সরকার দলীয় আরেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান কোটা প্রথা বহাল রাখার রায় দেওয়ায় হাই কোর্টকে ধন্যবাদ দেন।
Published : 20 Jun 2024, 10:40 PM
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে সমঝোতা করে মিটমাটের প্রস্তাব দিয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম।
এ আন্দোলন জনগণকে যাতে সরকারের বিরুদ্ধে না নিয়ে যায় সেটা বুঝে ব্যবস্থা নিতে সংসদে আহ্বান জানান তিনি।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির নিয়োগে কোটা প্রথা বহাল রাখার রায় দেওয়ায় হাই কোর্টকে ধন্যবাদ দেন সরকার দলীয় আরেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধে ১ নম্বর সেক্টরের নেতৃত্ব দেওয়া রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা যুদ্ধ করেছিলাম এ প্রজন্মকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য। তারা আন্দোলন করছে, সেই ভাষা আমাদের বুঝতে হবে। সেটা অনুধাবন করে আমাদের সমঝোতার মাধ্যমে মিটমাট করতে হবে, যাতে আন্দোলনটা জনগণকে আমাদের পক্ষ থেকে সরিয়ে নিয়ে না যায়। কারণ এ প্রজন্মের কাছে একদিন আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করব।”
সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র গত ৫ জুন বাতিল করে হাই কোর্ট। এ রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হলেও ৯ জুন তা স্থগিত করেনি আপিল বিভাগ।
আগামী ৪ জুলাই আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে এ আপিল আবেদনের শুনানি হবে।
এতে করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবার বহাল হয়।
এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি বাতিল হয় ১০ শতাংশ করে নারী ও জেলা কোটাও।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। সেটির চূড়ান্ত শুনানি করে ওই দিন রায় দেয় হাই কোর্ট।
আদালতের নতুন আদেশের পর আবার বিক্ষোভে নামে কোটাবিরোধীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তারা মিছিল-সমাবেশ করে কোটা বাতিল বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
এদিন সংসদে সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম এসব আন্দোলনকারীর সঙ্গেই কথা বলার প্রস্তাব দেন।
অপরদিকে সরকার দলীয় আরেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরিয়ে আনায় হাই কোর্টকে দিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি তা পুনরায় চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধও করেন।
পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেন মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান।
এদিকে বাজেটের ওপর আলোচনায় চাঁদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, বিদেশি ঋণ না নিতে পারলে আগামী অর্থবছরে সরকারের উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বাজেটে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এ ঘাটতি বাজেট পূরণে ঋণ নিতে না পারলে উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেব না। অতীতেও আমরা ঘাটতি বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছি।”
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাজাহান খান বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ”তারা কি দেখে নাই তাদের দলে ঘুণ ধরেছে। এ দলকে রক্ষার জন্য আপনারা কী করবেন সেটা ভাবেন। শেখ হাসিনাকে উৎখাতের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেদের কথা ভাবুন। আপনারা কীভাবে রাজনীতিতে টিকে থাকবেন সেই কথাটা ভাবুন।”
তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ভাতা ১০ হাজার ও সদস্যদের ভাতা ৮ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেন। গার্মেন্টস, পরিবহন শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিং প্রথা চালুরও প্রস্তাব তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে দেশের কারাগারগুলোতে ৬৩ হাজার ৮৩০ জন আটক রয়েছে। তবে কারাগারের ধারণ ক্ষমতা এখন ৪২ হাজার ৮৬৬ জন। কিন্তু কাউকে কোনো রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
তিনি বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে মাদকের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে হবে এ দেশের জনগণকে।
”আমরা কিন্তু বসে নেই। আমাদের কারাগারগুলোতে প্রায় ৫০ ভাগ মাদক কারবারি আটক রয়েছে। আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী যেখানেই পাচ্ছে মাদক কারবারিদের সেইখানেই আটক করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।“
সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এখন অনেক কিছু করা দরকার। সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঋণ খেলাপি, দুর্নীতিবাজ, মজুতদার, চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করা। মূল্যস্ফীতি রোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। করদাতার সংখ্যা আরও বাড়ানো। এ কাজগুলো করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এবং সকল ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
আরও পড়ুন
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ‘আপাতত’ বহাল
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল অবৈধ: রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন
মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কিছু মানুষের'উষ্মা'দুঃখজনক:শিক্ষামন্ত্রী