“এত দিনের জঞ্জাল জমে আছে। আমাদের কাজ অনেক বড়। ধাপে ধাপে এসব দূর করা হবে,” বলেন তিনি।
Published : 15 Aug 2024, 06:45 PM
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগ।
পুর্ণাঙ্গ তথ্য হাতে পাওয়ার পর কার্যালয়ে ‘অনুপস্থিত’ জনপ্রতিনিধিদের জায়গায় প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি ‘সক্রিয় বিবেচনায়’ রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় এ কথা বলেন তিনি।
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সংবিধানিক সংকটের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলে বদলে যাচ্ছে প্রশাসনের চেহারা। বেশিরভাগ সংবিধানিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে এরই মধ্যে পরিবর্তন বা রদবদল এসেছে।
গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আঘাত আসার পরিপ্রেক্ষিতে তারা গা ঢাকা দেন। তাদের মধ্যে অনেকে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি ছিলেন।
৫ অগাস্টের পর ‘জনরোষের মুখে পড়ার ভয়ে’ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি অফিস করছেন না বলে খবর রয়েছে। তাদের অনুপস্থিতিতে জনগণের সেবাবঞ্চিত হওয়ার তথ্য আসছে।
উপদেষ্টা হাসান আরিফ সাংবাদিকদের বলেছেন, স্থানীয় সরকার পর্যায়ে যেখানে জনপ্রতিনিধি উপস্থিত নেই সেখানে কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিকল্প দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; সিইওরা (প্রধান নির্বাহী) দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্যদের বেলায় কী করা হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, “১২টি সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদে যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই, তাদের তালিকা চেয়ে চিঠি গেছে। কোথায় কোথায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অফিস করছেন, কোথায় করছেন না; সেটা দুই-একদিনের মধ্যেই পেয়ে যাব।
“তথ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারব। তখন চিন্তা করব যে, সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে কি হবে না। এটা সক্রিয় বিবেচনায় আছে। তবে প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া আছে।”
ঢাকা ওয়াসার আলোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের পদত্যাগ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, “সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার কন্টাক্টক টার্মিনেট (নিয়োগ চুক্তি বাতিল) করা হবে। প্রজ্ঞাপন অলরেডি হয়ে গেছে। তাকে ঘিরে যে দুর্নীতির চক্র গড়ে উঠেছিল, তারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ছিটানো আছে। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আমরা চিন্তা করছি।”
নিজ দপ্তরে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানও পরিষ্কার করেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ, বলেন, “আইন অনুযায়ী কাজ করলে দুর্নীতি থাকবে না। যেখানে কর্মকাণ্ড থাকে, সেখানে দুর্নীতির একটা সুযোগ তৈরি হয়। দুর্নীতির যারা করেন, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় আমরা দেখব।”
“ছাত্র জনতা ও সেনার আন্দোলন থেকে যে সরকার গঠিত হয়েছে, তার বয়স এক সপ্তাহও হয়নি। এত দিনের জঞ্জাল জমে আছে। আমাদের কাজ অনেক বড়। ধাপে ধাপে এসব দূর করা হবে,” বলেন তিনি।
সাধারণত বর্ষা মৌসুম ও তার পরপর দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার হয়ে থাকে। বিশেষ করে ঢাকায় খারাপ পরিস্থিতি হয়। ক্ষমতার পালাবদলের এই সময়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র অফিস করছেন না বলে তথ্য রয়েছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে হাসান আরফি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিবছর আসে। মাঝখানে একটা গ্যাপ হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে; যা যা করা দরকার তারা করবে। কাজের গতি সঞ্চার করার জন্য প্রয়োজনে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
“ডোবা নালাতে না হয় ওষুধ দেওয়া হলো। কিন্তু বাড়ির অভ্যন্তরে এখন অনেক ছোট ছোট টব আছে। এখানেও মশা জন্মাতে পারে। এটা নিয়েও সচেতন হতে হবে।”
জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম সচল রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, “জন্মনিবন্ধন প্রতিদিনই প্রয়োজন। গ্রাম-গঞ্জে অনেক সমস্যা হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত জন্মমৃত্যু নিবন্ধন চালু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”