“এটা অনেক বড় মামলা,” বলেন তিনি।
Published : 27 Mar 2025, 09:47 PM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ‘গণহত্যার’ অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ঈদের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, ‘কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির’ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার প্রসিকিউশন অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তাজুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।
এরপর ১৬ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অর্ধ শতাধিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।
গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নে প্রধান কৌঁসুলি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলাটি কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির। এটা অনেক বড় মামলা।
“এখানে সবচেয়ে বেশি ডকুমেন্ট সম্পৃক্ত। এটার (তদন্ত রিপোর্ট) চূড়ান্ত পর্যায়ে কাজ চলছে। ঈদের পর সেটাও চলে আসবে।”
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি প্রমাণ করার জন্য সবগুলো ঘটনার নির্যাস চলে আসবে এই মামলায়। ঈদের পর চলে (তদন্ত প্রতিবেদন) আসবে বলে আশা করছি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের চেষ্টায় ‘গণহত্যার’ দুই অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গত ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ মামুনকে যুক্ত করে একটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তারি জারি করা হয়। সাবেক আইজিপি মামুন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বাকি ৪৫ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন- সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শহাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু ও কামরুল ইসলাম।
আরো আছেন সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২০ এপ্রিল পর্যন্ত তদন্ত সংস্থাকে সময় দেয় ট্রাইব্যুনাল।
তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি এ আদেশ দেয় বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
‘ঈদের পর বিচার দৃশ্যমান হবে’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌসুলি তাজুল ইসলাম বলেন, “সাভারে ছয় লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার মামলার তদন্তের খসড়া হাতে চলে এসেছে। ঈদের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। আমরা সময় চেয়েছিলাম। ট্রাইব্যুনাল ২৮ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় দিয়েছেন।”
তিনি বলেন, এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচারের কাজটা শুরু করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
প্রধান কৌঁসুলি বলেন, “চাঁনখারপুলের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত রিপোর্টের খসড়া হাতে চলে এসেছে। ফিনিশিং টাচ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটাও ঈদের পর হাতে চলে আসলে ফরমাল চার্জ দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত প্রসিকিউশন অফিসের দৃশ্যমান কাজ দেখা যায় না। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই আইনজীবীদের আদালতের কাজটা শুরু হয়ে যায়।
“ঈদের পর বিচারটা দৃশ্যমান দেখতে পাবেন।”
‘আসামিরা প্রভাবশালী, বিচারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে’
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান কৌঁসুলি বলেন, “ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো একটা মহল জড়িত থাকতে পারে। প্রসিকিউশন অফিসেও থাকতে পারে। আমরা এ বিষয়টাকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে বিশ্লেষণ ও তথ্য-প্রমাণাদি সংগ্রহ করছি।
“যদি আমরা প্রমাণ পাই প্রসিকিউশন টিম বা অফিসের কেউ বা ট্রাইব্যুনালের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। আমরা এটাকে সিরিয়াসলি নিয়েছি। যাকে দায়ী পাব তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
তিনি বলেন, “ট্রাইব্যুনালের অর্ডার হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ জানছে না। আদেশ হওয়ার পর তাৎক্ষণিক জানছে। জানানোর কাজটা আদেশ হওয়ার সাথে সাথেই করা হচ্ছে। ন্যাচারালি এই ভবনের (ট্রাইব্যুনাল ভবন) মধ্য থেকে জানানো হচ্ছে।”
তাজুল ইসলাম বলেন, “এটা স্পর্শকাতর বিচার। যারা এখানে আসামি হয়ে আসছেন তারা প্রভাবশালী, অর্থবিত্ত আছে। তারা নানাভাবে এই বিচারকে ব্যর্থ ও বিতর্কিত করার চেষ্টা করবেন।
“আমাদের ও জাজদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করবেন। প্রসিকিউশনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবেন। সেই চেষ্টাটা কিছু চলছে বলে মনে হয়। এ ধরনের অসাধুপন্থা অবলম্বন করে বিচার বন্ধ করা যাবে না।”