গ্রেপ্তারদের ‘জামিন বিলম্বিত’ করতে আদালতকে ‘যথাযথ প্রক্রিয়ায়’ অনুরোধ জানাবে পুলিশ।
Published : 23 Dec 2024, 04:42 PM
সম্প্রতি ছিনতাইয়ের ঘটনা ‘বেড়ে যাওয়ার’ প্রেক্ষাপটে রাজধানীজুড়ে ‘বিশেষ অভিযান’ পরিচালনা শুরুর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপি বলছে, ছিনতাই ‘কমে না আসা পর্যন্ত’ বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
একইসঙ্গে গ্রেপ্তারদের ‘জামিন বিলম্বিত’ করতে আদালতকে ‘যথাযথ প্রক্রিয়ায়’ অনুরোধ জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম।
সোমবার দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল বলেন, “ছিনতাই প্রতিরোধে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে গতকাল থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এই ৯৩ জনকে রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে চালানো অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
এর মধ্যে ডিএমপির রমনা বিভাগে ৮ জন, মতিঝিল বিভাগে ১৪ জন, লালবাগ বিভাগে ২৬ জন, ওয়ারী বিভাগে ১০ জন, তেজগাঁও বিভাগে ১৯ জন, মিরপুর বিভাগ ৪ জন, উত্তরা বিভাগ ৮ জন ও গুলশান বিভাগ থেকে ৪ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা শহরের ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে এ কাজে জড়িতদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারে ‘সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার’ চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে নজরুল বলেন, “আমাদের ফুট পেট্রোল, বাইক এবং গাড়িতে পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। পেট্রোল টিমগুলো যেন ঠিকঠাক কাজ করে সেজন্য স্বাভাবিক মনিটরিংয়ের পাশাপাশি প্রত্যেক বিভিাগে এসি-এডিসিরা রাতের বেলায় গাড়ি নিয়ে মুভ করবেন। তার নির্ধারিত এলাকার পেট্রোল টিম গুলোকে তদারকি করবেন এবং প্রতিঘণ্টায় খবর নিবেন।”
গ্রেপ্তাররা যাতে সহজে জামিন না পায় সে বিষয়ে তিনি বলেন, “কারণ তারা জামিনে বেরিয়ে আবার একই কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। তাই তাদের জামিনটা যেন না হয় সেজন্য বিচারকদের আমরা অনুরোধ করবো।
“তবে জামিনের বিষয়তো আমরা নিষেধ করতে পারবোনা, কারণ এটা তার আইনগত অধিকার। আমাদের কাজ যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জামিনের বিরোধিতা করা, পাবলিক সিকিউরিটির বিষয়টা কোর্টে জানানো। যেন সহজে তারা জামিন না পেয়ে যায়, জামিনের প্রক্রিয়াটাকে বিলম্বিত করা।”
গ্রেপ্তার ৯৩ জনের মধ্যে বেশিরভাগকেই ‘পেশাদার’ বর্ণনা করে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল বলেছেন, তারা একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে ফের একই কাজে জড়িয়ে পড়েছেন।
সোমবার দুপুর থেকে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধে ডিএমপির সাদা পোশাকে একটা টিম মাঠে নামানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নজরুল।
তিনি বলেন, “পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ঢাকায় আসে, তখন পেছন থেকে পণ্য ও মোবাইল ফোন টেনে নিয়ে যায়। এগুলো আশা করছি সব ধরে ফেলব।”
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা হটস্পটগুলো চিনি, এর বাইরেও কিছু জায়গা আছে। প্রত্যেক থানাতে কিছু গলি রয়েছে, যেখানে সচরাচর মুভমেন্ট কম হয়। সগেুলো চিহ্নিত করছি। যতোদিন প্রয়োজন মনে হয় আমরা অভিযান পরিচালনা করব। কমে না আসা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
সময়ের সঙ্গে ছিনতাইয়ের ‘প্যাটার্নও’ পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে নজরুল বলেন, “আমরা দেখছি দামী মোবাইল টার্গেট করছে। সিগনালে গাড়িকে লক্ষ্য করে হাঁটতে থাকে। যখনই সিগনালটা ছাড়ছে তখনই মোবাইলটা টান দিয়ে দৌড় দিচ্ছে। তখন গাড়ি থামানোর সুযোগ নাই, নামারও সুযোগ নাই।
“হাজার হাজার মানুষ সেটা দেখতেছে। যতক্ষণ নিজের গায়ে না পড়তেছে আমরা আমলে নিচ্ছি না। অথচ তখন পেছনের গাড়ি থেকে নেমে কয়দিন বাধা দিলে ওই ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলা সম্ভব।”
ছিনতাই প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম।