বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের প্রত্যাশা রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিনিধি দল; তাদের জানানো হয়েছে, ইসি ভোটে সবার অংশগ্রহণ চাইলেও রাজনৈতিক সমঝোতার কাজটি করতে পারবে না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতে তা নিয়ে আলোচনা করতে রোববার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে যান অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ের। তার সঙ্গে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তরের উত্তর ও দক্ষিণ এশিয়ার সহকারী সচিব (প্রথম) গ্রে কোওয়ান, সহকারী পরিচালক এলিস হেইনিঙ্গার এবং হাইকমিশনের উপ প্রধান নার্দিয়া সিম্পসনও ছিলেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাদের মধ্যে ভালো মতবিনিময় হয়েছে।
ইসির সঙ্গে আলোচনার কারণ নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাই।”
তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে সিইসি পরে সাংবাদিকদের বলেন, “উনারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হবে, ফ্রুটফুল হবে। আমরা প্রিপারেশনের কথা জানিয়েছি। আমরা ফুললি প্রিপেয়ার্ড। আমরাও চাচ্ছি অংশগ্রহণমূলক হোক, কনটেস্টেড হোক।”
রাজনৈতিক সমঝোতায় ইসির উদ্যোগের বিষয়টি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছিল বলে জানান তিনি।
“আমাদের দায়িত্বের মধ্যে উনারা জানতে চেয়েছে-আমরা রাজনৈতিক দলের সমঝোতার সৃষ্টি করতে পারি কি না? আমরা বলেছি, সেটা আমাদের দায়িত্বের পরিধিভুক্ত নয়।”
নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মতভেদ এখনও কাটেনি। ইসির পক্ষ থেকে আগেও বলা হয়েছে, দুই পক্ষকে সমঝোতায় আনার দায়িত্ব তাদের নয়। আর সরকার কেমন হবে, সেটা নির্ধারণের এখতিয়ারও তাদের নেই।
সিইসি বলেন, “আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে কন্সট্যান্টলি বলে যাচ্ছি, নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়া প্রয়োজন। তাহলে এটার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি হবে এবং লেজিটেমেসিটা বাড়বে।
“সে লক্ষ্যে আমরা আগেও যেভাবে সব দলগুলোকে আহ্বান করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমাদের সে ইচ্ছেটা জানাচ্ছি। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব, নির্বাচনটা যেন অবাধ, সুষ্ঠু হয়। আমরা আবেদন করব আস্থা রাখুন।”
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “অংশগ্রহণমূলকের বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নেব না; এটা পলিটিক্যাল ইস্যু। পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর মধ্যে সে লক্ষ্যে কোনো সঙ্কট যদি থেকে থাকে, তারা নিজেরা আলাপ আলোচনা করে নিরসন করবে। আমরা মাঝখানে কোনো ব্রোকারেজ করব না, করতে পারব না।”
তবে অন্য সব আলোচনার জন্য ইসির ‘দরজা খোলা’ বলে জানান সিইসি।
তিনি বলেন, “আমাদের দরজা খোলা আছে, কোনো পার্টি যদি এসে অংশগ্রহণ করতে চান, আমাদের সহযোগিতা নিতে চান, আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি। আমাদের তরফ থেকে যে ধরনের সহযোগিতা দরকার, করে যাব।”
নিবন্ধন যাচাই-বাছাই শেষ হবে ‘মে মাসের মধ্যে’
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, নিবন্ধন প্রার্থী নতুন দলগুলোর আবেদন যাচাইয়ের কাজ মে মাসের মধ্যে শেষ করার আশা করছেন তারা।
তিনি রোববার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের একথা জানিয়ে বলেন, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোর যাচাই-বাছাইয়ে ‘একশতে একশ’ পেতে হবে।
“শর্ত যারা শতভাগ পূরণ করতে পারবে তারা নিবন্ধন পাবে। যারা একটি মাত্র পূরণ করতে পারবে না, তারা পাবে না। একশতে একশ পেতে হবে। নিরানব্বই পেলে হবে না।”
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আবেদন চেয়ে নির্বাচন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৯৩টি দলের আবেদন জমা পড়ে।
চালানের টাকা ও সঠিকভাবে নিবন্ধনের আবেদন ফরম পূরণ না করায় ১৪টি দলের আবেদন বাতিলের সুপারিশ করেছে এই সংক্রান্ত কমিটি। এছাড়া ৭৭টি দলকে আবেদন সম্পূর্ণ করার জন্য চিঠি দেওয়ার পক্ষে তারা। দুটি দল নিজেরাই তাদের আবেদনপত্র প্রতাহার করে নেয়।
আলমগীর বলেন, “প্রত্যাহার করে নিয়েছেন দুটো দল। বাকিগুলোর সংখ্যা বলতে পারব না। তাদের কাগজপত্র শর্টেজ ছিল। ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল, যারা দিয়েছেন তাদেরগুলো আমরা দেখব। আর যারা দিতে পারেননি তারা সেগুলোও আমরা দেখব।”
নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, নতুন দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মহানগর থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকার শর্ত পূরণ করতে হবে।
২০০৮ সাল থেকে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে দলের নিবন্ধন প্রথা চালুর পর ৪৫টি দল নিবন্ধন পায়। এরমধ্যে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়।বর্তমানে নিবন্ধিত রয়েছে ৪০টি দল।