন ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান দ্বিতীয় দিনে গড়ালেও ভবনের বেজমেন্টে তল্লাশির উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না উদ্ধারকর্মীরা।

ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় সেখানে অভিযান চালাতে রাজউক ও সেনাবাহিনীর পরামর্শের অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইনউদ্দিন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, সকালে তারা কিছুটা কাজ শুরু করেছেন। তবে মূল কাজ শুরু করতে হলে অন্যন্য সংস্থার পরামর্শ লাগবে।

“আমরা রাজউক ও সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মূল জায়গায় কাজ শুরু করতে হলে তাদের পরামর্শ ছাড়া হবে না।”

ভবনের বেজমেন্টে জায়গায় উদ্ধার অভিযান চালাতে একটি ‘জাতীয় কমিটি’ গঠন করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. জাফর হোসেন।

ভবনটি এখন ‘পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ’ জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রাতে ফায়ার সার্ভিস তাদের উদ্ধার অভিযান স্থগিত করেছিল। সকালে তারা পাশের ভবন দিয়ে কিছুটা কাজ শুরু করেছে।

“একটি কমিটি হয়েছে, তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে মূল ভবনের কাজ শুরু হবে। এছাড়া সকাল থেকে তারা (ফায়ার সার্ভিস) অন্যান্য কাজ করছে।”

কতজনের কমিটি এবং কারা সেখানে রয়েছেন, সে ব্যাপারে কিছু জানাননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।

তিনি জানান, সেই কমিটি এসে মতামত দেওয়ার পরই উদ্ধার কার্যক্রমের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে এখন কোনো ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে কাজ চালানো হচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকালে ওই ভবনটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত ১৭ জনের মরদেহ বুঝে নিয়েছে পরিবার।

বুধবার সকালে সার্ভিসের মহাপরিচালক মাইনউদ্দিন জানান, নতুন করে কাউকে উদ্ধার করা হয়নি। ওই ঘটনায় সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারো মৃত্যুও হয়নি বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনার পরদিনও ক্যাফে কুইন ভবনের সামনে আসেন নিখোঁজ কয়েকজনের স্বজনেরা।

আব্দুল মান্নান নামে এক ব্যক্তি সকালে ভবনের সামনে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। তিনি জানান, ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সেনেটারি দোকানে কাজ করতেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী মেহেদী হাসান স্বপন (৩৮), যিনি এখনো ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন।

সম্পর্কে স্বপনের মামা-শ্বশুর মান্নান বলছিলেন, “ভেতরে এখনো মানুষ আছে, আপনারা একটা ব্যবস্থা নিন।”

শাহাদাত নামে একজন আসেন তার ছোট ভাই রবিন হোসেন শান্তকে (২০) খুঁজতে। শাহাদাত বলেন, তাদের বাড়ি শরীয়তপুরে। বছরখানেক ধরে নিচতলার আনিকা স্যানেটারিতে কাজ করতেন তার ভাই রবিন। বিস্ফোরণের পর থেকে তার হদিস পাচ্ছে না।

পুরান ঢাকার মালিটোলার বাসিন্দা আনিকা স্যানেটারির মালিক মোমেন হোসেন সুমনও (৪৫) নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানান শাহাদাত।

মাহবুব হোসেন নামে এক যুবক বলেন, আনিকা নামে সিদ্দিকবাজারের বিভিন্ন ভবনে চারটি দোকান আছে একই মালিকের। তিনি সেই একটি দোকানের কর্মচারী। ঘটনার সময় আনিকার মালিক সুমন দুর্ঘটনায় পড়া ভবনের দোকানে ছিলেন। বিস্ফোরণের পর থেকে মাহাজনকে খুঁজে পাচ্ছেন না।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এখনো বিস্ফোরকের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।”

ঘটনাস্থল ডগ স্কোয়াড কাজ করছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা শাহজাহান মোল্লা বলেন, “ডগ স্কোয়াড দিয়ে স্তুপের নিচে কোনো মরদেহ রয়েছে কিনা, তা খোঁজা হচ্ছে।”

তবে কোনো ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন-

Also Read: সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণ: ১৭ মরদেহ পরিবারের কাছে, নিখোঁজ ৩

Also Read: প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় সিদ্দিক বাজারের বিস্ফোরণ

Also Read: ‘বিস্ফোরণের ঠিক আগেই হেঁটে এলাম’

Also Read: ‘মানুষ উড়ে এসে পড়েছিল রাস্তায়, গাড়ির ওপরও’

Also Read: ‘যেন মৃত্যুই তাদের ডেকে নিয়েছিল’