ফুটপাতে হেঁটে চলার সময় মাথায় ব্লক পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। এমন ঘটনা বিরল নয়। প্রায়ই গণমাধ্যমে আসে এমন খবর। কিন্তু শাস্তির উদাহরণ নেই।
Published : 25 Jan 2024, 12:56 AM
ভবন নির্মাণের সময় উদাসীনতায় নির্মাণ উপকরণ ছিটকে পথচারীদের মৃত্যুর পর যে মামলাগুলো হয়, তাতে দায়ীরা কি আদৌ শাস্তি পায়?
এক যুগ আগে বেশ আলোচিত একটি ঘটনায় মামলা হলেও ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হয়েছিল একটি পরিবার, অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল ক্ষতিপূরণ ও মামলা আলাদা বিষয়।
সাত বছর আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুশয্যায় যাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক সহায়তা দিয়ে পার পেয়েছে আরেকটি ভবনের মালিক। তবে যে টাকা তিনি দিয়েছেন, পরিবারটির খরচ হয়েছে তার তিন গুণ।
দুই বছর আগে নারায়ণগঞ্জে একটি ঘটনায় সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করে চার জনের নামে যে মামলা করা হয়েছিল, তার তিন জনকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলার বাদী বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তার পরিবার নারাজি দেওয়ার পর পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই আবার তদন্ত করেছে। তবে পরিবার জানে না কী প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
গত ১০ জানুয়ারি ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ভবন থেকে মাথায় কংক্রিটের স্ল্যাব পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা দিপু সানার মৃত্যুর পর মানুষের এই নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা করেছেন তার স্বামী তরুণ কুমার বিশ্বাস।
তদন্তে কী পাওয়া গেল- এই প্রশ্নে রমনা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ঘটনায় একটা হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
“একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি ভবনের উপর থেকে একটি ইট পড়েছে। তবে ইটটি ওই ভবন থেকে পড়েছে নাকি পাশে থাকা ফ্লাইওভার থেকে পড়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটা নিশ্চিত হতে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।”
আইন বলছে, ভবন নির্মাণের সময় উপকরণ ছুটে যেন কারো আঘাত না লাগে, তাই নিরাপত্তামূলক যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি না নেওয়া হয় এবং কারো আঘাত বা মৃত্যুও হয়, তাহলে শাস্তি কী, সেটি আইনে আলাদা করে উল্লেখ করা নেই।
বেশিরভাগ ঘটনাতেই নির্মাণাধীন ভবন থেকে উপকরণ বা ইট পড়ার যে-সব খবর আসে, সেখানে ভুক্তভোগীদের হাসপাতাল থেকে বেঁচে ফেরার উদাহরণ খুবই কম।
এসব ঘটনায় মামলার তথ্য আসে গণমাধ্যমে, কিন্তু এরপর আর কী হয়েছে, তা জানা যায় না।
সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, চিকিৎসক বা গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগের মামলা হয়, এরকম মামলা তাদের হাতে আসে। তবে কোনো ভবন মালিকের বিরুদ্ধে এমন মামলার তথ্য জানা যায় না।
হাবিবুরের পরিবার কি ন্যায়বিচার পেয়েছে?
২০১১ সালের ১৬ জুলাই অসুস্থ মাকে হাসপাতালে দেখে ফেরার পথে পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালের সামনে একটি নির্মাণাধীন ১৮তলা ভবন থেকে ইট পড়ে মারা যান তেজগাঁও কলেজের ছাত্র হাবিবুর রহমান।
ওই ঘটনার পর হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।
নির্মাতা কোম্পানি সাগুফতা গ্রুপের চেয়ারম্যান, রাজউকের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয় আদালত।
সেই ক্ষতিপূরণ পরিবারটি পেয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নে তেজগাঁও কলেজের কর্মকর্তা, শিক্ষক ও সে সময়ের ছাত্র সংগঠনের নেতারা কিছু জানাতে পারেননি।
কলেজ ছাত্রলীগের সে সময়ের সভাপতি আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হ্যাঁ, একজন ছাত্র মারা গিয়েছিল। তবে তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পরে পেয়েছিল কি না, মামলার কী হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো তথ্য আমরা পরে জানতে পারিনি।”
শেরেবাংলা নগর থানার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা যতটা জেনেছি, হাবিবুরের পরিবার টাকাটা পেয়েছিল।”
তবে হাই কোর্টের আদেশে এও ছিল যে, এই ঘটনায় মামলাটি চলবে।
শেরেবাংলা নগরের পুলিশ কনস্টেবল সাইদুর রহমান জানান, ২০১১ সালের ১৬ জুলাই মামলাটি হয়। ২০১২ সালের ১৫ মার্চ সেটি নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
আখিদুল পেলেন ৫ লাখ, চিকিৎসায় গেছে তিন গুণ
রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে চলার সময় নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে ছুটে আসা ইটের আঘাত আখিদুল ইসলামের জীবনের গতি ধীর করে দিয়েছে।
সাড়ে সাত বছর আগে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিংয়ের ৭ নম্বর সড়ক দিয়ে চলার সময় ১/বি নম্বর বাড়ি থেকে ইট তার মাথায় আঘাত হানে। তখন তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ বা ইউডায় চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। এখনো তিনি পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি।
আঘাত এত গুরুতর ছিল যে, তার জীবন নিয়েই শুরু হয় টানাটানি। নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র বা আইসিইউতে কাটাতে হয় বেশ কিছুদিন। পরে বেঁচে ফিরলেও পাল্টে যায় জীবন। পুরা একটি বছর থাকতে হয় বিশ্রামে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া যায়নি। যে কারণে এখনও তার পরিচয় মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র।
তার বড় বোন নাসরিন হোসেন সে সময় মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ করেছিলেন। বাড়ির মালিক মো. মোশাররফ হোসেন ও তার ছেলে ফয়সালকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে চিকিৎসায় আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
তাৎক্ষণিক চিকিৎসায় খরচ হওয়া লাখ পাঁচেক টাকা আখিদুলের পরিবারকে দেওয়াও হয়েছিল। কিন্তু এই তাৎক্ষণিক ধাক্কার পর খরচ হয়েছে আরো আট লাখের মত। সেই অর্থ আর পাওয়া যায়নি ভবন নির্মাতার কাছ থেকে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আখিদুল বলেন, “আমার চিকিৎসায় শুধু হাসপাতালেই খরচ হয়েছিল ১৩ লক্ষ টাকা। এর পরে ধাপে ধাপে আরও অনেক টাকা গেছে। এত বছর হয়ে গেছে এখনো টাকা লাগছেই।
“সেই সময় ৫ লাখ দেওয়ার পর বলেছিল আরও দেবে, কিন্তু এরপর একবার ৫ হাজার টাকা দিয়েছে। আমার পরিবার বলেছিল, কোনো ক্ষতিপূরণ বা জরিমানা নয়, কেবল চিকিৎসার খরচ দিলেই হবে। কিন্তু তারা তা করেনি। এখন মাঝে মাঝেই আমার মাথা ব্যথা করে। হাতে টাকা নাই বলে ডাক্তারও দেখাতে পারছি না।”
এ ঘটনায় পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।
আখির শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা চৌধুরী বলেন, “যখন এই দুর্ঘটনা ঘটে তখন তাদের ব্যাচে আমার কোর্স চলছিল। এরপর তাকে তিনটা সেমিস্টার ড্রপ দিতে হয়েছিল। দুর্ঘটনার পরে তার একাডেমিতেও অনেক প্রভাব পড়েছিল। তার দৃষ্টিশক্তি, স্মৃতি শক্তিতেও বেশ প্রভাব পড়েছিল বলে আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।”
যে ভবন থেকে ইট পড়ে আখিদুল আহত হয়েছিলেন, সেই ভবনের মালিক মোশাররফ হোসেন কিছুদিন পর মারা যান।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফের বড় ছেলে মনির হোসেন ফারুক বলেন, "আমরা যথেষ্ট প্রটেকশন ব্যবহার করেই বাড়ি নির্মাণ করছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটা ইট বাঁশের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে ছিটে গিয়ে তার মাথায় পড়ে। আমরা তাকে (আখিদুল) হাসপাতালে নেই। তার পরিবার আমাদের কাছে চিকিৎসা বাবদ ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল, তখনই পুলিশের উপস্থিতিতে টাকা দিয়ে মীমাংসা হয়। তার বড় বোন স্ট্যাম্পে সইও করে।"
আসামিদের খালাস দিয়ে প্রতিবেদন, বাদীর নারাজি
২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের জাহানারা বেগম বেবী তার নাতিকে স্কুলে দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। তার সেই পথ আর শেষ হয়নি।
চাষাঢ়া বাগের জান্নাত এলাকার মিশনপাড়ায় নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন থেকে লোহার শাবল পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জাহানারার।
এই ঘটনায় ভবনের মালিক তোতা মিয়া, ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সানরাইজ ডেভেলপার লিমিটেডের মালিক আমান উল্লাহ, নির্মাণ শ্রমিক সানা উল্লাহ ও মো. সারোয়ারকে আসামি করে মামলা করেন জাহানারার ছেলে জিহাতিল জাহান। পুলিশ গ্রেপ্তার করে দুই শ্রমিককে।
কিন্তু পুলিশ তোতা মিয়া, সানা উল্লাহ ও সারোয়ারকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরে নারাজি দেন জিহাতিল।
জাহানারার দেবর আসাদুজ্জামান খান রিংকু জানান, জিহাতিল পড়াশোনার জন্য এখন পর্তুগালে আছেন।
রিংকু বলেন, “আপস মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছিল নির্মাতা কোম্পানি। কিন্তু তার পরিবার রাজি হয়নি। মামলাটি এখন জাহানারার মেয়ে ও তার স্বামী মোহাম্মদ রিয়াদ দেখছেন।”
জাহানারার জামাতা রিয়াদ বলেন, “মামলার ছয়-সাত মাস পর পুলিশ আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে চার্জশিট দিয়েছিল, তাতে তারা নারাজি দিয়েছেন। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তভার পায় পিবিআই। পিবিআইও সম্প্রতি মামলাটির চার্জশিট জমা দিয়েছে। তবে এখনো তা দেখতে পারিনি। দেখে ব্যবস্থা নেব। আমরা আশা করি সুষ্ঠু বিচার পাব।”
আইনে কী আছে?
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ১৭ ধারায় বলা আছে, নির্মাণ স্থলে ও তার চার পাশে প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এর ব্যাখ্যায় বলা হয় “যদি নির্মাণকাজ কোনো রাস্তায় বা স্থানে জনসাধারণের জন্য বাধা-বিপত্তি অথবা অসুবিধা সৃষ্টি করে, তাহলে আবেদনকারী কর্তৃক সেই স্থানে অস্থায়ী ঘের, জীবন রক্ষাকারী বাধা এবং বিকল্প চলাচল পথ তৈরি করে জনসাধারণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
তবে এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করলে কারো মৃত্যু হলে কী হবে, সেই বিষয়ে আইনে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো শাস্তির কথা বলা নেই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অবহেলাজনিত হত্যায় বাস-ট্রাক চালক ও চিকিৎসকদের মামলার ফাইল আমরা দেখি। তবে ভবন নির্মাণে মালিকদের অবহেলাজনিত মৃত্যুর শাস্তি এখনো আমার নজরে আসেনি।”
অবহেলাজনিত মৃত্যু হলে অন্য আইনে দণ্ডের বিধান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ডিএমপি অ্যাক্টে অনেক ধরনের শাস্তি আছে। বিল্ডিং কোড কতটা মানা হয়েছে সেখানেও শাস্তির বিধান রয়েছে। বড় কথা হচ্ছে আইনের প্রয়োগ, ক্ষতিপূরণ চাওয়ার জায়গাটা। কিছু বিষয় উচ্চ আদালতে আসছে, এটা অগ্রগতি হচ্ছে।”
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পর মামলা আর না আগানোর যে তথ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পেরেছে, সে বিষয়ে জানতে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এই আইনজীবী বলেন, “ভুক্তভোগী বা তার পরিবার যদি মেনে নেয়, তাহলে আসলে কিছু করার থাকে না।
“তবে রাষ্ট্রেরও দায়দায়িত্ব আছে। পুলিশকেও এখানে এগিয়ে আসতে হবে। না হয় ভুক্তভোগী মেনে নিল, ১৫ লাখের জায়গায় ৫ লাখ নিল। কিন্তু যে কারণে এমন হল, রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেই কারণটা বের করা। পাশাপাশি শাস্তির আওতায় আনা উচিত।”
মৃত্যু কম নয়
নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট পড়ে মৃত্যুর খবর প্রায়ই আসে সংবাদমাধ্যমে। তবে কোনো সংস্থা হিসাব রাখে কি না, সেই তথ্য জানা যায়নি।
২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি
মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের জোনাকি রোডে একটি চার তলা ভবনে ছাদ থেকে ইট পড়ে খালার কোলে থাকা ১৬ দিনের শিশু আবদুল্লাহর মৃত্যু হয়।
২০২০ সালের ১১ মার্চ
কামরাঙ্গীরচর দক্ষিণ মুন্সীরহাট এলাকায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মাথায় ইট পড়ে মারা যান রাশিদা আক্তার। এক ছেলে ও এক মেয়ের মা ছিলেন তিনি।
কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি এ বি এম মশিউর রহমান সে সময় জানান, বাড়িটি অনেক পুরনো। ছাদের রেলিংয়ের তিনটি ইট খসে পড়ে এ ঘটনাটি ঘটে।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে মাথায় ইট পড়ে সামিউল ইসলাম নামে তিন বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। সেদিন দুপুরে সামিউল তাদের বাড়ির নির্মাণাধীন ভবনের পাশে খেলা করছিল। এ সময় ছাদ থেকে তার মাথায় একটি ইট এসে পড়ে। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান, মাথায় প্রচণ্ড আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে।
২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি
রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়া ইটের আঘাতে মারা যান পথচারী শিউলি আক্তার।
তিনি ক্ষুদ্র ঋণদাতা একটি এনজিওতে কিস্তি তোলার কাজ করতেন। সেদিন কিস্তি তুলে ফেরার সময় নির্মাণাধীন তিনতলা একটি বাড়ি থেকে একটি ইট তার মাথায় পড়ে।
একই দিন যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়ায় পশ্চিম মোমিনবাগের বাসা থেকে পোশাক শ্রমিক রুনা আক্তার যাচ্ছিলেন কর্মস্থল মোল্লা গার্মেন্টসে। কিন্তু নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ওপর থেকে মাথায় ইট পড়ে মৃত্যু হয় তার।
২০২১ সালের ২৭ অগাস্ট
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার শেখদী এলাকায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে মাথায় ইট পড়ে মৃত্যু হয় হনুফা বেগম নামে একজনের।
সেদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্বামী মো. লিটনকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় উঁচু থেকে উড়ে আসা ইট থামিয়ে দেয় তার জীবন।
২০২১ সালের ৩ অক্টোবর
কলাবাগান এলাকায় নির্মাণাধীন আট তলা ভবনের ওপর থেকে ইট পড়ে ছয় বছরের শিশু জান্নাত আক্তার আরিফার মৃত্যু হয়। তার বাবা ওই ভবনেই কাজ করতেন। মেয়েটি তার বাবার সঙ্গে সেখানে গিয়ে ভবনের নিচে খেলছিল।
২০২২ সালের ২০ এপ্রিল
কলাবাগানের গ্রিনরোডে খাজা হোটেলের ছয় তলা নির্মণাধীন ভবনের উপর থেকে মাথায় ইট পড়ে শফিকুল ইসলাম নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। তার সঙ্গে আহত হন এনামুল ইসলাম নামে একজন। এ বিষয়ে সে সময় কলাবাগান থানায় মামলা হয়।
২০২২ সালের ৩০ মে
মিরপুরের পল্লবীতে মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণাধীন স্টেশনের দেয়াল থেকে পড়া ইট মাথায় লেগে এক পথচারীর মৃত্যু হয় সোহেল তালুকদার নামে এক পথচারীর। মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের শাহ আলী শপিং কমপ্লেক্সের চতুর্থ তলার সিরাজ জুয়েলার্সে কাজ করতেন তিনি। সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন।
মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরে পল্লবী এলাকায় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার মেট্রোরেলের ৫ নম্বর স্টেশনের ২০৩ নম্বর পিলারের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানায় পুলিশ।
২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর
মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যানের নবোদয় হাউজিংয়ের ৪ নম্বর রোডের একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট পড়ে মারা যায় নবম শ্রেণি পড়ুয়া নাম রবিউল ইসলাম জিহাদ।
২০২৩ সালের ১৯ মার্চ
যশোরের চৌগাছায় ভবন থেকে ইট পড়ে মারা যায় সাত বছরের শিশু শ্রেয়া বালা। তার পিতা শংকর কুমার বালা ভবন মালিকসহ ৫ জনের নামে মামলা করেন।
এ ঘটনায় ভবনের মালিক জিল্লুর রহমান ও মিস্ত্রি রেজাউল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
২০২৩ সালের ১৭ জুন
মাদারীপুর পৌরসভার থানতলী এলাকায় একটি ভবনের ঢালাইয়ের ইট মাথায় পড়ে তানভীর হাওলাদার নামে ২৮ বছর বয়সী এক যুবকের। বাড়িটি তাদেরই ছিল।
তার বাবা মজিবুর হাওলাদারের বাড়ির একতলা ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছিল। সেদিন বিকেলে তার ছেলে তানভীর ঢালাইয়ের অস্থায়ী কাঠামোর বাঁশ সরাতে গেলে ইটসহ ঢালাইয়ের অংশটি তার মাথার ওপরে পড়ে।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি সৌরভ হোসেন সিয়াম।]
আরো পড়ুন:
দীপু সানার মৃত্যু: কংক্রিটের ব্লক এল কোথা থেকে?
মাথায় কংক্রিটের ব্লক পড়ে মৃত্যু: তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন