“আমরা ক্ষান্ত হব না। এই বিচার যতদিন না হবে ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে,” বলেন তিনি।
Published : 12 Jun 2024, 10:53 PM
রাঙামাটির কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলা ২৮ বছর পর খারিজ হলেও বিচারের দাবিতে আইনি লড়াই ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ পাহাড়ি সংগঠনগুলোর নেতারা।
জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, “২৮ বছর পর মামলা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে, এতে আমরা ক্ষান্ত হব না। উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে। এই বিচার যতদিন না হবে ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।”
বুধবার ঢাকার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে তিনি এ কথা বলেন।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ির লাইল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা। পরদিন তার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বাঘাইছড়ি থানায় মামলা করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, কজইছড়ি সেনা ক্যাম্পের তৎকালীন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফেরদৌসের নেতৃত্বে একদল ভিডিপি ও সেনা সদস্য অপহরণ করে। দীর্ঘ ২৮ বছর মামলাটি ঝুলে থাকার পর গত ২৩ এপ্রিল খারিজ করে দেয় আদালত।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, “২৮ বছর তদন্তের পর কল্পনা চাকমার বিচার খারিজ করা হল। তাহলে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন কল্পনা চাকমাদের বাড়িতে অস্ত্রসহ কারা গেল? সেখানে কী ভুত-প্রেত গিয়েছিল? নাকি সত্যি সত্যি সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন গিয়েছিল?
“ওর ভাই কালিন্দী, লালন এবং ওর মা হারিকেনের আলোতে দেখেছে, তাদের চেহারা দেখেছে। অথচ রাষ্ট্র বলছে কিছুই পেলাম না।”
তিনি বলেন, “কল্পনা চাকমার হদিস পাওয়া যায় নাই। তাহলে সে কোথায়? এর জবাব সরকারকে দিতে হবে। কেননা সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। কল্পনা চাকমা এখন কোথায় এই রাষ্ট্রকে তার জবাব দিতে হবে।
“সরকার কল্পনা চাকমাকে ভয় করেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। কল্পনা চাকমাকে কেন ভয় পেয়েছে?”
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে ঊষাতন বলেন, “পাহাড়ের মানুষ ভালো নেই। আজকে পাহাড়ে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। শুধু নারীরাই নয়, সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে বসবাস করছে।”
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “মামলাটি নিয়ে নানা ধরনের টালবাহানা হয়েছে। কারণ রাষ্ট্র চায় না কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলার বিচার হোক।
“রাষ্ট্র কল্পনার প্রতি অন্যায় করেছে। তেমনি আদিবাসী নেতারাও কল্পনার প্রতি অবিচার করেছেন। কারণ কল্পনা অপহরণের এক বছর পর যে শান্তি চুক্তি হয়, সেখানে সেটা নিয়ে একটি ক্লজও উত্থাপন করা হয়নি।”
হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক শাহবাগে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লুনা নূর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক গজেন্দ্র নাথ মাহাতো, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি জগদীশ চাকমা কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।