গত ২৫ অগাস্ট হাই কোর্ট এক রায়ে ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান ‘বেআইনি’ ঘোষণা করে।
Published : 01 Sep 2022, 10:39 AM
ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে আগাম অনুমতির বিধান ‘বাতিল’ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় আপিল বিভাগে স্থগিত হয়ে গেছে।
হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।
হাই কোর্টের রায় স্থগিত করে দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছে আপিল বিভাগ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, রিট আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সরকারের এক গেজেটে ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হয়।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়, “কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।”
নানা মহলের সমালোচনার মধ্যে আইনের এ ধারা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে হাই কোর্টে আবেদন করে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২১ অক্টোবর রুল জারি করে হাই কোর্ট। সরকারি চাকরি আইন- ২০১৮-এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল করা হবে না এবং এ ধারা সংবিধানের ২৬(১) ও ২৬(২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত ২৫ অগাস্ট রায় দেয় বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ।তাতে ওই আইনের ৪১(১) ধারা বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হয়।
রায়ে বলা হয়, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ওই ধারা ‘সংবিধান পরিপন্থি এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি’।
সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান হাই কোর্টে বাতিল
সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান নিয়ে হাই কোর্টের বিস্ময়
এরপর রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায়। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গত ২৯ অগাস্ট জাতীয় সংসদে বলেন, “এ আইনে কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায়মুক্তি নেই। সরকারি কর্মচারীরা যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশের আইনে এ বিধানটি আছে। সিআরপিসির ১৯৭ ধারাতেও এটি আছে।”
সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর এ সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি সংক্রান্ত ধারা ৪১(১) ও ৩ চ্যালেঞ্জ করে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান আরেকটি রিট আবেদন করেছিলেন। তার প্রাথমিক শুনানির পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর রুল দেয় হাই কোর্ট। এটি হাই কোর্টের আরেক বেঞ্চে বিচারাধীন।