‘আওয়ামী লীগের প্রতিবিপ্লব’ ঠেকাতে ৪ দফা দাবি নিয়ে 'রেজিস্ট্যান্স উইক' কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরা এই আয়োজন করে।
Published : 14 Aug 2024, 10:11 PM
কোটা সংস্কারের দাবিতে এবং পরে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের মধ্যে নিহতদের স্মরণে ঢাকায় পদযাত্রা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাব মোড় হয়ে ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কের রাপা প্লাজা পর্যন্ত সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এই পদযাত্রায় অংশ নেন।
রাপা প্লাজার সামনে গিয়ে সন্ধ্যায় তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজসহ নিহত সবার স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন ও দোয়া করেন।
গত ১৮ জুলাই রাপা প্লাজার সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের রাবার বুলেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মোহাম্মদপুরের সিটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফাইয়াজের।
‘আওয়ামী লীগের প্রতিবিপ্লব’ ঠেকাতে ৪ দফা দাবি নিয়ে 'রেজিস্ট্যান্স উইক' কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরা এই পদযাত্রার আয়োজন করেছে।
শিক্ষার্থীরা পদযাত্রায় ‘খুনি হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, খুনি হাসিনার বিচার চাই’, ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও ছুড়িয়ে দাও’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই’-এমন সব স্লোগান দেন।
পদযাত্রার শুরুতে শাহবাগে আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “যারা আমাদের টুটি চেপে ধরেছে, আয়নাঘর প্রতিষ্ঠা করেছে, আমাদের শিবির ট্যাগ দিয়েছে, হলে হলে নির্যাতন করেছে, আমাদের ভাইদেরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় অত্যাচার করেছে, আমাদের বোনদেরকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ যেভাবে হামলা-নির্যাতন করেছে, তারা যদি আর কখনও এই বাংলার মাটিতে যড়যন্ত্র করতে চায়;তাদেরকে প্রতিরোধ করা হবে।”
“ফ্যাসিবাদের বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা খুনি শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পর থেকেই দেখেছি বিভিন্ন যড়যন্ত্র চলছে। আমরা প্রশাসনিক ক্যু ঠেকিয়েছি, আমরা জুডিশিয়ারি ক্যু ঠেকিয়েছি, আমরা মিলিটারি ক্যু ঠেকিয়েছি। আমরা খবর পেয়েছি ১৫ অগাস্টে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট, আওয়ামী দোসররা আবার ক্যু করার জন্য রাস্তায় সংগঠিত হবে। যারা জনগণের অধিকার লুণ্ঠিত করেছে, যারা স্বাধীনতাকে লুণ্ঠিত করেছ; তারা যদি আবার রাস্তায় আসার কোনো ধরনের চিন্তা করে, তাহলে ছাত্র-জনতা তাদেরকে পা ভেঙে দেবে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রীতির বাংলাদেশ। কিন্তু আমরা দেখেছি যখনি শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে তখন আওয়ামী দোসররা কীভাবে সংখ্যালঘুদের অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে, জমি দখল করেছে। শাহবাগ থেকে ঘোষণা দিতে চাই- বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের প্রাথমিক পরিচয় বাংলাদেশি।
আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, স্বৈরাচার ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্র করতে এসে ধরা পড়লে গায়েবানা জানাজা পড়ারও লোক খুঁজে পাবেন না। স্বৈরাচারের দোসররা অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালায়নি। লুকিয়ে আছে আমাদের আশপাশে। যে নৌকার মাঝি সাজুক না কেন, তাদেরকে নৌকাসহ ডুবিয়ে দিতে হবে।
‘‘আমরা একটি ধাপ পার করেছিমাত্র। যতদিন পর্যন্ত জনগণের নির্বাচিত জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা না যায়, ততদিন পর্যন্ত দশ মিনিটের ঘোষণায় রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যারা বাধা দেবে জনতার স্রোতে তাদেরকে পিষে দিতে হবে। যে গর্ত থেকে ফ্যাসিস্টরা বের হওয়ার চেষ্টা করবে, সে গর্তে তাদের ঢুকিয়ে তালা লাগিয়ে দিতে হবে।”
সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মুখে স্বৈরাচার হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। এখনও সেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ভাঙচুরসহ লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল, তারা বিভিন্ন জায়গায় উপসনালয় হামলা চালিয়েছে কিন্তু ছাত্র-জনতা তা রুখে দিয়েছে। আমরা রক্ত দিয়েছে প্রয়োজন হলে আমরা আবারো রক্ত দিতে প্রস্তুত।”