বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। সে সময় ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন হলেও ১৫টি আসন সংরক্ষিত ছিল নারীদের জন্য।
Published : 06 Jan 2024, 11:44 PM
এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যারা সরকার গঠন করবে, আগামী পাঁচ বছর তাদের ওপরই থাকবে রাষ্ট্রপরিচালনার ভার।
বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। সে সময় ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন হলেও ১৫টি আসন সংরক্ষিত ছিল নারীদের জন্য।
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ প্রথম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে জয়লাভ করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছিলেন ঢাকা-৬ আসন থেকে।
তেজগাঁওয়ে অবস্থিত তখনকার জাতীয় সংসদ ভবনে ওই সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ৭ এপ্রিল।
প্রথম সংসদ নির্বাচনের প্রায় ৮ বছর পর দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি।
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে ওই নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ৩০টি৷ সেই নির্বাচনে মাস ছয়েক আগে প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ২০৭টি এবং আওয়ামী লীগ ৫৪টি আসনে জয় পেয়েছিল৷
দ্বিতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ওই বছরের ২ এপ্রিল৷
বিএনপির বর্জনের মধ্যে তৃতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে৷ সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি এবং জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসনে জয় পায়।
তৃতীয় সংসদের দুই বছরের মাথায় ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় এরশাদের শাসনামলে৷
আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রায় সব দলের বর্জনের মধ্যে ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসনে জয় পেয়েছিল।
সংরক্ষিত নারী আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ওই সংসদে মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷
পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থায় নতুন ধারায় প্রবেশ করে বাংলাদেশ।
গণআন্দোলনে এরশাদের বিদায়ের পর তখনকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই নির্বাচন হয়।
পঞ্চম সংসদে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আর জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসনে জয়লাভ করে৷
এছাড়া নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ৩০ জন নারী সাংসদ নির্বাচিত হন৷
তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি সংবিধানের অংশ না থাকলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে পরের সংসদে সেটির বিল পাস করা হয়েছিল৷
আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্যে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি৷
সে সময় ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি ২৭৮টিতে জয়লাভ করে৷ মাত্র চার কার্যদিবস সংসদ বসার পর তা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তার আগে সেই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়।
এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি, বিএনপি ১১৬টি এবং জাতীয় পার্টি ৩২টি আসনে জয়লাভ করে৷
পরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি ও চার দলীয় জোট সরকার। ৩০০ আসনের ১৯৩টিতে বিএনপি আর ৬২টিতে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়৷
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে সবশেষ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২৬৩টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে।
দুই বছর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর আসা ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ৩৩টি আসন পায়।
নবম সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
এরপর বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের বর্জনের মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে ভোট হয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৩৯ দল অংশ নেয়। ৮০% ভোট পড়ে।
আওয়ামী লীগ ২৫৯টি আসন পেয়ে আবারও সরকার গঠন করে। জাতীয় পার্টি পায় ২০টি আসন। ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, জাসদ ২টি, বিকল্প ধারা ২টি, তরীকত ফেডারেশন ১টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১টি আসন পায়।
পাঁচ বছরের মাথায় এখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ২৮ দল ভোটে রয়েছে। বিএনপিসহ ১৫টি দলের বর্জনের মধ্যে এ নির্বাচন হচ্ছে।
১১ সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার
নির্বাচন | ভোটের তারিখ | মোট ভোটার (জন) | ভোট দেন | ভোটের হার |
প্রথম সংসদ | ৭ মার্চ ১৯৭৩ | ৩,৫২,০৫,৬৪২ | ১,৯৩,২৯,৬৮৩ | ৫৫% |
দ্বিতীয় সংসদ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ | ৩,৮৩,৬৩,৮৫৮ | ১,৯৬,৭৬,১২৪ | ৫১.১২% |
তৃতীয় সংসদ | ৭ মে ১৯৮৬ | ৪,৭৮,৭৬,৯৭৯ | ২,৮৫,২৬,৬৫০ | ৫৯.৫৮% |
চতুর্থ সংসদ | ৩ মার্চ ১৯৮৮ | ৪,৯৮,৬৩,৮২৯ | ২,৫৮,৩২,৮৫৮ | ৫৪.৯২% |
পঞ্চম সংসদ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ | ৬,২১,৮১,৭৪৩ | ৩,৪৪,৭৭,৮০৩ | ৫৫.৪৫% |
ষষ্ঠ সংসদ ১৫ | ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ | ৫,৬৭,০২,৪১২ | ১,১৭,৭৬,৪৮১ | ২৬.৫% |
সপ্তম সংসদ | ১২ জুন ১৯৯৬ | ৫,৬৭,১৬,৯৫৩ | ৪,২৮,৮০,৫৭৬ | ৭৪.৯৬% |
অষ্টম সংসদ | ১ অক্টোবর ২০০১ | ৭,৪৯,৪৬,৩৬৪ | ৫,৬১,৮৫,৭০৭ | ৭৫.৫৯% |
নবম সংসদ | ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ | (ছবিসহ ভোটার তালিকা শুরু ) ৮,১০,৮৭,০০৩ | ৭,০৬,৪৮,৪৮৫ | ৮৭.১৩% |
দশম সংসদ | ৫ জানুয়ারি ২০১৪ | (১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা) ৯১,১৯,৬৫,১৬৭ | (ভোট ১৪৭ আসনে) ১,৭৩,৯২,৮৮৭ | ৪০.০৪% |
একাদশ সংসদ | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ | ১০, ৪১,৯০,৪৮০ | ৮,৩৫,৩২,৯১১ | ৮০.২০% |
দ্বাদশ সংসদ | ৭ জানুয়ারি ২০২৪ | ১১,৯৩,৩২,৯৩৪ |
এক নজরে দ্বাদশ
পাঁচ বছরের জন্য সংসদে নতুন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ৭ জানুয়ারির ভোটে রায় দেবেন ১১ কোটি ৯৩ লাখের বেশি ভোটার।
ভোটের প্রচারের মাঝপথে নওগাঁ-২ আসনে একজন প্রার্থীর মৃত্যুতে সেখানে নির্বাচনি কার্যক্রম বাতিল হয়। সেখানে পরে ভোট হবে, আর সোমবার ভোট হবে ২৯৯ আসনে।
২৯৯ আসনে প্রার্থী রয়েছেন ১৯৬৯ জন। এরমধ্যে স্বতন্ত্র ৪৩৭ জন এবং বাকি ১৫৩২ জন দলীয় প্রার্থী।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড ৯৭ জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রায় ১২ কোটি ভোটারের এ নির্বাচনে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে পুরো দেশ। ৪২ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রে ২ লাখ ৬০ হাজার ভোটকক্ষে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন ভোটাররা।
আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সাড়ে সাত লাখের মত সদস্য, ৯ লাখের মত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাহী হাকিম, বিচারিক হাকিমসহ আরো অনেক লোক নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
এছাড়া দেশি ও সাংবাদিক, স্থানীয় ও বিদেশি-পর্যবেক্ষক রয়েছে ২৫-৩০ হাজারের মত।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় ব্যায় সোয়া দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে, এই ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি যাবে নিরাপত্তা খাতে।