আক্ষরিক অর্থেই এ মাদক মাংসে পচন সৃষ্টি করে। মাদকসেবী পরিণত হয় ‘জোম্বিতে’।
Published : 21 Nov 2023, 11:49 PM
যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়া সিনথেটিক মাদক ‘জোম্বি ড্রাগ’ যেন বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপরেশন্স ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ বলছেন, বিপজ্জনক এ ধরনের মাদক নানারকম মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে এর ব্যবহার ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে গেছে। সে কারণে বাংলাদেশেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যদিও এ ধরনের মাদক এখনও বাংলাদেশে সেভাবে ছড়ায়নি। কিন্তু আমাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মিত আকাশপথে যোগাযোগ আছে। অনেকেই সেখানে পড়াশোনা করতে যায়। গ্রিন কার্ড হোল্ডার আছেন অনেকে, তারা নিয়মিত যাতায়াত করেন। সেটা এখানেও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে।”
‘জোম্বি’ ড্রাগ’ কোনো একক মাদকের নাম নয়। ‘জাইলাজিন’ নামের একটি ট্রাঙ্কুইলাইজার গরু বা ঘোড়ার ক্ষেত্রে চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেই ওষুধ নিয়ে নেশা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মাদকসেবীরা। প্রভাব ও স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য কখনও কখনও এর সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ফেন্টানিল, হেরোইন, কোকেনের মত অন্য মাদক। ওষুধটি যেহেতু ট্রাঙ্কুইলাইজার, সে জন্য এ মাদককে ট্রাঙ্কও বলা হয়।
এছাড়া ডেসোমরফিন এবং আলফা-পাইরোলিডিনোপেনশোফেনন এর মত সিনথেটিক মাদককেও যুক্তরাষ্ট্রে ‘জোম্বি’ ড্রাগ’ বলা হয়।
মঙ্গলবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা থেকে জারি করা সতর্কবার্তায় বলা হয়, “এ মাদকটি মানবদেহে মারাত্মক ইনফেকশন, দৃষ্টিভ্রম এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এটি অল্প পরিমাণে সেবন করলে সেবনকারী বাস্তব ভুলে কল্পনার জগতে বিচরণ করে। সামান্য বেশি সেবনে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে পড়ে।”
অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইন ও ইনজেকশনাল ড্রাগের আধিক্য বেশি। এগুলোর পাশাপাশি ইদানিং‘ট্যাপেন্ডাডল’ নামে আরেকটি মাদকের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে দেশে, যেটি ইয়াবার বিকল্প হিসেবে মাদকবেসীরা সেবন করে।
এ ছয় ধরনের মাদক মূলত স্থল সীমান্তের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করে। সে কারণে সহজেই দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এলএসডি, ডিওবি জাতীয় কিছু মাদক আছে যেগুলো আকাশপথে দেশে আসে। বিমানবন্দর কেন্দ্রিক স্ক্যানিংসহ নানা সতর্কতার কারণে এসব মাদক এখনও দেশে ততটা সহজলভ্য হয়ে উঠতে পারেনি বলে কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
বিমানবন্দরে যাতে ‘জোম্বি ড্রাগ’ বা ‘ট্রাঙ্ক’ এর বিষয়েও সতর্কতা বাড়ানো হয়, সেজন্যই ওই সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়টি প্রথম অধিদপ্তরের নজরে আনেন রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক (গোয়েন্দা) মোহা. জিল্লুর রহমান। গত ৩০ অগাস্ট এ বিষয়ে ১১ পাতার একটি প্রতিবেদন পাঠান ঢাকায় অধিপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে।
উপ-পরিচালক জিল্লুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নোডাল এজেন্সি হিসেবে দেশে এবং বিদেশে সমসাময়িক যেসব মাদকের প্রাদুর্ভাব ঘটছে, সেদিকে নজর রাখে। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায় এ মাদকটির ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটায় পূর্ব সর্তকতা অবলম্বন করতে বিষয়টি অধিদপ্তরের নজরে আনা হয়।”
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জোম্বি’ ড্রাগ ত্বক, পেশী রক্তনালী এবং শরীরের প্রধান প্রধান অঙ্গগুলোর মারাত্মক ক্ষতি করে। সেবনকারীদের শরীরে নিরাময় অযোগ্য ক্ষত সৃষ্টি হয়, যাতে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস সংক্রমিত হয়ে গ্যাংরিন হয়ে যায়। অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থেই এ মাদক মাংসে পচন সৃষ্টি করে।
নিয়মিত সেবনে কারো কারো ক্ষেত্রে মনোবৈকল্য দেখা দেয়, আবার কেউ আগ্রাসী আচরণ করে। এ মাদক মানুষের হৃদস্পন্দন ও শ্বাস প্রশ্বাসকে কমিয়ে দিতে পারে। ফলে সেবনকারীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। ‘জোম্বি’ ড্রাগের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
এ মাদকের ভয়াবহতা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে কী ধরনের সচেতনতা তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও বলা হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিশেষ প্রতিবেদনে।
সেখানে বলা হয়, আমেরিকায় আড়াই লাখের বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসী রয়েছে। দেশে তাদের যাতায়াত ছাড়াও অর্থনৈতিক যোগাযোগ আছে। তাই এটি সহজেই বাংলাদেশে প্রবেশ করার শঙ্কা রয়েছে।
এর আগে গত ২০ অগাস্ট ‘মাঙ্কি ডাস্ট’ নামে আরেক মাদকের বিষয়েও সতর্কতা জারি করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ওই মাদকটি যুক্তরাজ্যে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছিল।