“একটি সংস্থার ক্ষেত্রে সহযোগিতা কমতির সঙ্গে বিমসটেক গঠনের কোনো সংযোগ নেই।”
Published : 11 Feb 2025, 08:52 PM
বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশের জোট বিমসটেকের এগিয়ে চলার সঙ্গে এই অঞ্চলের আরেকটি সহযোগিতা সংস্থা সার্কের ঝিমিয়ে পড়ার কোনো সম্পর্ক দেখছেন না বিমসটেকের মহাসচিব ইন্দ্র মনি পাণ্ডে।
মঙ্গলবার ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে চার দেশ নিয়ে যখন বিসমটেক গঠিত হয়, তখন সার্ক ছিল ‘বর্ধনশীল’ আঞ্চলিক সংস্থা; যা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছিল।
“সুতরাং আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, একটি সংস্থার ক্ষেত্রে সহযোগিতা কমতির সঙ্গে বিমসটেক গঠনের কোনো সংযোগ নেই।”
দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েক দেশ বিমসটেকের ছাতার নিচে থকার কথা তুলে ধরে পাণ্ডে বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র নিজস্ব এজেন্ডা, অভিষ্ট, ও সনদ রয়েছে বিমসটেকের। সার্কের ক্ষেত্রেও তাই। বিশ্বব্যাপী দেখা যায়, দেশগুলো কেবল একটি আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক জোটের সদস্য হয় না।
“আঞ্চলিক বা বৈশ্বিকভাবে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা এগিয়ে নিতে দেশগুলো কোনো একটি জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়ে একযোগে কাজ করে। সুতরাং আঞ্চলিক সংস্থাগুলো একসঙ্গে সহাবস্থান করতে পারে।”
বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্য থেকে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশেন (আইওআরএ) এবং আসিয়ানের সদস্য থাকার প্রসঙ্গও টানেন তিনি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় সার্ক। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ২০০৭ সালে যোগ দেয় আফগানিস্তান।
সার্কের জোরালো কার্যক্রম চলার মধ্যে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিস্ট-টেক) যাত্রা শুরু করে।
ওই বছরই মিয়ানমার এই জোটে যুক্ত হওয়ার পর নাম হয় ‘বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক)।
২০০৪ সালে নেপালও সদস্যপদ পায় বিমসটেকের। এরপর দেশের নামের আদ্যক্ষরে পরিবর্তে সংস্থার নামকরণ করা হয় ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন বা বিমসটেক’।
বর্তমানে সাত দেশের জোট বিমসটেকে সার্কের আট সদস্য দেশের মধ্যে পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান নেই।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে তিক্ততার মধ্যে প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে অকার্যকর রয়েছে সার্ক। ২০১৪ সালের পর আর কোনো শীর্ষ সম্মেলন না হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের একমঞ্চে আনতে পারেনি এই আঞ্চলিক সংস্থা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করণে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সংগঠনের সঙ্গে গত ১২ ডিসেম্বরে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “সার্ক আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই সার্ককে সক্রিয় করার বিষয়ে বলেছি।
“ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ‘কিছু ইস্যুর জন্য’ সার্ক সক্রিয় হচ্ছে না। আমি মনে করি, দুটি দেশের মধ্যকার সমস্যা অন্য দেশগুলোকে প্রভাবিত করা উচিত না।”
ইউনূস বলেন, “প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা যদি সাক্ষাৎ করেন, একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন তাহলে গোটা বিশ্বের কাছে বার্তা যায় যে ‘আমরা একসঙ্গে আছি’।”
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইনডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগের কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তিনি লিখেছেন, দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অকার্যকর হয়ে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সার্ককে কার্যকর করার জন্য ‘আন্তরিক উদ্যোগ’ গ্রহণ করেছে।
“তবে এখন পর্যন্ত ভারতের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আমরা মনে করি না এই উদ্যোগ নিয়ে ভারতের ভয় পাওয়ার কিছু আছে।”
সাবেক কূটনৈতিক তৌহিদ হোসেন সেখানে লিখেছেন, “আমরা জানি, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা বাস্তবায়ন দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তবে, হাজার মাইলের যাত্রা একটি ছোট পদক্ষেপে থেকেই শুরু হয়।
“প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের নেতৃবৃন্দ কি অন্তত একটি সম্মেলনে একসঙ্গে ছবি তুলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে পারেন না?”
সার্কের অকার্যকর অবস্থার মধ্যে আগামী ৪ এপ্রিল ব্যাংককে শীর্ষ সম্মেলন মিলিত হচ্ছেন বিমসটেক নেতারা। ওই সম্মেলনের মাধ্যমে সংস্থার পরবর্তী সভাপতির দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বিমসটেকের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে কথা বলেন মহাসচিব ইন্দ্র মনি পাণ্ডে।
তিনি বলেন, শীর্ষ সম্মেলনের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক হবে। সদস্য দেশগুলো চাইলে সম্মেলনের ফাঁকে শীর্ষ নেতাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও হতে পারে।
সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলা হলেও ঢাকায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন পর বিমসটেকের সঙ্গে কাজের অঙ্গীকারে কোনো পরিবর্তন না হওয়ার কথা বলছেন ইন্দ্র মনি পাণ্ডে।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেও আমরা বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছি। এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক পর্যায় থেকে নিশ্চয়তা পেয়েছি, ভবিষ্যতে বিমসটেককে কেবল পূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে না, বরং সহযোগিতা গভীর ও জোরালো করা হবে।”
কোনো সদস্য দেশ থেকে সহযোগিতার বিষয়ে কোনো দ্বিধা না থাকার কথা তুলে ধরে বিমসটেক মহাসচিব বলেন, “কারণ তারা দেখতে পাচ্ছে, একযোগে কাজ করার মাধ্যমে অনেক লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে।”
এবারের শীর্ষ সম্মেলনে বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে নৌ পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি সই হতে পারে বলে জানান তিনি।