মাসুদুর রহমান শুভ্র ২০২০ সালের গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী ছিলেন।
Published : 10 Oct 2022, 12:01 PM
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান শুভ্র হত্যা মামলায় স্থানীয় বিএনপি নেতা রিয়াদ উজ্জামান রিয়াদসহ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
এ মামলার ১৯ আসামির মধ্যে তিনজনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড; আর গৌরীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামসহ বাকিরা বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মনির কামাল সোমবার আসামিদের উপস্থিতিতে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
ইউসিসিএ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান শুভ্র ২০২০ সালের গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী ছিলেন। ওই বছর ১৭ অক্টোবর পৌর শহরের পানমহালে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন: গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির একাংশের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রিয়াদ উজ্জামান রিয়াদ, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মোজাম্মেল হক, খাইরুল ইসলাম, গৌরীপুর পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাকিব আহমেদ রেজা, যুবদলকর্মী মাঈন উদ্দিন, শরীফুল ইসলাম নাঈম ও রুহুল আমিন।
সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে রায়ে।
এছাড়া বিএনপির মাসুদ পারভেজ কার্জন, ছাত্রদলকর্মী শরীয়তউল্লাহ ওরফে সুমন, যুবদলকর্মী রাসেল মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় গৌরীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, সৈয়দ তৌফিকুল ইসলাম, সৈয়দ মাজাহারুল ইসলাম জুয়েল, ছাত্রদলকর্মী রিফাত, মো. আবু হানিফা, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, যুবদলকর্মী মজিবুর রহমান, কামাল মিয়া, শাজাহান মিয়াকে খালাস দেওয়া হয়।
রায় শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিদের মধ্যে দণ্ডিত কয়েকজন এবং তাদের আত্মীয়রা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শুভ্রর ভাই, মামলার বাদী আবিদুর রহমান প্রান্ত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ রায়ে তিনি সন্তুষ্ট নন।
“মামলায় হুকুমের আসামি (মূল আসামি) মেয়র রফিকুল ইসলাম, তার দুই সহোদর খালাস পেয়েছেন। মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে তাদের খালাস পাওয়ার কথা নয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান বলেন, তারাও এ রায়ে ‘পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন’।
তার দাবি, রফিকুল ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে ‘সাজা হওয়ার মত উপাদান’ এ মামলায় ছিল।
আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তার দুজনকে এদিন কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা বাকি ১৭ জনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মধ্যবাজার পান মহালে রাত ১০টার দিকে শুভ্রকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়
ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। শুভ্রর ছোটভাই আবিদুর রহমান প্রান্ত বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তখনকার ওসি মো. শাহ কামাল আকন্দ ২০২১ সালের ৫ মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এজাহারের ১৪ জনের পাশাপাশি আরও ৫ জনকে সেখানে আসামি করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান জানান, রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় ১৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন ৯ জন।
দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ৬ অক্টোবর বিচারক রায়ের জন্য ১০ অক্টোবর দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন।