হায়দার আকবর খান রনোর দান করে যাওয়া দুটি কর্নিয়া দুই জনের চোখে স্থাপন করা হয়েছে।
Published : 13 May 2024, 12:37 AM
আট বছর বয়সে জ্বর আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ডান চোখের দৃষ্টি পুরোপুরি হারিয়েছিলেন ভোলা সদরের ভেলুমিয়া গ্রামের সৌরভ। বাম চোখের দৃষ্টিও প্রায় নেই।
কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের জন্য চার বছর আগে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতিতে আবেদন করেছিলেন। বামপন্থি নেতা আকবর হায়দার খান রনোর বদান্যতায় হতাশা দূর করার অপেক্ষায় সৌরভ।
গত শুক্রবার রাত ২টার পর মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনীতিক হায়দার আকবর খান রনো। মৃত্যুর আগে সন্ধানীতে চোখ দুটি দান করে যান তিনি। শনিবার সকাল ৬টায় সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংক তার কর্নিয়া দুটি সংগ্রহ করে।
রোববার সন্ধানী জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে একটি চোখ বসানো হয়েছে ২৪ বছর বয়সী সৌরভের বাম চোখে।
হাসপাতালে শুয়ে সৌরভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ডান চোখে কিছুই দেখি না। বাম চোখেও খুব ঝাপসা দেখি। স্যারেরা (চিকিৎসক) অপারেশন করছে। আশা করি দেখতে পামু। যদি চোখের আলো ফিরা পাই, মনে হইবে আমি আমার পৃথিবীডা নতুন করে ফিরা পাইছি।”
দুটি কর্নিয়ার একটি পেয়েছেন সৌরভ। আরেকটি পেয়েছেন কুমিল্লা লালমাই উপজেলার আনোয়ার হোসেন।
সৌরভের বড় ভাই মো. আল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটা কর্নিয়া লাগানোর জন্য চার বছর আগে আবেদন করে রাখছিলাম। গতকাল সন্ধানী থেকে আমাদের ফোন দিয়ে ঢাকায় আসতে বলে। আমরা ঢাকায় এসে পৌঁছায়ছি। দুপুরে অপারেশন হইছে।”
শিব নারায়ণ দাশের কর্নিয়া পেলেন দুজন
কর্নিয়ার অভাবে পৃথিবীর আলো দেখতে পায় না তারা
রনোর দান করে যাওয়া অপর কর্নিয়াটি ৫০ বছর বয়সী আনোয়ার হোসেনের ডান চোখে বসানো হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, জন্মের সময় তার দুটি চোখই ঠিক ছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে বাম চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে বাম চোখ পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়। পরে ডান চোখেও ঝাপসা দেখতে শুরু করেন।
“২৫-২৬ বছর পর্যন্ত আমি গাড়িও চালাইতাম। পরে বাম চোখে আর কিছুই দেখি না। বাম চোখের কারণেই কি না, ডান চোখেও ঝাপসা দেখতে শুরু করি। প্রায় পাঁচ মাস আগে থেকে ডান চোখেও প্রায় দেখিই না। এখানে ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। কাল টেলিফোন করে জানাইল কর্নিয়া নেওয়ার বিষয়ে। আমি আজ আসার পর স্যারের অপারেশন করেছে। এখন চোখে একটু ব্যথা করছে।”
সন্ধানী জাতীয় চক্ষু সমিতির সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পর দুজনই এখন ভালো আছেন।
“তাদের অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। সার্জন বলেছেন তারা যে কর্নিয়া পেয়েছে সেগুলোর কন্ডিশন ভালো ছিল। কাল তাদের দুজনকে আমরা ছুটি দিয়ে দেব। আশা করছি তারা ভালো দেখতে পাবেন।”
সন্ধানী জানিয়েছে, বাংলাদেশের ১৪ লাখ দৃষ্টিহীন ব্যক্তির মধ্যে অন্তত ৫ লাখ কর্নিয়াজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু মৃত্যুর পরে কর্নিয়া দান করে যাওয়া মানুষের সংখ্যা খুবই কম।