ঢাকায় শ্রম ভবনের সামনে এ নিয়ে বিক্ষোভ করেছ শ্রমিকরা।
Published : 15 May 2024, 11:53 PM
শ্রমিকদের বেতন না দেওয়ার অভিযোগে শ্রম ভবনে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের গাড়ি আটকে শ্রমিকদের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার দুপুরে শ্রম ভবনের সামনে শতাধিক শ্রমিক বিএনএস গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এন এইচ বুলুর গাড়ি আটকে রাখে পৌনে এক ঘণ্টা।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে গাড়িতে উঠছিলেন বুলু। এ সময় গাজীপুরের বড়বাড়িতে তার ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানি লিমিটেডের শতাধিক শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে।
বুলু গাড়িতে উঠতে ব্যর্থ হয়ে শ্রম ভবনে গিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর শরণাপন্ন হন। এরপর সেই কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহফুজুর রহমানকে শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় যুক্ত করা হয়। পরে রোববার দুপুরে চূড়ান্ত আলোচনার প্রস্তাব করা হলে শ্রমিকরা রাজি হন।
শ্রম ভবনে দুপুরে প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ আলোচনা সভা হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায় কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহফুজ।
বিএনএস গ্রপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান বুলু ন্যাশনাল কেমিক্যাল ছাড়াও সালনায় অবস্থিত এবিকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিক।
রেক্সিন প্লাস্টিক তৈরির কারখানা ন্যাশনাল কেমিক্যালের শ্রমিকরাই মূলত একজোট হয়ে বেতনের দাবিতে এই অবস্থান নেয়।
কারখানার শ্রমিক মো. ইজবারুল ইসলাম বলেন, “এই মালিক বারেবারেই শ্রমমন্ত্রীর লগে চুক্তি কইরাও ভঙ্গ করছে। একমাস পর পরে লে অফ লাগায়। আমাদের চার মাসের বেতন আটকা।
“টাকা না দেওয়ায় ছেলে-মেয়েরে স্কুল থেইকা বাইর কইরা দিছে, বাড়িওয়ালা বাসা থেইকা বাইর কইরা দিছে। দোকানদাররা আর বাকি দেয় না। আমরা যামু কনে এখন? আমরা কি মানুষ না? আমাদের কি খাইয়া-পইড়া বাঁইচা থাকার অধিকার নাই?”
মো. আলমগীর হোসেন নামে আরেকজন শ্রমিক বলেন, “২০২৩ সালের দুই মাসের উপরের বেতন বাকি। দিবে দিবে কইয়াও দেয় না।
“আমরা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেছি, আইসা দেখি ফ্যাক্টরিতে লে অফ লাগাইছে। অথচ এটা আইনগতভাবে সম্ভব না। বেতন না দিয়ে উনি বলতেছে জুলাইয়ের ১ তারিখ ফ্যাক্টরি খুলব। তাহলে আমাদের কী হবে? গত মাসের বেতনও পাই নাই।”
আলমগীর জানান, তাদের প্রস্তাব ছিল এক মাসের বেতন দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে। কিন্তু বুলু রাজি ছিলেন না।
“উনি আগামী মঙ্গলবার একটা মিটিং করার ব্যবস্থা করছে, এইভাবে বারবার সময় পিছায়। কিন্তু আমাদের শ্রমিকেরা খাবে কী? যাব কোথায়? দোকানদারেরা টাকা না দিলে বাইন্ধা রাখে। আমরা এখন না খেয়ে দিন পার করতাছি। বাড়িওয়ালা বাড়ি থেইকা বাইর কইরা দিছে। এইভাবে চলা যায়?”
দুই কারখানায় ২২০ জনের মত বেতন পাচ্ছেন না বলে জানান শ্রমিকরা।
কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, “আমি উপরে গিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের উপস্থিতিতে মালিকের সঙ্গে আলোচনা করছি। সেখানে রোববার আবার মিটিং করা হবে বলেছে। তাই আমরা রোববার পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। রোববার সমাধান না হইলে কঠোর অবস্থানে যাওয়া হবে।”
ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজার এবি সিদ্দিক বলেন, “শ্রমিকদের ২ মাস ১৯ দিনের টাকা বকেয়া আছে। এটা নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে।
“মূলত অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ফ্যাক্টরি বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও কেমিক্যালের সংকট আছে। আরও কিছু বিষয় মিলিয়ে ফ্যাক্টরি লে অফ রাখা হয়েছে। আমাদের ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে শ্রম মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ সহকারে বলা হয়েছে এই সংকট কাটাতে যাতে ব্যাংক থেকে লোন নিতে একটু সুপারিশ করে। আমাদের আশ্বস্ত করেও সুপারিশ করেনি, তাই লোনও পাওয়া যায়নি। এজন্য এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সময় লাগছে।”
এ বিষয়ে বিএনএস গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এন এইচ বুলুর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি।
শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে তিনি দ্রুততার সঙ্গে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে ফোন করলেও ধরেননি।
কারখানার পরিচালক আব্দুর সাত্তার বলেন, “ফ্যাক্টরির নানা সংকট তৈরি হয়েছে। যন্ত্রপাতিতে একটু সমস্যা আছে। অন্যান্য কোম্পানির যন্ত্রে ঘণ্টায় প্রডাকশন হয় ৫০০ মিটার, আমাদেরটায় হয় ১০০ মিটার।
“বিদেশ থেকে প্রকৌশলী এনে যন্ত্রপাতির কাজ করাতে হবে। আর চলতি মূলধন পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকঠাক মত। ফ্যাক্টরি চালিয়ে মাসে ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা লোকসান হচ্ছে। শ্রমিকদের বেতনের বিষয়ে রোববার মিটিং করে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।”