সমাবেশে দৃশ্যশিল্পী, পারফরমেন্স শিল্পী, গবেষক, স্থপতি ও শিল্পসংগঠকরাও অংশ নেন।
Published : 10 Aug 2024, 02:38 PM
ভাস্কর্য, শিল্পস্থাপনার ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি সংস্কারের দাবি নিয়ে ‘গণহত্যা ও নিপীড়ন বিরোধী শিল্পী সমাজ’র ব্যানারে শাহবাগে সমাবেশ করেছেন সংগীত শিল্পী, আলোকচিত্রী, লেখক ও কবিরা।
শনিবার সকালে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশে দৃশ্যশিল্পী, পারফরমেন্স শিল্পী, গবেষক, স্থপতি ও শিল্পসংগঠকরাও অংশ নেন।
সমাবেশে শিল্পী ও লেখক মোস্তফা জামান বলেন, "আমরা দুটি কারণে এখানে দাঁড়িয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে চেপে বসা পাথরটি সরানো এবং সাম্প্রতিক সময়ে ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনায় যে হামলা হয়েছে তার প্রতিবাদ করা।"
কিউরেটর ও লেখক আমিরুল রাজিব বলেন, “এই দেশেই লুটেরারা আছে, ছাত্র হত্যা যারা করেছে, তারা আছে। ফলে আমাদের লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। আমরা শিল্পীরা কি পারব নিরাপদে কাজ করতে? আমরা শিল্পীদের কাজের পরিবেশ গড়তে এ লড়াই চালিয়ে যাব।"
সব ধরনের অপপ্রচার বন্ধে এবং নৈরাজ্য রুখতে ভূমিকা রাখতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন সংগীতশিল্পী বিথী ঘোষ।
আলোকচিত্রী মুনেম ওয়াসিফ বলেন, "ছাত্রদের হাত ধরে যে বিপ্লবটা হয়েছে, সেটি নসাৎ করার চেষ্টা করছে কারা, তা নিয়ে ভাবতে হবে। সকল অনাচারের বিরুদ্ধে আমরা আগেও কথা বলেছি, ভবিষ্যতেও বলবো।"
দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে চলা সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে
শিল্পী অমল আকাশ বলেন, "এই মুহূর্ত থেকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সারাদেশের আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।”
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নির্মাতা সুমন আনোয়ার, শুভ্র খান, নাট্যশিল্পী সাইফুল জার্নাল, চিত্রশিল্পী আজমাইন আজাদ কথাসহ অনেকে।
সমাবেশের আয়োজকদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগীতশিল্পী অরূপ রাহী। তাতে বলা হয়, শিল্প-সংস্কৃতির নানা চর্চায় যুক্ত মানুষজনের ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে নিজ নিজ চর্চা অব্যাহত রেখে ছাত্র-জনতার কাতারে শামিল হয়ে রাষ্ট্র-সমাজ-সংস্কৃতি মেরামতে ভূমিকা রাখবার সময় এখন।
সমাবেশে তুলে ধরা দাবিগুলো হল-
• গত ১৬ বছরের অনির্বাচিত সরকারের উত্তরাধিকার, ঔপনিবেশিক জাতি-পরিচয়বাদী প্রতিক্রিয়ার রাজনীতি/সংস্কৃতির বিপরীতে শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষ থেকে সদর্থক তৎপরতার সংস্কৃতির উদ্বোধন করা ও সৃষ্টিশীলতার নতুন ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করা। চিন্তা ও মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা।
• সংবিধান, প্রতিনিধিত্ব, আমলাতন্ত্র, বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ ব্যবস্থার গণতন্ত্র সহায়ক সংস্কার এগিয়ে নেওয়া।
• ধর্ম বনাম সেক্যুলারিজমের মত বিভাজনকারী চিন্তা ও মতাদর্শ থেকে সাংস্কৃতিকভাবে মুক্ত করার কাজ করা। রাষ্ট্রকেও এই বিভাজন নীতি থেকে মুক্ত করার কাজ করা।
• বিভাজন ও বৈষম্যকারী ঔপনিবেশিক জাতি-পরিচয়বাদী সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র দর্শন থেকে সমাজ-সংস্কৃতি- রাষ্ট্রকে মুক্ত করার কাজ করা।
• সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘুর অন্যায় বোঝাপড়া, সামাজিক-রাষ্ট্রীয়- সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে সমাজ, রাষ্ট্র ও সংস্কৃতিকে মুক্ত করার জন্যে কাজ করা।
• বৈষম্যমূলক, শ্রেষ্ঠত্ববাদী জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ সামর্থ্য বুঝ ও ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে বহুজাতির, বহু ধর্মের, বহু লিঙ্গের মানুষের ইনসাফি বাংলাদেশ গড়ার কাজ করা।
• সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশের সাথে জড়িত স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণের ইতি টেনে সকল আয়োজনে বাঙালি, আদিবাসী, ধর্মীয় সম্প্রদায় ও লিঙ্গীয় পরিচয় নির্বিশেষে শিল্পীদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
• অরাজকতা, নাশকতা সম্পর্কে সজাগ থাকা। সারা দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মগোষ্ঠীর পক্ষে দাঁড়ানো এবং আক্রমণকারীদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সারাদেশে ভাস্করয ভাঙার তদন্ত করা ও এমন হীনকার্যকলাপ প্রতিরোধ করবার কর্ম প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে দেশে শিল্পী ও শিল্পীসংগঠনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা।
• অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে একটা স্মারক গড়ার প্রস্তাব করা যেতে পারে যেখানে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ থাকবে। এই শিল্পকর্মের নাম হতে পারে ন্যায়ের দেয়াল/ইনসাফের দেয়াল। যার এক্সটেনশন বিভিন্ন জেলায় থাকতে হবে।
• একটি সংস্কৃতি কাউন্সিল গঠন করে শিল্পকলা, আলোকচিত্রশিল্প, নাট্যকলা, চলচ্চিত্রশিল্প সহ সকল মাধ্যমে নিবেদিত কর্মীদের ভবিষ্যত চর্চার ক্ষেত্র মজবুত করা এবং আদর্শগতভাবে উন্মুক্ত রাখার পাশাপাশি যুগোপযোগী ধারা ও সনাতন ধারাসমূহের বিকাশ নিশ্চিত করা।