“আমি সংগঠনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছি”, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি।
Published : 03 Nov 2024, 09:19 PM
“মেট্রোরেলে আগুন না দিলে কিংবা পুলিশ হত্যা না করা হলে এত সহজে ‘বিপ্লব’ অর্জন করা যেত না” বলে মন্তব্যের কারণে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামকে কারণ দর্শাতে বলেছে সরকার পতন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে তার দেওয়া এই বক্তব্য তুমুল আলোচনার তৈরি করলে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের মধ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হল।
রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নোটিশ জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “হাসিব আল ইসলাম (সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) বেসরকারি টেলিভিশনের এক টকশোতে মেট্রোরেলে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ নিয়ে ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
“হাসিব আল ইসলামকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তার ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হল।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব শুরু থেকেই সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন। সরকার পতনের দুই দিন আগে গত ৩ আগস্ট ঘোষিত ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক টিমে তার নাম ছিল ১৩ নম্বরে।
কারণ দর্শানো নোটিসের প্রতিক্রিয়ায় হাসিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সংগঠনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছি। তবে আমি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে এখন কোনো বক্তব্য দেব না। আনুষ্ঠানিকভাবে সবার উদ্দেশে বক্তব্য দেব।”
হাসিবকে নোটিস দেওয়ার বিষয়ে আব্দুল হান্নান মাসউদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি।
কী বলেছিলেন হাসিব
গত ২৬ অক্টোবর বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসি নিউজের টক শো ‘প্রযত্নে বাংলাদেশ’ এর একটি পর্বে আলোচক হিসাবে যোগ দেন হাসিব।
ওই অনুষ্ঠানেই আন্দোলনের সময় মেট্রো স্টেশনে আগুন এবং পুলিশ হত্যা নিয়ে কথা বলেন হাসিব।
রাষ্ট্রপতি অপসারণ বিষয়ে উপস্থাপক প্রশ্ন রেখেছিলেন- রাষ্ট্রপতির কাছে যখন শপথ নেওয়া হয়েছিল, তখন কী আপস হয়নি?
এর জবাব দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে হাসিব সরকার পতন আন্দোলনের কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, “আমরা এটাকে বিপ্লব বলছি বা গণঅভ্যুত্থান, যাই বলি না কেন, এটা কোনো সাংবিধানিক নিয়ম মেনে হয়নি, আইন মেনে হয়নি। আইন যদি মানতে যেতাম, তাহলে কিন্তু এই বিপ্লবগুলো হত না।
“যদি মেট্রোরেলে আগুন না দেওয়া হত, যদি পুলিশদের না মারা হত, তাহলে এই বিপ্লবটা এত সহজে অর্জিত হত না…ফ্যাসিবাদের পতন নিশ্চিত করা যেত না।”
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে বলতে গিয়ে এই সমন্বয়ক আরও বলেন, “পৃথিবীর সকল বিপ্লবই সংবিধান বা নিয়মের বাইরে যেয়ে হয়েছে। এ কারণে আইনের বাইরে যেয়ে বা সাংবিধানিক পদ শূন্য হবে এরকম কথা বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে কতটা যৌক্তিক সেটা আমার কাছে মনে হচ্ছে না।”
হাসিবের ব্যাখ্যা, ‘খণ্ডিত বক্তব্য’ প্রচার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার বক্তব্য তুমুল আলোচনা তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে।
পরেরদিন ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে এই সমন্বয়ক দীর্ঘ পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, “আমার খণ্ডিত বক্তব্য নিয়ে বেশকিছু গণমাধ্যম নিজেদের মতো ব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে আমি মনে করছি।”
ডিবিসি টক শোতে ‘সময় স্বল্পতার কারণে’ বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে কিছুটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় দাবি করে হাসিব আরও লেখেন, “এবং বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কিছুটা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
“আমার বক্তব্যে আমি মূলত বুঝাতে চেয়েছিলাম বিপ্লবের প্রেক্ষাপট নিয়ে। আলাপ করতে গিয়ে সময় স্বল্পতার কারণে শুধু দুটো বিষয় তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু এর ব্যাখ্যা দেওয়ার পর্যাপ্ত সময় পাই নাই।
“আমি আমার বক্তব্যে বুঝাতে চেয়েছি আওয়ামী ‘ফ্যাসিবাদের’ দম্ভের স্তম্ভ, তাদের ‘তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্প’ মেট্রোরেলে যখন তারা নিজেরাই আগুন দিয়ে তারপর সেটা নিয়ে মায়াকান্না জনমানুষের মনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং এই ক্ষোভ ‘ফ্যাসিস্টদের’ বিরুদ্ধে আন্দোলন ত্বরান্বিত করেছে।
“আর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী দোসর ‘পুলিশ লীগ’ নির্বিচারে ছাত্র- জনতার উপর গুলি চালিয়ে গণহত্যা পরিচালনা করেছিল, তখন দেশের সর্বস্তরের জনতা নিজেদের জীবন বাঁচাতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, যেটা ছিল মুক্তিকামী জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।”
হাসিব লেখেন, “আওয়ামী ‘সন্ত্রাসীরা’ পুলিশকে ব্যবহার করে ‘গণহত্যা’ পরিচালনা করছে। এইজন্য এই অভ্যুত্থানে যত রক্তপাত হয়েছে এর দায় আওয়ামী ‘ফ্যাসিস্টদের’ নিতে হবে। কারণ, তারা জনতা ও পুলিশকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছিল।
“এই দুটো বিষয় বুঝাতে গিয়ে সময় স্বল্পতার কারণে স্রেফ ঘটনা উল্লেখ করতে পেরেছি, পুরো বিষয় তুলে ধরা সম্ভব হয় নাই।”
তার সঙ্গে যোগাযোগ ও মতামত না নিয়েই বক্তব্যের ‘খণ্ডিত অংশ’ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ‘বিভ্রান্তিকরভাবে’ উপস্থাপন করছে অভিযোগ এনে পোস্টের শেষে তিনি লেখেন, “যা খুবই হতাশার।”