বার্ষিক এই সূচকে গত বছরের তুলনায় ৪০ ধাপ নেমে গেছে বাংলাদেশ
Published : 12 Jun 2024, 11:08 PM
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) দৃষ্টিতে বাংলাদেশে গত এক বছরে অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ, শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্য সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নারী-পুরুষ বৈষম্য আরো প্রকট হয়েছে, আর তার ফল হয়েছে বৈশ্বিক লিঙ্গ সমতা সূচকে বড় অবনমন।
বার্ষিক এই সূচকে গত বছরের তুলনায় ৪০ ধাপ নেমে গিয়ে ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এবার ৯৯তম স্থানে ঠেকেছে।
অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের অবস্থা আরও নাজুক। এ অঞ্চলে বাংলাদেশ এবারও সবচেয়ে ভালো অবস্থান ধরে রেখেছে, যেখানে পাকিস্তান রয়েছে সবার নিচে।
২০২৩ সালের সূচকে ১৪৬টি দেশের মধ্যে ১২ ধাপ এগিয়ে ৫৯তম অবস্থানে উঠে এসেছিল বাংলাদেশ, তার আগের বছর ২০২২ সালে ছিল ৭১ নম্বরে।
বুধবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) ২০২৪ সালের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে ১৪৬টি দেশের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
ডব্লিউইএফ এ সূচক প্রকাশ করে আসছে ২০০৬ সাল থেকে। অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সুযোগ, শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ও অস্তিত্ব এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন- এ চার মাপকাঠিতে নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সূচকে একটি দেশের অবস্থান নির্ধারণ করা হয় ১ ভিত্তিক স্কেলে, যেখানে ১ মানে হল পুরো সম-অধিকার, আর শূন্য মানে নারীর পুরোপুরি অধিকার বঞ্চিত হওয়ার অবস্থা।
সূচকে বাংলাদেশের এবার মোট স্কোর ০.৬৮৯, যা গতবছর ছিল ০.৭২২। এক বছরে স্কোর কমেছে ০.০৩৩।
২০০৬ সালের প্রথম সূচকে বাংলাদেশ ০.৬২৭ স্কোর পেয়েছিল।
এবার নিয়ে লিঙ্গ বৈষম্য সূচকে টানা ১৫ বছর শীর্ষে রয়েছে আইসল্যান্ড, দেশটির স্কোর ০.৯৩৫।
সূচকে আইসল্যান্ডের পর শীর্ষ দশের অন্য নয়টি দেশ হল- ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, নিউ জিল্যান্ড, সুইডেন, নিকারাগুয়া, জার্মানি, নামিবিয়া, আয়ারল্যান্ড ও স্পেন।
০.৫৬৮ স্কোর নিয়ে ২০২৪ সালের সূচকে সবার নিচে ১৪৬তম অবস্থানে রয়েছে সুদান। ঠিক তার ওপরে পাকিস্তান, তার আগে রয়েছে শাদ, ইরান, গায়ানা ও মালি।
দক্ষিণ এশিয়ার সাত দেশের মধ্যে সূচকে বাংলাদেশের পর নেপাল ১১৭, শ্রীলঙ্কা ১২২, ভুটান ১২৪, ভারত ১২৯, মালদ্বীপ ১৩২ এবং পাকিস্তান ১৪৫তম অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশের চেয়ে এবারও পেছনে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া (১০০), চীন (১০৬) ও জাপান (১১৮)।
ডব্লিউএফপির প্রতিবেদন বলছে, রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আগের বারের মত এবারও সপ্তম, স্কোর ০.৫৪৩। এ বিষয়ে ২০২২ সালে সূচকে নবম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।
নারীর ক্ষমতায়নে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার কারণ হল- দীর্ঘদিন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার পদে নারী থাকা এবং সংসদের ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা। দেশের বড় দলগুলোর শীর্ষে নারী থাকাও অন্যতম কারণ।
নারীর ক্ষমতায়নে অন্যান্য দেশের অবস্থা আরও নাজুক হওয়ায় মাত্র ০.৫৪৩ স্কোর নিয়েও শীর্ষ দশে রয়েছে বাংলাদেশ। তালিকার মাত্র ১২টি দেশের স্কোর ০.৫০০ এর ওপরে।
এবারের সূচকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পতন হয়েছে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণে ও সুযোগ সৃষ্টির দিক থেকে। মাত্র ০.৩১১ স্কোর নিয়ে ১৪৬টি দেশের মধ্যে শেষ অবস্থানটিতে নাম এসেছে বাংলাদেশের, যেখানে গতবছর ছিল ১৩৯ নম্বরে। তার আগের বছর ছিল ১৪১তম।
শিক্ষাক্ষেত্রেও বৈষম্য বেড়েছে। গতবছর ১২২তম অবস্থানে থাকলেও এবার তিন ধাপ নেমে ১২৫তমতে ঠেকেছে। ২০২২ সালে অবস্থান ছিল ১২৩তম।
স্বাস্থ্য সেবাপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য আরও বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে সূচকে এবার অব্স্থান ১২৯ নম্বরে, যা গতবছর ছিল ১২৬।
ডব্লিউইএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কোর ও র্যাংক উভয় দিক থেকে ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের পতন হয়েছে, সামগ্রিকভাবে অবনতি হয়েছে মাইনাস ৩.৩ শতাংশীয় পয়েন্ট। অর্থনীতিতে অবদান রাখার ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ গত পাঁচ বছর ধরে টানা কমেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে এবারই সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের।
শ্রমঘন কাজেও ২০১৮ সালের তুলনায় পুরুষের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। ছয় বছর আগের তুলনায় বাংলাদেশে নারী-পুরুষের আয় বৈষম্য বেড়ে পাঁচ গুণ হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ পদে নারীর অনুপাত কমেছে। পেশাজীবী ও প্রযুক্তিগত চাকরিতে নারীরা মোট কর্মসংস্থানের মাত্র এক-পঞ্চমাংশের মত।
তবে মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের অংশগ্রহণের ধারাবাহিকতা এবং নারীদের স্বাক্ষরতা বাড়তে থাকার চিত্র এসেছে ডব্লিউইএফের প্রতিবেদনে। মাধ্যমিকে মেয়েদের শিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবার উপরেই রয়েছে।
রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নে বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গত ৫০ বছরের ইতিহাসে নারীরাই সরকারপ্রধান হিসেবে ক্ষমতায় রয়েছেন ৩০ বছরেরও বেশি সময়, যার ধারাবাহিকতা এখনও রয়েছে।
তবে মন্ত্রিসভায় নারীর সংখ্যা কম, যেখানে বাংলাদেশে প্রতি ৯ জনের মধ্যে মাত্র একজন নারী। এ ছাড়া বাংলাদেশে নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন পুরুষের চার ভাগের এক ভাগ।