ওয়ারীর নবনিযুক্ত ডিসি ছালেহ উদ্দন ‘পরিবর্তিত সময়ে সত্যিকার পুলিশিং’ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
Published : 21 Sep 2024, 04:04 PM
রাজধানীর ওয়ারীতে দুই ভাইকে হত্যার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- আকবর হোসেন (৬০) ও তার ছেলে আসিফ সুলতান সিফাত (২৭) এবং আজাহারুল ইসলাম খান রিয়ান (২৮)।
শুক্রবার ঢাকার সাভার মডেল থানা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন।
ফ্ল্যাট নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৪ অগাস্ট ওয়ারীর হাটখোলা এলাকায় দুই ভাই আলামিন ভূইয়া ও নুরুল আমিন ভূইয়াকে হত্যার ঘটনা ঘটে।
ডিসি ছালেহ উদ্দিন বলেন, “এ ঘটনায় ১৫ অগাস্ট ওয়ারী থানায় দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলার প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করা হয়।
“তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নির্ণয় করে সাভার মডেল থানা এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
গ্রেপ্তারদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাটখোলা রোডের নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ১টি চাইনিজ কুড়াল, বৈদ্যুতিক শক স্ট্যান্ড, চাকু ও একটি স্টিলের ব্যাটন জব্দ করা হয় বলে জানান তিনি।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ছালেহ উদ্দিন বলেন, “২০১৪ সালে ভিকটিম আলামিন ভূইয়া হাটখোলা রোডের ‘ক্লাসিক রিয়েল স্টেট কোম্পানির’ সঙ্গে একটি ফ্ল্যাট ক্রয়ের চুক্তি করেন। জমির মালিক অ্যাডভোকেট আকবরের সঙ্গে একই বছর রিয়েল স্টেট কোম্পানির মালিক রিমনের ভবন তৈরির একটি চুক্তি হয়। কিন্তু রিমন সেই জমিতে ভবন তৈরি করেননি।
তিনি বলেন, “পরবর্তী ১০ বছরেও সেখানে ভবন নির্মাণ না করায় জমির মালিক আকবর নিজের অর্থায়নে একটি ভবন দুই তলা পর্যন্ত নির্মাণ করেন। ঘটনার দিন ভিকটিম আলামিন ছোটভাই নুরুল আমিনকে সঙ্গে নিয়ে নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে জমির মালিক আকবরের কাছে বলেন, ‘ক্লাসিক রিয়েল স্টেট কোম্পানির সঙ্গে আমার চুক্তি আছে আমাকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেন’।
“সে সময় জমির মালিকের সঙ্গে তাদের মধ্যে কথা কথা কাটাকাটি হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার সিফাতের নেতৃত্বে ভিকটিমদের এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় দুইজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুইজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।”
ট্রাফিক কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
এদিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে যাত্রাবাড়ী জনপথ মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আশরাফ আলীকে (৪৭) পিঠে ছুরিকাঘাতের দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারের কথা জানান ডিসি মো. ছালেহ উদ্দিন।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “জনপথ মোড়ে ট্রাফিক কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাত করার পরপরই আমাদের টিম জড়িতদের শানাক্তে কাজ শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় এই ঘটনায় যারা জড়িত এরমধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি।”
গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাহিদ হাসান এবং সুমন নামের দুইজনকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গ্রেপ্তাররা চলন্ত বাসের জানালা থেকে যাত্রীদের মালামাল ছিনতাইয়ে জড়িত। তাদের ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ আছে বলে জানতে পেরেছি। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে এ ঘটনায় যারা জড়িত এবং তাদের মাধ্যমে পূর্বেও যেসব ঘটনা ঘটেছে সেসব বিষয়ে জেনে অচিরেই জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।”
সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারীর নবনিযুক্ত ডিসি ছালেহ উদ্দন ‘পরিবর্তিত সময়ে সত্যিকার পুলিশিং’ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “গত ৫ অগাস্ট ও তার পূর্ববর্তী অনেক ঘটনা প্রবাহের পরে ডিএমপির অন্যান্য ডিভিশনের মতো ওয়ারী ডিভিশনেও থানার ওসি থেকে শুরু করে এসি, ডিসিদের নতুন সেটআপে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেছি৷ ৫ অগাস্ট বা তার পূর্বে যে অবস্থা ছিল এবং পুলিশের প্রতি মানুষের যে ধারণা তৈরি হয়েছিল তা নিরসনে আমরা সত্যিকার অর্থে পুলিশিং বলতে যা বোঝায় সেই পুলিশিং করতে চাই।
“আমাদের অভিভাবক সম্মানিত কমিশনারের নির্দেশে ইতোমধ্যে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে নিয়ে বিভিন্ন থানায় অ্যান্টি ক্রাইম মিটিং করা হয়েছে। যেখানে সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষকে নিয়ে বসেছি। সবার মতামত নিয়ে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি, ভবিষ্যতে সত্যিকার অর্থে আইনের মধ্যে থেকে পুলিশিং করা হবে।”