সন্তানকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ায় শিশুটির বাংলাদেশি বাবাকে জামিন দিয়েছে আদালত।
Published : 06 Nov 2023, 01:06 PM
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ৫ বছরের ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদ। তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
একই সঙ্গে সন্তানকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ায় শিশুটির বাংলাদেশি বাবা শাহিনুর টি আই এম নবীকে জামিন দিয়েছে আদালত।
সোমবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
শিশুটির মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও কাজী মারুফুল আলম। বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুন্সি মনিরুজ্জামান।
সাদিকার আইনজীবীরা সাংবাদিকদের জানান, ভারতের একটি ম্যাচ মেকিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে হায়দরাবাদের সাদিকা সাঈদ শেখকে বিয়ে করেন ঢাকার বারিধারার ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান শাহিনুর টি আই এম নবী। সাদিকা হায়দরাবাদের এক মুসলমান পরিবারের সন্তান।
২০১৭ সালে হায়দরাবাদে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। এরপর তারা মালয়েশিয়ায় বসবাস শুরু করেন। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন।
এর মধ্যে ২০১৮ সালে এ দম্পতির এক ছেলের জন্ম হয়। এক পর্যায়ে তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। তখন শাহিনুর ‘মারধর’ করেন এবং ভারতের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন বলে সাদিকার অভিযোগ।
বিষয়টি ভারতে তার আত্মীয়-স্বজন জানতে পারলে তাদের পরিবার বিষয়টি ভারতীয় হাই কমিশনে জানায়। কিন্তু তাতে সমাধান না হওয়ায় সাদিকার বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান।
২০২১ সালের ৮ অগাস্ট সাদিকা শেখ এবং তার শিশু সন্তানতে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করে ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) পরিচালক আইনজীবী কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী।
হাই কোর্টে মামলা করার পরপরই শাহিনুর টি আই এম নবী স্ত্রী সাদিকা সাইদকে তালাক দেন।
আইনজীবীরা জানান, ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর সাদিকা সাঈদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তিন বছরের শিশুসন্তানকে নিয়ে বাবা শাহিনুর টি আই এম নবীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট। শিশুকে নিয়ে বাবা শাহিনুর যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
২০২১ সালের ২৫ অগাস্ট হাই কোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখার আদেশ দেয়।
আদেশে বলা হয়, মা ও শিশু মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) ব্যবস্থাপনায় থাকবে। তবে বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিন দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এ দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।
সাদিকার আইনজীবী জানান, হাই কোর্টের আদেশের পর শিশুটির বাবা তার সন্তানকে উন্নত পরিবেশে গুলশান ক্লাবে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শিশুর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে তারাও রাজি হন। গুলশান ক্লাবেই মা ও শিশু অবস্থান করছিলেন।
এক পর্যায়ে তিন বছরের ওই শিশুকে বেড়ানোর কথা বলে গুলশান ক্লাব থেকে নিয়ে যান বাবা শাহিনুর। পরে আর মায়ের কাছে দিয়ে যাননি। এর মধ্যে শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে জিডি ও মামলা করেন শাহিনুর।
বিষয়টি হাই কোর্টের নজরে আনা হলে শিশুটিকে আদালতে হাজির করতে বলা হয়। কিন্তু আদালতের সে আদেশ প্রতিপালন করা হয়নি।
আইনজীবী কাজী মারুফুল আলম বলেন, এ ঘটনায় শাহিনুরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হলে হাই কোর্ট তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়। পাশাপাশি লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সম্প্রতি শাহিনুর দেশে ফিরে এসে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। পরে তিনি আপিল বিভাগে জামিন আবেদন করেন। সেই আবেদনে শিশুটিকে মায়ের কাছে ফেরত দেওয়ার শর্তে আপিল বিভাগ তাকে জামিন দিল।
জামিন পেলেও শাহিনুরের জরিমানার আদেশ বহাল রয়েছে বলে জানান আইনজীবী মারুফুল আলম।
শিশুটির মা সাদিকা সাঈদ সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশের আদালত ও প্রধান বিচারপতির কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার আইনজীবীদের কাছেও কৃতজ্ঞ। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি।”