উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বাবার রেখে যাওয়া প্রায় সব সম্পদ বেচে রাজউকের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর হাতে প্রায় নয় কোটি টাকা তুলে দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন এক নারী।
সেই কর্মচারী তাকে পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে জমি কিনে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু জমি আর বুঝিয়ে দেননি, ফেরত দেননি টাকাও।
পরে সেই নারী মামলা করলে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে দেবাশীষ কুমার সাহা নামে সেই কর্মচারীকে।
রামপুরা থানায় করা এক মামলায় মঙ্গলবার রাতে রামপুরা এলাকা থেকে ধরা হয় দেবাশীষকে।
পুলিশ বলছে, তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ আছে। তিনি ধর্ষণের অভিযোগে কারাভোগ করেছেন। একাধিক নারীর সঙ্গে প্রতারণা করে সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগও আছে।
পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা, তারপর সব বেচে তুলে দিলেন টাকা
সেই নারীর করা মামলা বলা হয়েছে, দেবাশীষ রাজউকের পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছ থেকে প্লট কিনে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে আট কোটি ৮০ লাখ নেন। কিন্তু জমি আর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
ডিবি জানতে পেরেছে, জমি কেনা হয়েছে দেবাশীষের নামে।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) ইকবাল হোসাইন জানান, বিভিন্ন সময় রাজউকের যাতায়াতের সুবাদে ওই নারীর সঙ্গে দেবাশীষের পরিচয় হয়। তার যুগ্ম সচিব বাবা মারা যাওয়ার গড়ে ওঠে সুসম্পর্ক।
এক পর্যায়ে সেই নারীকে ঝিলমিল এবং পূর্বাচলে প্লট কেনার পরামর্শ দেন দেবাশীষ। আর কিনে দেওয়ার কথা বলে টাকাও নেন।
ওই নারী তার দুটি ফ্ল্যাট বিক্রির দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা, দেড়শ ভরি স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির এক কোটি ২০ লাখ টাকা, জমি বিক্রির দুই কোটি ১০ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ৫০ লাখ, গাড়ি বিক্রির ১০ লাখ টাকা দেবাশীষের হাতে তুলে দেন।
কিন্তু দেব-দিচ্ছি বলেও তাকে প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। পরে ওই নারী টাকা ফেরত চাইলে দেবাশীষ তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলেও অভিযোগ করা হয় মামলায়।
আরও নানা অভিযোগ
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, “এর আগে ধর্ষণ মামলাতেও জেল খেটেছেন দেবাশষি। জেল খাটলেও তখন চাকরি যায়নি তার।”
জেল থেকে বের হয়েই ওই মামলার বাদীকে হুমকি হুমকি দেওয়া শুরু করেন তিনি। ওই নারী (বাদী) দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, এই অবস্থাতেই তাকে মারধর করেন দেবাশীষ। পরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে গর্ভপাত করাতে বাধ্য হন ওই নারী। সেসব কাগজপত্র ডিবিকে দিয়েছেন সেই ভুক্তভোগী।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনারের ভাষ্য, দেবাশীষ পরিকল্পিতভাবে নারীদের ধর্ষণ করে তার ভিডিও ধারণ করতেন। পরে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন। বহুজনের সম্পত্তি আত্মসাত করেছেন এভাবে।
এসব কারণে আগেও তার নামে মামলা হয়েছে, জেলেও গেছেন। সর্বশেষ নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে গত ১১ এপ্রিল ২০ হাজার ডলারসহ গ্রেপ্তার হন দেবাশীষ। ২৩ দিন জেল খেটে ৬ মে দেশে ফেরেন তিনি।