ছয় সদস্যের এই টাস্কফোর্স আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি উত্তরণের জন্য সুপারিশ করবে।
Published : 11 Sep 2024, 07:24 PM
ঋণ কেলেঙ্কারি ও খেলাপি ঋণে ন্যুব্জ ব্যাংকিং খাত সংস্কারে ছয় সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নেয় বলে সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পরিচালক ও সহকারী মুখপাত্র মহুয়া মহসীন।
টাস্কফোর্সে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ (রুমি) আলী, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহরিয়ার এম হাসান, বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সাইন্সের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এম জুবায়দুর রহমান এবং নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির সাব্বির আহমেদ।
এই টাস্কফোর্স কী কী করবে, সে বিষয়ে একটি তালিকা দেওয়া হলেও কত দিনে কাজগুলো করা হবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
এই প্রশ্নে টাস্কফোর্সের সদস্য জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও সেটা বলতে পারছি না। আগে কাজ শুরু করার পর বলা যাবে”
কীভাবে কাজগুলো করা হবে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রজ্ঞাপনে যা নির্দেশনা দেওয়া আছে সেই মোতাবেক কাজ করা হবে। নির্দেশনায় যা বলা আছে সেই সকল নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হবে।"
যা করা হবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, এ টাস্কফোর্স আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ব্যাংকিং খাতের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি, মন্দ সম্পদ এবং প্রধান প্রধান ঝুঁকিসমূহ নিরূপণ, দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক পর্যালোচনা, ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ, প্রভিশন ঘাটতি নিরূপণ করবে।
এছাড়া তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নিট মূলধন নির্ণয়, সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মন্দ সম্পদকে পৃথকীকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সংকটকালীন প্রতিঘাত সক্ষমতা অর্জনে ব্যাংকের সুশাসন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ প্রক্রিয়ার আওতায় রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক উন্নয়ন, ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক এবং করপোরেট প্রভাব সীমিত করা, ব্যাংকের মালিকানা সংস্কার ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রদান, সংকটে থাকা ব্যাংকের জন্য রিকভারি এবং রেজুলেশন ফ্রেমওয়ার্ক ও সংশ্লিষ্ট গাইডলাইন প্রস্তুত করা, দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য বিভিন্ন নীতিগত ব্যবস্থা/পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
টাস্কফোর্স আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন যেমন ব্যাংক কোম্পানি আইন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ইত্যাদি সংস্কার এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি, ব্যাংক অধিগ্রহণ, একীভূতকরণ আইন প্রণয়ন, সংস্কার ও যুগোপযোগী করার প্রস্তাব দেবে, পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
টাস্কফোর্সের সার্বিক কার্যাবলী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সমন্বয় করবেন।
দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংক খাত নিয়ে আর যেসব উদ্যোগ
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বারবারই খেলাপি ঋণ ও ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর চট্টগ্রামকেন্দ্রিক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায়।
চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। তিন মাসে তা বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশই এখন খেলাপি হয়ে গেছে।
তিন মাসে আগে মার্চ শেষে বিতরণ ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল খেলাপি, ডিসেম্বরে তা ছিল ৯ শতাংশ।
সরকার পালাবদলের পর ব্যাংকিং খাতে সংস্কার শুরু হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, দুই ডেপুটি গভর্নর, পলিসি উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউর প্রধান পদত্যাগ করেন।
এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব নেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে দীর্ঘদিন কাজ করা আহসান এইচ মনসুর। এক মাসের মধ্যে বেসরকারি ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এস আলম গ্রুপের হাতে আর কোনো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেই।
তবে তারল্য সংকটে পড়েছে ইসলামী ধারার বেশ কয়েকটি ব্যাংক। চাহিদা মোতাবেক নগদ টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না গ্রাহকরা।
গভর্নর জানিয়েছেন, এসব ব্যাংকে কোনো রকম তারল্য সুবিধা দেওয়া হবে না। তবে আন্তঃব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে।