সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক বসানোর প্রস্তাবকে ‘যুগান্তকারী; আখ্যা দিয়ে নিলুফার আনজুম বলেন, “এটি একটি মহৎ সিদ্ধান্ত।”
Published : 12 Jun 2024, 12:06 AM
প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা হিসেবে পরিচিত অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে, সেটিকে ’অনৈতিক’ হিসেবে তুলে ধরলেও সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্য তলানিতে থাকা পুঁজিবাজার টেনে তুলতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চেয়েছেন।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন দাবি তোলেন জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ।
এ দিন থেকেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংসদ সদস্যদের সাধারণ আলোচনা শুরু হয়েছে।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে নূর মোহাম্মদ বলেন, অতীতেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল। সরকার কর ফাঁকিদাতাদের বিশেষ সুবিধা দিলেও সৎ করদাতাদের সঙ্গে বৈষম্য করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বৈষম্যমূলক ও অনৈতিক।
পুঁজিবাজারে টানা পতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গত দুই মাস দেখা যাচ্ছে বাজার একেবারে তলানিতে। এটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যা নিয়ে বলার কোনো উপায় নেই। এখানে অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখতে পারতেন।
“আমি অনুরোধ করছি, যদি সম্ভব হয় শেয়ারবাজারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার জন্য।”
একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের কর প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।
বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা না হলেও শেয়ারবাজারে আগে থেকে কালো টাকা বিনিয়োগ করা থাকলে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে তা বিনাপ্রশ্নে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ করের প্রস্তাব প্রসঙ্গে নূর মোহাম্মদ বলেন, “এটি অর্থমন্ত্রীকে পুনর্বিবেচনার আবেদন করব। আমরা নতুন সংসদ সদস্য। এটা করতে পারেন যারা বিগত দিনে সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে, আমাদের (প্রথমবার নির্বাচিত) ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। অথবা না করলেই হয় না, এমন শুল্ক ধরে দিতে পারেন।”
সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবু জাহিরও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার পক্ষে তার যুক্তি তুলে ধরে বিএনপি আমলে এ ধরনের পদক্ষেপের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
তিনি বলেন, “বিএনপির আমলে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান নিজেই কালো টাকা সাদা করেছিলেন, এমনকি তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও কালো টাকা সাদা করেছিলেন। বিএনপি ও এরশাদের আমলে বাজেট ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাত। এখন সেটা হয় না; এখন মানুষ উল্লাস দেখায়।”
কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আগেও ছিল দাবি করে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ নিলুফার আনজুম বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। বাজেটে এটা নতুন কিছু নয়। পঁচাত্তরের পর থেকে শুরু; ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সাদা করা হয়।
স্যানেটারি ন্যাপকিনে ভর্তুকি দিলে বাজেট আরও ‘মানবিক’ হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক বসানোর প্রস্তাবকে ‘যুগান্তকারী; আখ্যা দিয়ে নিলুফার আনজুম বলেন, “এটি একটি মহৎ সিদ্ধান্ত।”
এইচএম ইব্রাহিম বলেন, শ্রমিকদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য অন্যতম হল আবাসন নিরাপত্তা। এ ক্ষেত্রে বড় বড় বেসরকারি কল-কারখানাগুলোর আবাসন ব্যবস্থায় অনীহা লক্ষ্য করা যায়। ফলে কর্মীরা তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখাতে পারে না।
বেসরকারি কলকারখানায় আবাসন ও বাধ্যতামূলক নিয়োগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করতে শ্রমমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। এ ছাড়া রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো ভ্যাট-ট্যাক্স দেয় কি না, অর্থমন্ত্রীর কাছে তা জানতে চান এ সংসদ সদস্য।
প্রস্তাবিত বাজেটের প্রশংসা করে কাজী কেরামত আলী বলেন, “খেলাপি ঋণ আদায়ে মনোযোগ দিতে হবে। অনেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করেন। এ দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।”