খিলক্ষেত থানার ওসি জানান, নাবিদের হঠাৎ করে 'চোখে আঁধার' দেখার সমস্যা আছে। তারপরও তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
Published : 28 Dec 2023, 08:09 PM
রাজধানীর খিলক্ষেতে বাসের জন্য অপেক্ষমান কয়েকজন চাপা দেওয়া ল্যান্ডক্রুজারটি চালাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী নাবিদ আল বিশাল।
গ্রেপ্তারের পর তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ তিনি ‘সাডেন ব্ল্যাকআউট’ (চোখে আঁধার দেখা) এর শিকার হলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। পরে সটি লোকজনের ওপর উঠে যায়।
বুধবার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত যাত্রী ছাউনির সামনে ওই ঘটনায় একটি শিশুসহ তিনজন নিহত হন। আহত একজনের অবস্থাও গুরুতর। লোকজনকে চাপা দিয়েই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান চালক।
পরে তাকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের পর খিলক্ষেত থানার ওসি শেখ আমিনুল বাসার জানান, নাবিদ আল বিশাল সিঅ্যান্ডএফ এর ব্যবসা করেন। বুধবার তিনি নিজেই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর তিনি পুলিশকে বলেছেন, ওইদিক দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি হঠাৎ ‘ব্ল্যাকআউট’ (চোখে আঁধার দেখা)) হয়ে পড়েন। এরপর গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে অপেক্ষমান লোকজনের ওপর উঠে যায়।
বিশালের এমন আরও হয়েছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
ওসি বলেন, “এ রকম স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে তিনি কেন গাড়ি চালাচ্ছিলেন তার কোন জবাব মেলেনি।“
গাড়িটিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের স্টিকার লাগানো ছিল। তবে পুলিশ জানতে পেরেছে গাড়িটি একজন নারীর নামে নিবন্ধিত। তবে সেটি ব্যবহার করতেন বিশাল। তিনি বিমানবন্দরকেন্দ্রিক সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায় যুক্ত।
তিনি কী করে এই স্টিকার পেলেন তা যাচাই করা হচ্ছে বলেও জানান ওসি।
সুমন মিয়াকে নিয়ে শঙ্কা
বুধবার রাতে সাত বছরের ছেলে ইয়াসিনের হাত ধরে বাসের জন্য অপেক্ষমান ছিলেন রাজমিস্ত্রী সুমন মিয়া। হঠাৎ জিপ গাড়িটি তাদের ওপরে উঠে যায়।
ইয়াসিনের নাড়ি-ভুড়ি বের হওয়া লাশটি গাড়ির নিচে পড়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে সুমন মিয়াসহ তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। হাসপাতালে বেসরকারি চাকরিজীবী উজ্জ্বল পাণ্ডেকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
মধ্যরাতে মারা যান আরেক আহত আরমিনা হক। তিনি পলমল গ্রুপের সহকারী ম্যানেজার (এইচআর) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সুমন একাধিক আঘাত (মাল্টিপল ফ্রাকচার) নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যাজুয়ালটি ব্লকে অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসাধীন। তিনি সেরে উঠবেন, এমন আশা দেখাচ্ছেন না চিকিৎসকেরা। ছেলে ইয়াসিনের মৃত্যুর খবরও তাকে জানানো হয়নি।
সুমনের বাবা মফিজুল ইসলাম বলেন, “ডাক্তাররা বলছে, সুমনের হাতে-পায়ের একাধিক জায়গায় ভাঙছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
“সে ছেলের কথা জানতে চেয়েছিল। তাকে বলা হয়েছে ইয়াসিন বাসায় আছে।”
সুমন পরিবার নিয়ে থাকেন মোহাম্মদপুর এলাকায়। তার বাবা খিলক্ষেতের একটি বাড়িতে নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করেন। বুধবার তার জন্য ভুনা খিচুড়ি-পিঠাসহ ভালো খাবার নিয়ে যান সুমন। ইয়াসিন দাদাকে দেখতে যাওয়ার বায়না করলে তাকেও সঙ্গে নেওয়া হয়।
মফিজুলকে খাইয়ে তারা বাবা-ছেলে বাসে ওঠার জন্য যাত্রী ছাউনির সামনে অপেক্ষার সময়ই ল্যান্ডক্রুজার গাড়িটি তাদের ওপর উঠে পড়ে।