“ই-জিপির মাধ্যমে ডিজিটাইজেশন করা হলেও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা যায়নি,” বলেন ইফতেখারুজ্জামান।
Published : 25 Feb 2025, 06:46 PM
ই-জিপি বা অনলাইন দরপত্রের মাধ্যমে সরকারি কেনাকাটার ব্যবস্থা চালুর এক যুগের তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি বলছে, সবচেয়ে বেশি খরুচে ১০ মন্ত্রণালয়ে মাত্র ৫ শতাংশ ঠিকাদার বাগিয়েছেন ৬১ শতাংশ প্রকল্পের কাজ। আর সব মন্ত্রণালয়ের নিরিখে সবচেয়ে কম কাজ পাওয়া ১০ শতাংশ ঠিকাদারের বাজার হিস্যা ১ শতাংশেরও কম।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ, আমলাতন্ত্র, ঠিকাদার এবং রাজনৈতিক শক্তির ত্রিপক্ষীয় আঁতাতে সরকারি কেনাকাটার ‘বাজার দখল’ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।
‘বাংলাদেশের ই-ক্রয়কার্য: একচ্ছত্র বাজার, যোগসাজশ ও রাজনৈতিক প্রভাব (২০১২-২০১৪)’ শীর্ষক এক গবেষণা চালিয়ে তা দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছে টিআইবি। মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডিতে নিজেদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ২০১১ সালে ই-জিপি চালুর পর থেকে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প কাজ দেওয়া হয়েছে। এতে সর্বোচ্চ অনুমোদিত চুক্তির মূল্য ছিলো ৮৮১ কোটি টাকা। এর চেয়ে বড় চুক্তিমূল্যের কাজকে এখনও এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনা হয়নি।
“শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার মোট চুক্তির মূল্যের ৬১.৩১ শতাংশ অর্জন করেছে, অন্যদিকে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ ঠিকাদারের বাজার অংশীদারিত্ব সব মন্ত্রণালয়ের জন্য ১ শতাংশ এরও কম।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি কেনাকাটায় প্রতিযোগিতামূলক বাজার গড়ে উঠার কথা থাকলেও তা গড়ে ওঠেনি। উল্টো মন্ত্রণালয়গুলোতে ঠিকাদারদের অসম প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে।
বাজার হিস্যা তুলে ধরতে গিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ে, শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার এক দশকে তাদের বাজার অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করেছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার মোট চুক্তি মূল্যের ৭৪.৯৬ শতাংশ কাজ করেছে।
“গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে শীর্ষ ঠিকাদারদের দখল ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অন্যতম সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এছাড়া, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।”
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ: মাত্র ১১ শতাংশ (৩৮৪ জন) ঠিকাদার ৯৩.৫৫ শতাংশ মোট চুক্তিমূল্যের কাজ করেছে। ৩৫ জন ঠিকাদারই ৭২.৯ শতাংশ বাজার দখল করেছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়: ৯ শতাংশ (৩৩৬ জন) ঠিকাদার মোট চুক্তি মূল্যের ৯১.৫ শতাংশ কাজ করেছে। মাত্র ৩৮ জন ঠিকাদার ৩০.৯ শতাংশ বাজার দখল করেছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়: ৭.৪৫ শতাংশ (৬০৭ জন) ঠিকাদার মোট চুক্তি মূল্যের ৭১ শতাংশ কাজ করেছে। ৮১ জন ঠিকাদার ৩২.৩২শতাংশ বাজার দখল করেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ: ৯.৭৪ শতাংশ (২৮৬৫ জন) ঠিকাদার মোট চুক্তি মূল্যের ৬২.৮৮ শতাংশ কাজ করেছে। ২৯৪ জন ঠিকাদার ২৭.৭ শতাংশ বাজার দখল করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সরকারি ক্রয়খাত সারাবিশ্বেই সবচেয়ে দুর্নীতিপ্রবণ, তবে বাংলাদেশে তা নিয়ন্ত্রণহীন দখলদারিত্বের হাতে জিম্মি দশায় নিমজ্জিত হয়েছে। ২০১৮ সালে আমাদের একটি গবেষণায় আমরা দেখেছি যে প্রাতিষ্ঠানিক ক্রয়খাতের দুর্নীতি-অনিয়মের জন্য মোট ক্রয় বাজেটের ২৭ শতাংশ পর্যন্ত অপচয় হয়।
“প্রত্যাশা ছিলো, ই-জিপি ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা হবে, সরকারি ক্রয়খাতে দুর্নীতি কমবে এবং ব্যয়িত অর্থের সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া যাবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল ই-জিপির মাধ্যমে ডিজিটাইজেশন করা হলেও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা যায়নি।”