সহিংসতার তিন দিনে বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত এসব ভবনে দলবেঁধে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করতে দেখা গেছে।
Published : 24 Jul 2024, 01:37 AM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা হয়েছে; ভাঙচুরের পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে আগুন। একইসঙ্গে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট হয়েছে।
সহিংসতার সময় একের পর এক ভবনকে লক্ষ্য করে এসব তাণ্ডব চলতে দেখা গেছে। বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ঢাকায় এসব ভবনে আগুন দেওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসকে যেতে দেওয়া হয়নি। এতে আগুনে পুড়েছে বিপুল সংখ্যক গাড়িসহ ভবনের জিনিসপত্র।
হামলাকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে দলবেঁধে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত সেতু ভবন, বিআরটিএ ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মত সরকারি স্থাপনায় একের পর এক হামলা করেছে।
পাঁচদিন পরও তাদের তাণ্ডবের সাক্ষী হয়ে রয়েছে বিসিএসআইআর, মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন, রামপুরা বিটিভি ভবন, যাত্রাবাড়ীতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোলপ্লাজা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা, মিরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়াম।
ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুরের পাশাপাশি বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়িতে দেওয়া হয় আগুন।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, সিটি করপোরেশনের নগর ভবন, নরসিংদীতে জেলা কারাগার এবং পৌরসভা ও ইউনিয়ন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আগুনে বিআরটিএর ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সংস্থাটির সেবা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন চালু করতে কতদিন লাগবে তা নিয়ে শঙ্কায় কর্তৃপক্ষ। অন্যান্য অফিসেও স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে এসব হামলা নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় সহিংস হামলায় ক্ষতির কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “বিটিভিতে আগুন দেওয়া হয়েছে, সেতু ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে, মহাখালী ডেটাবেজ স্টোরেজে হামলা-আগুন, মেট্রোরেলের স্টেশনে হামলা, শনির আখড়ায় হানিফ ফ্লাইওভাবের টোল বক্সে হামলা, পিবিআই অফিসে আগুন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে আগুন,এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় আগুন। নরসিংদীতে কারাগারে হামলা করে কয়েদিদের বের করে নিয়ে যাওয়া, কয়েকজনকে ধরা হয়েছে।”
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, আক্রমণগুলো পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। জঙ্গিরা যেভাবে আক্রমণ করে সেভাবে।
“ডেটা সেন্টার জালিয়ে দেওয়া হচ্ছে যেন ইন্টারনেট বন্ধ থাকে, দেশ অচল হয়ে যায়। কেপিআই ভবনে কারা আক্রমণ করে? ডেটা সেন্টার পুড়িয়ে দিয়েছে, বিটিভি জ্বালায়ে দিয়েছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বিটিসিএল ল্যান্ডলাইন জালিয়ে দিয়েছে, সেতু ভবন, দুযোগ ব্যস্থাপনা অধিদপ্তর, মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জ্বালিয়ে দিয়েছে। উন্নয়ন যেখানে হয়েছে সে জায়গায়গুলোয় আক্রমণ হয়েছে।”
কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলার সময় বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দফা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়। শুক্রবার হামলা করা হয় বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ে।
এ সময় বিআরটিএ ভবনের বিভিন্ন তলায় ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। লুট করা হয় মূল্যবান জিনিসপত্র। ভাঙচুর, আগুনে বিআরটিএর ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বিআরটিএর সব ধরনের সেবা বন্ধ হয়ে পড়েছে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবারের হামলায় বিআরটিএর কম্পিউটার, মনিটর, আসবাবপত্রসহ মূল্যবান মালামাল লুট করা হয়। আগুনে ভবনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং ভবনের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বিআরটিএ ভবনের ডেটা সেন্টার এবং মিরপুরে ভিআইসি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্রাহকসেবা চালু করা যাচ্ছে না।
“আমাদের সিস্টেমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় আমরা আপাতত গ্রাহকদের সেবা দিতে পারব না। লাইসেন্সগুলো প্রিন্ট হয় হেড অফিস থেকে, ফিটনেস সনদ দেওয়া হয় মিরপুর থেকে; সেখানে ভিআইসি (যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার যন্ত্র) ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের পক্ষে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। কবে নাগাদ চালু করতে পারব তাও এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।”
গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, ঘটনা তদন্তে বিআরটিএর ৭ সদস্যের একটি কমিটি করেছে। পাশাপাশি বনানী থানায় মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার মহাখালীতে সেতু ভবনের সামনে থাকা যানবাহন, ভবনের নিচতলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এসময় সেতু বিভাগের ৫৫টি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। সেতু ভবনের নিচতলায় থাকা বঙ্গবন্ধু কর্নার, অভ্যর্থনাকেন্দ্রে, মিলনায়তন, ডে-কেয়ার সেন্টার একেবারে পুড়ে গেছে। উপরের ফ্লোরগুলো পুড়েছে কম, তবে সেখানেও ক্ষতি হয়েছে। লুট করা হয়েছে ভবনের মূল্যবান জিনিসপত্র।
ওই ঘটনায় সেতু ভবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণসহ সার্বিক বিষয় তদন্তে অতিরিক্ত সচিব রাশিদুল হাসানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের কমিটি করেছে সেতু বিভাগ।
রাশিদুল হাসান সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেদিনের ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা হিসাব করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ব্যবহার উপযোগী কি না পরীক্ষা করতে সোমবার গণপূর্ত অধিদপ্তর, ডেসকোর প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। ওই দুটি সংস্থার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে সেতু বিভাগ। এছাড়া কোনো দলিল নষ্ট হয়েছে কি না তাও দেখা হচ্ছে।
“তারা হয়তো শিগগিরই আমাদের রিপোর্ট দেবেন। তখন জানা যাবে ভবনটি কবে থেকে ব্যবহার করা যাবে। বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে তাই ক্ষতির আর্থিকমূল্য এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। আমাদের কর্মকর্তারা যাচ্ছেন, দেখছেন যে গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র নষ্ট হয়েছে কি না। অফিস পুরোপুরি খুললে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে।”
ছাত্র আন্দোলনের সময় বৃহস্পতিবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও শনিবার মহাখালীর টোলপ্লাজায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ দুটি টোলপ্লাজা আপাতত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক এএইচএস আকতার।
মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, দুটি টোলপ্লাজার কম্পিউটার সিস্টেমসহ পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
“সেখানে কী কী জিনিস নষ্ট হয়েছে তা দেখছে আমাদের কর্মীরা। একটা অ্যাসেসমেন্ট করে দেখবে কী কী ক্ষতি হয়েছে। এরপর এগুলো সব রিপেয়ার করতে হবে। সে কারণে এখনও টাইমলাইন ঠিক করতে পারে নাই। ফলে ঠিক কবে এই দুটি টোলপ্লাজা চালু হবে বলা যাচ্ছে না।”
বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কয়েকটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ৩০ গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে ১৭টি গাড়ি। মশার ওষুধ ছিটানোর স্প্রে মেশিন, মশার ওষুধ নষ্ট করা হয়েছে, তুলে নেওয়া হয়েছে সড়কবাতি।
ঢাকা উত্তর সিটির উত্তরা এবং মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টার ভাঙচুর করা হয়েছে।
হামলায় ডিএনসিসির প্রায় ২০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত এতগুলো গাড়ি নষ্ট করে ফেলায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
“আমাদের কনটেইনারবাহী গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ২১টি হাইড্রোলিক লেডারের মধ্যে ৯টি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তাদের ব্যবহারের নয়টি এসইউভি পুড়িয়েছে। দুটি কমিউনিটি সেন্টার, রামপুরায় একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসে আগুন দিয়েছে তারা।”
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের মেকানিক্যাল বিভাগের গাড়িগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করছি। গাড়ি যেহেতু কম আমাদের শিফট বাড়িয়ে কাজ করব। মঙ্গলবারের মধ্যে সড়কে পড়ে থাকা বিভিন্ন বর্জ্য আমরা পরিষ্কার করে ফেলব।”
বৃহস্পতিবার বেলা ৪টার দিকে মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সামনে এবং বেইজমেন্টে থাকা যানবাহনে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে ওই ভবনেও আগুন ধরে যায়।
ওই হামলায় ৫৩টি গাড়ি ও ১৬টি মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ওই আগুনে ভবনের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, সার্ভার, ইমার্জেন্সি রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টার, অফিসের যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আমাদের অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভবনটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এটি কবে নাগাদ ব্যবহার করতে পারব তা জানতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা এসে টেস্ট করবে।”
আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার মধ্যে গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার পর মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে হামলা হয়।
এতে টিকেট বিক্রির মেশিন, কম্পিউটার, প্রিন্টার, সময়সূচীর মনিটর, ভেঙে ফেলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অ্যাকসেস কন্ট্রোল গেট।
ওই ঘটনায় শনিবার আট সদস্যের কমিটি করে দিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড।
শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দুটি স্টেশন পুনরায় সচল করতে আরও অন্তত এক বছর সময় লাগবে।
“যেসব যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশে নেই। এগুলো জাপান ও ইউরোপ থেকে আনতে হবে। এজন্য দরপত্র আহ্বান করত হবে। কেনার প্রক্রিয়া শেষ হলে এগুলো স্টেশনে সংযোজন করতে হবে।”
গত কয়েকদিনের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েকদিনের সহিংসতায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দিয়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গুলশানে ট্রাফিক উপকমিশনারের অফিস। এছাড়া এসি রমনা, রামপুরা, মহাখালী ও উত্তরা অফিস পুড়িয়ে দেও্য়া হয়েছে। এছাড়া পুরো ঢাকা শহরে মোট ৫৪টি ট্রাফিক পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ-বিসিএসআইআরে হামলা করে আন্দোলনকারীরা। এসময় অন্তত দুইশজন লোক প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। বিসিএসআইআর প্রাঙ্গণে থাকা আটটি গাড়ি ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের এডিটর ইসহাক মোল্লা মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় ২৫ মিনিট ধরে সেখানে তাণ্ডব চালানো হয়।
“তারা আমাদের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর করে, আমাদের সিকিউরিটি সিস্টেম ভেঙে ফেলে। আইএফএসটি এবং আইজিসিআরটি ভবনের মাঝখানে রাখা গাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সিকিউরিটি রুমে যা ছিল তা লুট করে নিয়ে গেছে। তবে ল্যাবরেটরিতে যায়নি।”
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত শুক্রবার কয়েক হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালায়। এ সময় কারাগারে আগুন দেয়, ভেতরে ঢুকে সেলের তালা ভেঙে দিলে নয় ‘জঙ্গি’সহ মোট ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে যায়। এ সময় কারাগার থেকে ৮৫টি অস্ত্র ও আট হাজারের বেশি গুলি ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। খাদ্যপণ্যও লুট করা হয়।
হামলার বর্ণনা দিয়ে নরসিংদী জেলা কারাগারের জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, “আক্রমণের সময় কয়েক হাজার হামলাকারী এসে প্রথমে কারাগারের মূল ফটক ভেঙে ফেলে এবং ভেতরের ফটক আক্রমণ করলে কারারক্ষীরা প্রথমে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রাণ বাঁচাতে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে।”
কোটা সংস্কারে দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে শুক্রবার ও শনিবার মাধবদী পৌরসভা, নরসিংদী সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস আগুন দেওয়া হয়। এতে চারতলা ভবনটি একেবারে পুড়ে যায়। গ্রাহকদের দেওয়ার জন্য তৈরি করা আট হাজার পাসপোর্ট পুড়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্দোলনকারীরা সরকারি স্থাপনাকে টার্গেট করে আক্রমন করেছে। নিরাপত্তাপ্রহরীদের বের করে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ৮ হাজার পাসপোর্ট তৈরি করা ছিল, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ঘটনায় আমরা দুই হাজার জনকে আসামী করে মামলা করেছি।”
বৃহস্পতিবার রাতে পিবিআইয়ের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়, শহরের দুই নম্বর রেলগেট পুলিশ বক্স, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে ভবনের ফ্রন্টডেস্ক, ভবনের সামনে রাখা কয়েকটি গাড়ি পুড়ে যায়। আলী আহমদ চুনকা নগর পাঠাগার ভাঙচুর করা হয়েছে। শনিবার শিমরাইল এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের একটি কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।