হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচার শেষ হয়নি ১৫ বছরেও। বিস্ফোরক মামলার বিচার এখনও আটকে আছে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে।
Published : 25 Feb 2024, 10:13 AM
কারো গাফিলতিত নয়, ‘সঠিকভাবে তদন্ত শেষ করতেই’ পিলখানা মামলার বিচার শেষ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার সকালে বনানীর সামরিক কবরস্থানে পিলখানায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, “শিগগিরই চূড়ান্ত বিচার শেষ হবে। যা কিছুই হোক দ্রুত বিচার কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। বিচারে কারও গাফিলতি নেই, সঠিকভাবে তদন্ত শেষ করতেই এই দীর্ঘসূত্রতা।”
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে।
এই ঘটনায় দুটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর একটি ছিল হত্যা মামলা, অন্যটি বিস্ফোরক আইনের মামলা।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় মামলা।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
আর বিস্ফোরক আইনের মামলা এখনও বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণেই আটকে আছে।
পিলখানায় নারকীয় সেই হত্যাযজ্ঞের পঞ্চদশ বার্ষিকীতে রোববার সকালে বনানীর সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিন বাহিনী প্রধানের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের পক্ষে জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পিলখানায় নিহত সেনাকর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্য এবং নিকট আত্মীয়রাও ছিলেন বনানীর সামরিক কবরস্থানে।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সশস্ত্র সালাম জানান।
পরে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।