দেশ যেন রাজাকারদের আস্তানায় পরিণত না হয়: প্রধানমন্ত্রী

“আমি কখনই ভাবি না আমার কী দরকার, বরং আমি ভাবি যে আমি দেশ এবং এর জনগণের উন্নতির জন্য কী করতে পারি,” বলেন সরকারপ্রধান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2024, 06:50 AM
Updated : 17 Feb 2024, 06:50 AM

কেউ যেন বাংলাদেশকে স্বাধীনতা বিরোধীদের দেশে পরিণত করতে ও পেছনের দিকে ঠেলে দিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জার্মানির মিউনিখে শুক্রবার রাতে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। অবশ্যই এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে। দেশকে কেউ যেন পেছনের দিকে ঠেলে দিতে ও রাজাকারের দেশে পরিণত করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।”

বাসস জানায়, মিউনিখের হোটেল বার্গারহাউস গার্চিংয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত সংবর্ধনায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানি সফর করছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা জাতির পিতার বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট সোনার বাংলাদেশে রূপান্তরিত করব।”

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের ফল সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় বৃথা যেতে দেবেন না।

“আমি কখনই ভাবি না আমার কী দরকার, বরং আমি ভাবি যে আমি দেশ এবং এর জনগণের উন্নতির জন্য কী করতে পারি,” বলেন সরকারপ্রধান। 

আওয়ামী লীগকে গণমুখী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের মানুষ মাতৃভাষা বাংলা ও দেশের স্বাধীনতাসহ সবকিছু পেয়েছে।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। আমাদের দল ক্ষমতায় থাকায় আমরা কোভিড-১৯ মহামারীর মতো বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পেরেছি।”

জনগণের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যখনই সুযোগ পাই জনগণের কল্যাণে কাজ করি। আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে কারণ তারা প্রয়োজনে দলকে সবসময় পাশে পায়।”

দেশের সার্বিক উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্য শুধু মেগা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা নয়, তৃণমূলেও অগ্রগতি করা।”

বিএনপিকে লুটেরাদের দল আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই দল জনগণের কল্যাণে কিছুই করে না, বরং নিজেদের ভাগ্য গড়ে তোলে। তারা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও মানুষকে পুড়িয়ে মারার কারণে পরাজয়ের ভয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি কারণ তারা জানে যে জনগণ তাদের ভোট দেবে না।

“একজন সামরিক স্বৈরশাসকের দ্বারা গঠিত দলটি সবসময় এজেন্সিতে বিশ্বাস করে এবং তাদের সাহায্য ছাড়া তারা কিছুই করতে পারে না।”

সরকার প্রধান বিএনপিকে হ্যাঁ/না ভোট এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ধ্বংস করার জন্য দায়ী করেন।

তিনি বলেন, “বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। তবে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে ভোটের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৭৫ সালের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য। গত সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ বিশেষ করে নারীরা অবাধে ভোট দিয়েছে।

“এবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় না বসালে ২০০৯ সাল থেকে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, তা নষ্ট হয়ে যেত। লুটেরা (বিএনপি) সব লুট করে নিত।”

শেখ হাসিনা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

তার সরকার সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, তার সরকার বিদেশে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।

“আমরা লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছি এবং যার জন্য আমরা দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল করেছে এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং মিউনিখের স্থানীয় মেয়র অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।