“সরকার প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী দুর্নীতি, হত্যা, গুমের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু তারপরেও একজন নিরীহ কর্মীর এই দেশে বাঁচার অধিকার রয়েছে।”
Published : 07 Aug 2024, 10:52 PM
দেশে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, মানুষে কথা বলার অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া, জনবান্ধব ও পেশাদার পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠাসহ আসন্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ১০টি দাবির কথা ফেইসবুক লাইভে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের পতনের পর দেশে এক নৈরাজ্য পরিস্থিতিতে বুধবার এই ফেইসবুক লাইভে আসেন ২০০৯ সালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ পেয়েও সরকার ও দল থেকে সরে যাওয়া এই নেতা।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ৬ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের বক্তব্যের শুরুতেই তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা দিয়ে ছাত্র জনতার উপর গুলি না চালানো আহ্বানে সোচ্চার থাকার কথা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন পুড়িয়ে দেওয়া, তার ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়ার নিন্দাও জানান সোহেল তাজ। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নির্বিচারে হামলা নিয়েও কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ থেকে সরে যাওয়া এই নেতা বলেন, “চারদিকে এক থমথমে অবস্থার মধ্যে কীভাবে আমরা বসবাস করব?
“দেশের নানা প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষদের মন্দির, গির্জায় আগুন দেওয়া হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক মানুষ নিহত আর আহত হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রয়েছে। তাদেরও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অনেক নিরীহ কর্মী প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে।
“সরকার প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী দুর্নীতি, হত্যা, গুমের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু তারপরেও একজন নিরীহ কর্মীর এই দেশে বাঁচার অধিকার রয়েছে।”
১০ দাবি কী কী
সোহেল তাজ বলেন, “দেশে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, সাম্য আর ন্যায্যতা ভিত্তিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনের শাসন নিশ্চিত করা, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন ও পুলিশবাহিনীকে রাজনীতি প্রভাব মুক্ত রাখা, পুলিশ বাহিনীসহ সকল আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনবান্ধব ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা, মেধাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষাব্যবস্থাকে বাস্তব উপযোগী করা, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক নির্ভরতা থেকে মুক্ত রাখা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করা, মানুষের কথা বলার অধিকারসহ সকল মৌলিক অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিতে ও গুম হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে আন্তরিক হতে হবে।”
‘আমরা কী বার্তা দিচ্ছি’
শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত স্থাপনায় হামলা নিয়েও কথা বলেন সোহেল তাজ।
তিনি বলেন, “এই হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের জন্যই ছাত্র জনতা রাজপথে নেমেছিল? দেশের সম্পদ ও ঐতিহ্য ধ্বংস করে নতুন প্রজন্মকে আমরা কী বার্তা দিচ্ছি?”
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন পুড়িয়ে দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে আগুন ও তার ভাস্কর্য ভাঙায় কতটুকু লাভ হল?”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঢালাও প্রতিপক্ষ না বানানোর অনুরোধও ঝরে পড়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কণ্ঠে। তিনি বলেন, “আইন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্যায় করেছে, তার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এটা সবাই চাই। কিন্তু সবাইকে আমরা কেন প্রতিহিংসার মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছি? আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া কোনো সভ্য সমাজ পরিচালনা করা সম্ভব নয়, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।”
যে সংস্কারের জন্য আন্দোলন হয়েছিল তার দিকে নজর দিয়ে ভিন্ন মতের মানুষকেও কথা বলার সুযোগ দিতে হবে বলেও উল্লেখ করে লাইভ শেষ করেন সোহেল তাজ।
কে এই সোহেল তাজ
মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজ ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে গাজীপুর-৪ আসন (কাপাসিয়া) থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সোহেল তাজ।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আবার জেতার পর তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন। তবে অভিমান করে মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেন। সেই থেকে রাজনীতির বাইরে আছেন তিনি। বর্তমানে তিনি শরীর চর্চায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।
তার আসনে পরে আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য বোন সিমিন হোসেন রিমি, যিনি সদ্য বিদায়ী সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
গত ২৯ জুলাই তিনটি প্রশ্ন নিয়ে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ থাকা কোটা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন সোহেল তাজ। সেদিন শিক্ষার্থীদের দিকে আর একটি গুলিও না করার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।